এবারের ইলিশ হবে বড়, স্বাদে হবে সেরা
ইলিশ - ছবি : সংগৃহীত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী মৌসুমে অনন্য স্বাদের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু স্বাদে-গন্ধে নয়; আকারে বড় এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ মিলবে উপকূলের নদীগুলোতে।
সাগরের ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে-ঝাঁকে নদীতে চলে আসে ডিম ছাড়তে। সরকারি নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে। আবার ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাসের বেশি সময় ধরে জাটকা ধরা, বিক্রি, পরিবহণ নিষিদ্ধ থাকে। এরমধ্যে গতবছর থেকে সাগরে ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন হিসেব অনুযায়ী আগামী ২৪ জুলাই থেকে ১১ অক্টোবর তিন মাসের কম সময় এবং ৩ নভেম্বর থেকে ১৯ মে পর্যন্ত জেলেরা ইলিশ ধরতে পারবে।
এতো গেলো ইলিশ সম্পদ রক্ষায় ও বাড়াতে সরকারি বিধি নিষেধ। তার সাথে ছিল করোনাভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনে কর্মবিরতি এবং ফলশ্রুতিতে দূষণমুক্ত হয়েছে নদীর পানি। প্রতিকূল অবস্থায় বরাবরের মতো নদীতে জেলেদের জালও পড়েনি খুব একটা। সেই সাথে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে নদীগুলো থেকেছে কানায়-কানায় পূর্ণ। অবশ্য জেলেরাও আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী মৌসুমে সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে; ব্যাপক ইলিশ আহরণে বলে ইলিশের জেলা বরগুনার জেলে, ব্যবসায়ী, সাধারণ ক্রেতা, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।
বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশের উৎপাদিত মোট ইলিশের ১৩% বরগুনা জেলায় আহরণ করা হয়। গত অর্থ বছরে (২০১৮-২০১৯) এ জেলায় প্রায় এক লাখ ২০ টন ইলিশের আহরণ ছিল। বরগুনার ইলিশকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তুলতে ও ইলিশের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বরগুনায় দেশি-বিদেশি পর্যটককে ইকোট্যুরিজমে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে গত ২ অক্টোবর, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে বরগুনা জেলা প্রশাসন ও টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে ১ম বারের মত দেশের বৃহত্তম ইলিশ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
করোনা’র কারণে এ বছরের মার্চের শেষ থেকে নদী ও সাগরে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। জেলেরা স্বীকার করেছেন, লকডাউন ও করোনা-আতঙ্কে জাটকার অবৈধ আহরণ বন্ধ হয়ে যায়। আম্ফানের প্রভাবও জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার পথে বাঁধা ছিল। সাগর, নদ-নদীতে দূষণ ছিলনা। আগে-ভাগে শুরু হয়ে বৃষ্টি হয়েছে পর্যাপ্ত। নদীতে পানির পরিমাণও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার অনন্য স্বাদের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু স্বাদে-গন্ধে নয়; আকারে বড় এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ মিলবে উপকূলের নদীগুলোতে। বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, মৌসুমি বায়ু সময়মতো সক্রিয় হওয়ায় এবার সার্বিক আবহাওয়া ইলিশের অনুকূলে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলীর মতে, ইলিশের যাতায়াতের জন্য তার চলার পথ অন্তত ৪০ ফুট গভীর হতে হয়। এ বছর নদীর পানি পরিষ্কার ও ইলিশের চলার পথ বাঁধাহীন। ইলিশ নদীবক্ষ ধরে অনেকটা দৌড়াবে। দূষণমুক্ত নদীতে উৎপন্ন প্লাংক্টন খেতে পারবে।
বরগুনার মৎস্য বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা (ইলিশ) জগদীশ বসু জানিয়েছেন, সমুদ্রের নোনা পানি থেকে ইলিশ যত নদীর উজানে যেতে থাকে, ততই শরীর থেকে ঝরতে থাকে লবণ জাতীয় পদার্থ। উজানে যাতায়াতের সময় ইলিশ কিছুই খায় না, শক্তির জোগান আসে শরীরে জমে থাকা চর্বি থেকে। ইলিশ যত বেশি সময় মিষ্টি পানিতে থাকতে পারবে এবং উজানে আসতে পারবে, দেহ থেকে লবণসহ বিভিন্ন খনিজ জাতীয় পদার্থ তত কমতে থাকবে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকবে স্বাদও। যে ইলিশে যত বেশি চর্বি সেটি তত সুস্বাদু হবে। এই তেল বা চর্বি
অন্য মাছের ক্ষেত্রে পেটের অঙ্কীয়দেশে জমা হয়। তবে ইলিশের ক্ষেত্রে তা সারা দেহে অর্থাৎ পেশি-কলা-কোষের পরতে-পরতে ছড়িয়ে থাকে। সে কারণেই তা স্বাদে অনন্য। আসছে মৌসুম বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী বন্দরগুলোসহ বাজারগুলোতে বড় ও সুস্বাদু ইলিশের ছড়াছড়ি থাকবে বলে আশা করা যায়।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, এ বছর নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। ইলিশ চলাচলের পথও সুগম ও সাবলীল। নদীগুলোতে ইলিশ আগমনের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। তাই আগামী ইলিশ মৌসুমে প্রচুর ইলিশ প্রাপ্তিসহ ভালো বাণিজ্যেরও আশা করছি।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, অনুকুল পরিবেশ-প্রতিবেশ, প্রাকৃতিক বৈরীতা ও সুবিধা, সরকারি বিধি-নিষেধ, করোনাকাল এবং সর্বোপরি জেলেদের সচেতনতা মিলিয়েই প্রচুর ইলিশ আহরণের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। বেকার সময়ে সরকার যেভাবে জেলেদের সহায়তা দিয়ে আসছে সে কারণে জেলেদের মধ্যে অবৈধ মাছ শিকারের প্রবনতা একেবারেই কমে এসেছে। আমরা ইলিশের বাম্পার উৎপাদনের খবর জানার আশায় রয়েছি।
সূত্র : বাসস