ব্রিকস গেমে চীন-ভারত
ব্রিকস গেমে চীন-ভারত - ছবি : সংগৃহীত
গত দশক ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর বার্ষিক ব্রিকস সম্মেলনে হাতে হাত ধরেছেন।
কিন্তু কয়েক দশকের মধ্যে চীন ও ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে অবনতিশীল অবস্থায় যাওয়ারর প্রেক্ষাপটে চলতি বছর ঐক্যের কোনো প্রকাশ্য প্রদর্শনী হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
২০১৭ সালের দোকলাম অচলাবস্থঅ ও বর্তমান সঙ্ঘাতের মধ্যে মিল রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ জুন চীনা সৈন্যরা নির্মাণ সরঞ্জাম নিয়ে দোকলামে গিয়েছিল চীন, ভারত ও ভুটান সীমান্তে অবস্থিত দোকলাম মালভূমিতে একটি রাস্তা তৈরী করতে। দুই দিন পর ভারতীয় সৈন্যরা অস্ত্র ও বুলডোজার নিয়ে গিয়ে সেখানে নির্মাণকাজ বন্ধ করতে বলে।
চলতি বছরের ১৬ জুন বিরোধপূর্ণ লাদাখ অঞ্চলের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে সহিংস সঙ্ঘাত হয়। এতে ভারতের অন্তত ২০ সৈন্য নিহত হয় বলে দিল্লি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নয়া দিল্লির জওহেরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কেল সহযোগী অধ্যাপক ড. রাজন কুমার বলেন, দোকলাম অচলাবস্থার পর ভারতে অনেকে বলেছিলেন যে মোদি ওই শীর্ষ সম্মেলনে যাবেন না।
এবারে প্রধান পার্থক্য হলো সঙ্ঘাতের তীব্রতা। ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম যুদ্ধে হতাহত হলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত বিরোধের স্থায়ী সমাধান না হরে দুই দেশ আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে না।
ভারতের মনিপাল একাডেমি অব হায়ার এডুকেশনের ভূরাজনীতিবিষয়ক অধ্যাপক মাধব নালাপত বলেন, এখন চীনের সাথে কোনো খাতেই ব্যবসা করার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই।
গত দশকে ভারত ও চীনের মধ্যে সহযোহিতার প্রধান প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছিল। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছাড়াই ২০০৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকা তাতে যোগ দেয়। ২০১০ সালের শীর্ষ সম্মেলনের পর প্রকাশিত প্রথম যৌথ বিবৃতিতে বৈশ্বিক পরিচালনায় পরিবর্তন ও বহু মেরুর কূটনীতির প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা হয়েছিল।
আগামী ১৩ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে চলতি বছরের ব্রিকস সম্মেলন হবে। হওয়ার কথা ছিল জুলাই মাসে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়।
বার্লিনে মারকেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের বৈশ্বিক চীন গবেষণার প্রধান ম্যাট ফারচেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপের নির্দেশিত বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ম এড়িয়ে উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যে সংহতির বৃহত্তর ধারণা কাজ করেছিল ব্রিকসের মধ্যে।
ব্রিকস অ্যাজেন্ডায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ছিল গৌণ বিষয়। প্রতি বছরের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের পর যৌথ বিবৃতিতে সবসময়ই বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বা মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার অংশবিশেষে গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে অভিন্ন অবস্থানের কথা ঘোষণা করা হতো। কিন্তু এর বেশি কিছু করা হতো না।
সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো নিউ হাইবিন বলেন, ব্রিকস প্রতিষ্ঠার সময় অনেকেই বলেছিলেন যে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ একে সফল হতে দেবে না। কিন্তু গ্রুপটি বিবদমান দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো এড়িযে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
অবশ্য কেউ কেউ বলছন, ব্রিকস জোট ইতোমধ্যেই বর্তমান সীমান্ত বিরোধে ভূমিকা পালন করছে।
গত ২৩ জুন রাশিয়া, ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত আরআইসি ফোরামের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে এই তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা নভেম্বরের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকে বসবেন।
ডেনমার্কের আরবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়েল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক লি জিয়াং বলেন, এই সঙ্ঘাতে রাশিয়া মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালন করছে। কারণ ব্রিকস সদস্য হিসেবে চীন ও ভারতের সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
লি বলেন, ব্রিকসের প্রবল সমর্থক চীন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্রমে বিশ্বের অবয়ব নির্মাণ করে অন্যন্য দেশকে তাদের নিয়ম পালনে বাধ্য করে।
তিনি বলেন, ব্রিকসের ওপর ভর করে চীন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা পালন করতে চায়। বিকস হলো চীনের একটি সন্তান। এটি ভেঙে গেলে তা হবে চীনের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি একটি বড় আঘাত।
এসসিএমপি