করোনার নতুন উপসর্গ

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jun 23, 2020 08:49 am
করোনার নতুন উপসর্গ

করোনার নতুন উপসর্গ - প্রতীকী ছবি

 

জ্বরের কোনো লক্ষণই নেই, নেই কাশি, গলা ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় পরীক্ষা করে দেখা গেল কোভিড-১৯ পজিটিভ। কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিনই বাড়ছে। এই অসুখের অন্যতম উপসর্গ জ্বর বলেই এত দিন জানা ছিল। কিন্তু জ্বর, কাশি আর শ্বাসকষ্ট ছাড়াও নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে আসছেন রোগীরা। পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা-ও হতে পারে। টেস্ট করতে গিয়ে করোনা ধরা পড়ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি কোভিড-১৯-এর নানা উপসর্গ নিয়ে এক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য জানানো হয়েছে।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর জানালেন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট ও জ্বর শুরু হয় সংক্রমণের ৫–৬ দিন পর থেকে। জ্বর নিয়ে যখন রোগীরা আসেন তার সপ্তাহখানেক আগেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। বলাই বাহুল্য, তার সংস্পর্শে থাকা অন্য মানুষদের মধ্যে কিন্তু ইতিমধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে, বললেন অরিন্দমবাবু। কলকাতার বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্তদের অনেকেই জ্বর বা কাশি ছাড়া অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এমনকি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের মুখ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সিইও) মারাত্মক ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। লালারস পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ ধরা পড়ে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রাথমিক উপসর্গ জেনে নিয়ে রোগীকে আইসোলেশনে রেখে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করলে সমস্যা অনেকটাই কম হতে পারে বলে জানালেন অরিন্দম কর।

আবার ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির সভাপতি সন্দীপন ধর জানালেন, কোভিড-১৯-এর উপসর্গ হিসেবে পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা হতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট মশার কামড়ের মতো র‍্যাশ দেখা যেতে পারে। ইতালি ও চীনের হুবেই-এর হাসপাতালে ভর্তি কোভিড আক্রান্তদের ২০ শতাংশের শরীরে এই র‍্যাশ দেখা গেছে। চিকিৎসকরা প্রথমে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে মনে করলেও পরবর্তী কালে জানা যায়, নভেল করোনার কারণেই ত্বকে নানা ধরনের র‍্যাশ বেরোয়। তবে কোভিডের কারণে ফুট শোর নামে পায়ের বুড়ো আঙুলের নীচে এক বিশেষ ধরনের ঘা হয়। একমাত্র করোনা হলেই এই নির্দিষ্ট সমস্যা দেখা যায়। এবং পুরো ভারতেই কোভিড রোগীদের মধ‍্যে ত্বকের নানা সমস‍্যা দেখা যাচ্ছে।

একনজরে জেনে নেয়া যাক করোনা আক্রান্তদের কী কী প্রাথমিক উপসর্গ দেখা যায়

• জিভের স্বাদ চলে গিয়ে খাবারে অরুচি হয়।

• গন্ধের বোধ নষ্ট হয়ে যায়।

• পেটে ব্যথা ও ডায়ারিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

• পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা হতে পারে।

• ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট মশার কামড়ের মতো র‍্যাশ দেখা যেতে পারে।

• গা ম্যাজম্যাজ করে, ব্যথা হতে পারে।

• পেটে ব্যথা ও বমি হতে পারে।

• জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি থাকতে পারে।

• গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে তিন শতাংশ রোগীর গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হয়। এদের অক্সিজেন ও প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দরকার হয়, বললেন অরিন্দমবাবু।

এমনও হতে পারে রোগী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত অথচ কোনও রকম উপসর্গ নেই। আচমকা ৬–৭ দিন পর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হল, বললেন অরিন্দমবাবু। এই অবস্থাটাই সব থেকে সঙ্কটজনক। এই অবস্থায় রোগীকে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি সব রকম সাপোর্ট দিতে হয়। কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। এই অবস্থাটা রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে পেটের গোলমাল, ডায়ারিয়া, পেটে ব্যথা ও বমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানালেন যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে ডায়ারিয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। কেননা শ্বাসনালীতে যে রিসেপ্টরগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রমণ করে, সেই রকমই গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক, অর্থাৎ অন্ত্রেও সেই রিসেপ্টর আছে। নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীতে না গিয়ে পেটে পৌঁছে গিয়ে অন্ত্রে সংক্রমণ হলে পেটের গোলমাল, ডায়ারিয়া, পেটে ব্যথা ও বমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বললেন সুবর্ণবাবু। একই সঙ্গে তিনি জানালেন, শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সংক্রমণের তুলনায় ডায়ারিয়া হলে রোগের সঙ্গে মোকাবিলা কিছুটা সুবিধাজনক। স্যালাইন ও জিঙ্ক দিয়ে ডায়ারিয়ার মোকাবিলা করা হয়, বললেন সুবর্ণবাবু।

দুই চিকিৎসকই একটা ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতে চান যে লকডাউনের পরে আনলক পর্যায় এলেও কোভিড-১৯-এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। তাই নিজেদেরই সাবধান হতে হবে। যথাযথ মাস্ক ব্যবহার করে ও হ্যান্ড হাইজিন মেনে এই সংক্রমণ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায়। তবে মাস্কের ব্যাপারে বিশেষ সচেতন হতে পরামর্শ দিলেন অরিন্দমবাবু। ফ্যাশনেবল মাস্ক পরে রোগ প্রতিরোধ করা মুশকিল। এন ৯৫ মাস্কের উপর সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করলে সংক্রমণ আটকানো যায়। সুবর্ণবাবু ভিড় জায়গা, বাজার ও শপিং মল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন। বাসে বা ট্রেনে যাওয়া-আসা করতে হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। জ্বর বা কাশি ছাড়া কোভিড-১৯-এর অন্য যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us