করোনা : কোন উপসর্গে কোন ওষুধ খাবেন

শাহেদ মতিউর রহমান | Jun 22, 2020 09:46 am
ডা: মেহেদী মাসুদ

ডা: মেহেদী মাসুদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

 

সাধারণ জ্বর, ঠাণ্ডা কিংবা সর্দি কাশির মতো করোনার সাধারণ উপসর্গ নিয়ে কারো হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। অনেক রোগী মৃদু উপসর্গ নিয়ে অনেকটা ভয়েই তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটতে থাকেন। এটা কোনোক্রমেই উচিত নয়। বরং এসব মাইল্ড সিমটম বা মৃদু উপসর্গের রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। তবে সিভিয়ার বা ক্রিটিক্যাল পর্যায়ের রোগীদের সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ঢাকার বাইরের লোকজনের মধ্যে করোনা নিয়ে ভয় এবং সেখানকার হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবার নানা দিক নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রভাষক ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা ডা: মেহেদী মাসুদ।

নয়া দিগন্ত : আপনি তো ঢাকার বাইরে একটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত আছেন, সেখানকার অভিজ্ঞতার বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
ডা: মেহেদী মাসুদ : ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সব জায়গাতেই করোনার চিকিৎসার ধরন ও পদ্ধতি একই। করোনা যেহেতু একটি নতুন রোগ। তাই শুরু থেকেই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত গাইড লাইনের আলোকেই বিশ^ব্যাপী এই চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, ঢাকার বাইরে রোগীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হয়তো প্রতিনিয়ত আমাদের হচ্ছে। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করার মতো আর সেটি হলো, করোনা নিয়ে এখন ঢাকা আর ঢাকার বাইরের লোকজনের মধ্যে সচেতনতার কোনো অভাব নেই। নতুন রোগ হলেও সবার মধ্যেই করোনার বিষয়ে একটি সচেতনতা তৈরি হয়েছে। বরং গ্রামের লোকজনের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা আগের চেয়ে আরো বেশি সচেতন ও সতর্ক।

নয়া দিগন্ত : সাধারণত কোন ধরনের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে বেশি আসছে?
ডা: মেহেদী মাসুদ : করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সবার মধ্যেই একটি আতঙ্ক কাজ করছে। তাই সাধারণ জ¦র, ঠাণ্ডা, গলাব্যথা কিংবা সর্দি কাশি হলেই সবার মধ্যেই একটি ভীতি কাজ করে। সাধারণত যেসব উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছে এর মধ্যে প্রধান উপসর্গ হলো জ¦র, সর্দি, গলাব্যথা ও কাশি। অনেকে শুধু কাশি আর শরীর ব্যথা নিয়েও আসছে। কিছু বয়স্ক রোগী আসছেন যারা আগে থেকেই শ^াসকষ্ট রোগে ভুগছেন। এখন করোনা আতঙ্কে তারাও আসছেন হাসপাতালে।

নয়া দিগন্ত : প্রতিদিন অনেক রোগীই তো হাসপাতালে আসছে। এ ক্ষেত্রে অ্যাডমিশন বা ভর্তির ক্ষেত্রে কোন রোগীদের আপনারা বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?
ডা: মেহেদী মাসুদ : কিছু রোগী আছে যারা করোনার উপসর্গ নিয়ে আগে থেকেই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন কিন্তু এখন শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য আরো কিছু জটিল উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের আমরা ভর্তির সুপারিশ করি। আবার কিছু বয়স্ক রোগী আছেন যাদের ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং উচ্চ রক্তচাপ কিংবা কিডনির কোনো জটিল সমস্যা আগে থেকেই আছে এবং করোনা রিপোর্টও পজিটিভ তাদেরও হাসপাতালে ভর্তি রেখেই চিকিৎিসাসেবা দেয়া হয়।

নয়া দিগন্ত : করোনা রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আছে কি?
ডা: মেহেদী মাসুদ : আগেই বলেছি করোনা একটি নতুন রোগ। এর গতি প্রকৃতিও প্রতিনিয়তই চেঞ্জ হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা তথা কোভিড-১৯ এর বিশ^ব্যাপী চিকিৎসা পদ্ধতির নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত ন্যাশনাল গাইডলাইন সময়ের প্রয়োজনে ও বাস্তবতার নিরীখে গত কয়েক মাসে ৭ বার এই গাইডলাইন সংস্কার বা মডিফাইও করেছে। গাইডলাইনের নতুন আরো একটি মডিফিকেশন শিগগিরই আসছে। কাজেই সব কিছু পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে বিবেচনায় নিয়েই করোনার চিকিৎসা প্রবর্তন করা হচ্ছে। করোনা রোগটি যেমন এর লক্ষণ ধরন বা প্রকৃতি সময়ে সময়ে পাল্টাচ্ছে তেমনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর পরিবর্তন ঘটছে।

