কাবুলে এখন কবর খোঁড়া দ্বিগুণ!
কাবুলে এখন কবর খোঁড়া দ্বিগুণ! - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। চারটি প্রদেশের সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়েছৈ, তাদের ইউনিটগুলোতে সংক্রমণের হার ৬০ থেকে ৯০ ভাগ। ফলে অভিযান পরিচালনা বা ফাঁড়িগুলোতে দায়িত্ব পালনের লোকের অভাব দেখা দিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে মারাও গেছে। তবে পরীক্ষার সক্ষমতা না থাকায় অনেককে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে। এতে করেও তালেবানের সহিংসতা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যেও সৈন্য মোতায়েন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আফগানিস্তানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার খুবই কম। মোট জনসংখ্যার ০.২ ভাগেরও কম লোককে পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৭.৬ মিলিয়ন লোকের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৯০০ লোকের। বৃহস্পতিবার জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি লোক করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে, মারা গেছে ৬০০-এর বেশি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, আসল সংখ্যাটি অনেক বেশি। আগামী মাসগুলোতে দেশের ২৬ মিলিয়ন লোক এতে আক্রান্ত হতে পারেন, মৃত্যু বেড়ে হতে পারে এক লাখ পর্যন্ত।
আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ঠিক কতজন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, সে তথ্য আফগান সরকার প্রকাশ করতে রাজি নয়। আফগান প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র স্বীকার করেছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। তবে তা বিস্তৃত হতে পারেনি, কারণ যাদেরই লক্ষণ দেখা যায়, তাদের সাথে সাথে আলাদা করা হয়। তাছাড়া মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নাঙ্গাহার, গজনি, লগার ও কুন্দজ প্রদেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা (এসব স্থানে তালেবানের প্রবল চাপ রয়েছে) পরিচয় গোপন করে ওয়াশিংটন পোস্টকে তাদের বাহিনীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা বলেছেন।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যহারের প্রেক্ষাপটে এই খবর উদ্বেগই সৃষ্টি করেছে। তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র তার হাজার হাজার সৈন্যকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দুই আফগান কর্মকর্তা বলেছেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ব্যাপক থাকায় মার্কিন সৈন্যরা যৌথ স্থল অভিযান স্থগিত রেখেছে এবং আফগান ও মার্কিন ঘাঁটিগুলোর মধ্যে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন বাহিনী সশরীরে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও স্থগিত করেছে।
রেসুলেট সাপোর্ট মুখপাত্র সনি লেগাট বলেন, যৌথ সন্ত্রাসপ্রতিরোধ অভিযান স্থগিত হয়নি। তিনি মে মাসে কাবুলে সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে অভিযানের কথাও উল্লেখ করেন।
আফগানিস্তানের করোনার অন্যতম কেন্দ্র হলো হেরাত। সেখানকার পুলিশপ্রধান ওবায়দুল্লাহ নুরানি বলেন, তার কমান্ডে থাকা পুলিশের মধ্যে কেবলমাত্র ৩৬টি পজেটিভ ঘটনা দেখা গেছে। তিনি বলেন, ভাইরাসটি প্রতিরোধ করতে তিনি মার্কিন বাহিনী ও আফগান প্রশাসন থেকে ব্যাপক সহায়তা পাচ্ছেন।
তবে মাঠ পর্যায়ের কমান্ডাররা বলছেন, পরীক্ষার কার্যক্রম একেবারেই সীমিত। অনেক ঘাঁটিতে কমান্ডাররা একটি পরীক্ষার কিটও পাননি। তাদের হাতে অতিরিক্ত কোনো চিকিৎসা সরবরাহও নেই বলে তারা জানিয়েছেন।
তালেবান বাহিনীও সম্ভবত করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা করোনাভাইরাসের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের অবস্থান সুসংহত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘ আশঙ্কা করছে, বিশ্বে আফগানিস্তানেই হতে পারে সর্বোচ্চ সংক্রমণের শিকার দেশ। সারা দেশ লকডাউন আরোপ করা হলেও তা তেমনভাবে কার্যকর করা হচ্ছে না। কাবুল ও হেরাত হলো সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা। এখনো সেখানকার রাস্তায় বিপুল ভিড় দেখা যায়, লোকজন কেনাকাটা করছে বাধাহীনভাবে।
পশ্চিম কাবুলের এক কবরস্থানের ব্যবস্থাপক বলেন, এখন কবর খনন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট