করোনাভাইরাস : অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কেন ব্রাজিলে পরীক্ষা?
করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন - ছবি : সংগৃহীত
ব্রাজিলের গবেষকরা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োগ করা শুরু করেছেন। বুধবার ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলো একথা জানিয়েছে। খবর এএফপি’র।
ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অ্যাস্টাজেনিকার সাথে যৌথভাবে উৎপাদন করা এ ভ্যাকসিন অধিক প্রতিশ্রুতিশীল ভ্যাকসিনগুলোর অন্যতম। আর এসব ভ্যাকসিন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বাজারে আনার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা।
সেডস্ক১ এনকভ-১৯ নামে পরিচিত এ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাইয়ে ব্রিটেনে স্বেচ্ছাসেবকদের উপর পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে এর প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে। এ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে।
ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের গবেষকরা চিকিৎসক, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার অধিক ঝুঁকির মুখে থাকা স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে মঙ্গলবার প্রথম ডোজ দেয়া শুরু করেছেন। এ উইনিভার্সিটি ব্রাজিলে এ পরীক্ষামূলক ট্রায়াল কার্যক্রম সমন্বয় করছে।
ইউনিভার্সিটির বিবৃতিতে বলা হয়, এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রটোকল অনুযায়ী গবেষকরা শনিবার স্বেচ্ছাসেবক বাছাই প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেছেন। এ ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই সার্স- কোভ-২ ভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ হতে হবে। আর এ ভাইরাস কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণ।
রক্ত পরীক্ষায় নেগেটিভ থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের মঙ্গলবার এ ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, স্বেচ্ছাসেবকদের অবশ্যই ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সের এবং সাও পাওলো-ইউএনআইএফইএসপি হাসপাতালে মহামারি মোকাবেলায় সম্মুখ সারিতে থেকে কাজ করা হতে হবে।
ব্রাজিলের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডুয়ার্দো পাজুয়েলো মঙ্গলবার জানান, ব্রাজিল অভ্যন্তরীণভাবে এ ভ্যাকসিন উৎপাদনের সুবিধা পেতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ব্রাজিলে মোট ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে এ ভ্যাকসিন দেয়া হবে। অক্সফোর্ড জানায়, ব্রিটেনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ৪ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আরো ১০ হাজার জনকে তালিকাভূক্ত করার কথা রয়েছে।
এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালানোর জন্য ব্রাজিলকে বেছে নেয়ার কারণ বর্তমানে যে সব দেশে দ্রুত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে সেসব দেশের মধ্যে ব্রাজিল অন্যতম। এখন যুক্তরাষ্ট্রের পর ব্রাজিল হচ্ছে করোনাভাইরাসে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ৫২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আমেরিকার দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ এখনও শিখরে পৌঁছেনি
আমেরিকার দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ এখনও শিখরে পৌঁছেনি । বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে এ কথা বলেছে।
একই সঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ এক কোটিতে দাঁড়াতে পারে।
ডব্লিউএইচও প্রধান টেডরস আধানম গেব্রিয়াসিস র্ভাচুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মহামারির প্রাদুর্ভাবের প্রথম মাসে ১০ হাজারেরও কম রোগীর খবর সংস্থাকে জানানো হয়। শেষ মাসে তা ৪০ লাখে পৌঁছায়।
তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি আগামী এক সপ্তাহে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এক কোটিতে পৌঁছাবে।
টেডরস আরো বলেন, বিনয়ের সঙ্গে আমরা এটা মনে করিয়ে দিচ্ছি যে ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত থাকলেও ভাইরাস দমন ও জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা আমাদের জরুরি দায়িত্ব।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা ছড়ানোর পর থেকে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত অন্তত চার লাখ ৭৭ হাজার ৫শ লোক মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৯৩ লাখ লোক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিচালক মাইকেল রায়ান সতর্ক করে বলেছেন, আমেরিকার দেশগুলোতে ভাইরাসটি এখনও ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে সংক্রমণ তীব্র।এজন্যে নতুন করে দেশব্যাপী লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, আমেরিকার অনেকগুলো দেশেই সংক্রমণ এখনও শিখরে পৌঁছেনি। এর ফলে সেসব দেশে আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু অব্যাবহতভাবে চলতে থাকবে।
এদিকে সীমিত আকারে হজ পালনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
টেডরস বলেন, স্বাস্থ্যই আগে সকল দেশের জন্যে এই কঠোর সিদ্ধান্তের জন্যে এটি আরো একটি উদাহরণ।
উল্লেখ্য, সৌদি কর্তৃপক্ষ করোনার কারণে এবার এক হাজার লোককে হজ করার অনুমতি দিচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ।
সূত্র : এএফপি