নয়া দিগন্ত : করোনা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আপনারা কোন ধরনের ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন?
ডা: মেহেদী মাসুদ : আমরা রোগীর উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা করছি। যেমন ধরুন, কেউ জ্বর নিয়ে আসলে আমরা তাকে সাধারণ প্যারাসিটামল দিচ্ছি। আবার কেউ কাশি নিয়ে আসছে আমরা তাকে এন্টিহিস্টামিন গ্রুপের ওষুধ দিচ্ছি। তবে সাধারণভাবে আমরা রোগীদের ভিটামিন সি’ এবং জিংক জাতীয় ওষুধ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মালটা লেবু এই খাবারগুলো বেশি খেতে পরামর্শ দিচ্ছি।

নয়া দিগন্ত : করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগীই তো প্রতিদিন আপনাদের কাছে আসছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই রোগীদের কিভাবে আপনারা শ্রেণী বিন্যাস করেন?
ডা: মেহেদী মাসুদ : রোগের উপসর্গ এবং রোগীর ইতিহাস দেখেই তাদেরকে শ্রেণী বিন্যাস করা হয়। উপসর্গ অনুযায়ী মূলত চারটি ক্যাটাগরিতে আমরা রোগীদের ভাগ করি। এক. মাইল্ড বা মৃদু উপসর্গ রোগী (এই রোগীদের হালকা জ¦র ঠাণ্ডা বা সর্দি থাকে), দুই. মডারেট রোগী (এই রোগীদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রবলভাবে থাকে কিংবা এক্স-রে রিপোর্টেও নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে), তিন. সিভিয়ার রোগী (এই রোগীদের অন্যান্য উপসর্গের সাথে শ^াসকষ্টও থাকে), এবং চার. ক্রিটিক্যাল রোগী (যেসব রোগীদের অবস্থা অপেক্ষাকৃত বেশি খারাপ থাকে)

নয়া দিগন্ত : আর এসব রোগীকে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কি আপনারা পৃথক কোনো কাঠামো অনুস্মরণ করেন ?
ডা: মেহেদী মাসুদ : হ্যাঁ। রোগীদের তাদের উপসর্গ অনুযায়ীই তাদের চিকিৎসার ধরনও আলাদা। যেমন ধরুন, কিছু রোগী আমাদের কাছে আসে তারা সাধারণ জ¦র বা সর্দিতেই ভীত হয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। আমরা এদের মাইল্ড বা মৃদু উপসর্গের রোগী বলি। এই রোগীদের হাসপাতালের আউটডোর থেকেই সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে এবং বাসায় গিয়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে বলি। আর মডারেট, সিভিয়ার এবং ক্রিটিক্যাল রোগীদের আমরা হাসপাতালে ভর্তি রেখে স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা বা গাইডলাইন মোতাবেক চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি।

নয়া দিগন্ত : একজন করোনা রোগীকে কতদিন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়?
ডা: মেহেদী মাসুদ : রোগীর কন্ডিশন বুঝে চিকিৎসার সময়কাল কমবেশিও হতে পারে। একজন করোনা পজিটিভ রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় তাকে আবারো করোনা টেস্ট করতে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইবার ওই রোগীর স্যাম্পল নিয়ে করোনা পরীক্ষার পর যদি দু’টি রিপোর্টই নেগেটিভ আসে তাহলে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়।

নয়া দিগন্ত : আপনি তো ঢাকার বাইরে ফরিদপুরে একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন। আপনার কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার বা প্রতিবন্ধকতা আছে কি?
ডা: মেহেদী মাসুদ : কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা বলতে এখন তো রোগীর চাপ এমনিতেই বেশি। প্রথম দিকে চিকিৎসকদের পিপিই সঙ্কট থাকলেও এখন এই সঙ্কট আর নেই। সরকার বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান করতে পেরেছে। তবে মানসম্পন্ন মাস্ক বিশেষ করে এন ৯৫ মাস্ক এর সঙ্কট এখনো রয়েছে।

নয়া দিগন্ত : ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন কত জন রোগী আসছে?
ডা: মেহেদী মাসুদ : বর্তমানে এখানে (গতকাল রোববার বিকেল ৪ টা পর্যন্ত) ৫৬ জন ভর্তি আছে। যদিও করোনা ইউনিট চালুর সময়ে এখানে রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ জন। এরপর পর্যায়ক্রমে বাড়ছে রোগীদের চাপ। হাসপাতালের বহি:বিভাগে সাধারণ উপসর্গ নিয়ে আসা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রোগীকেই ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি রোগীদের ভর্তির জন্য সুপারিশ করা হয়। 

নয়া দিগন্ত : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ডা: মেহেদী মাসুদ : আপনাকে এবং নয়া দিগন্তকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us