করোনার সময় কার সম্পদ কতটুকু বেড়েছে
করোনার সময় কার সম্পদ কতটুকু বেড়েছে - ছবি : সংগৃহীত
করোনার প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী তছনছ করে দেয় পুরো বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা। ছোট ছোট অর্থনীতির দেশ তো বটেই, এমনকি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি, ফ্রন্সের মতো বড় বড় অর্থনীতির দেশেও এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে নামে ধস। তেলের দামে হঠাৎ করে ঘটে ব্যাপক পতন। যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র তিন সপ্তাহে কাজ হারায় ৩৩ লাখ মানুষ। আর এর এক সপ্তাহ পর খবর বের হয় সে দেশে ৬৬ লাখ মানুষ কাজ খুঁজছে। ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড ইউনিয়ন’ ৮ এপ্রিল জানায়, করোনার প্রভাবে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২০ সালে ১৩ থেকে ৩২ শতাংশ কমে যেতে পরে। এই সংস্থা আরো বলেছে, ২০২০ সালের বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০৮-০৯ সময়ের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার চেয়েও কমে যেতে পারে।
দেশে দেশে মানুষে মানুষে সম্পদ বৈষম্য বেড়ে চলার কারণে কোটি কোটি মানুষ দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে বহু আগে থেকেই। নানা সময়ে নানা দেশে ঘটেছে বড় ধরনের অনেক দুর্ভিক্ষ। করোনার সময়ের এই বৈষম্য সৃষ্টির প্রবণতা বিন্দুমাত্র কমেনি। বরং বৈষম্য আরো বাড়ছে। ধনী আরো ধনী হচ্ছে, গরিব আরো গরিব হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে এই করোনা মহামারীর সময়ে নতুন করে এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কোটি কোটি হতদরিদ্র। জাতিসঙ্ঘসহ আরো আন্তর্জাতিক সংস্থা করোনার প্রভাবে নতুন দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে। বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিচ্ছে। আর এর বিপরীতে খবর পাইÑ একই সময়ে স্ফীত হচ্ছে বিলিওনিয়ার ও ট্রিলিওনিয়ারের সম্পদের পরিমাণ। যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সপ্তাহের করোনাকালে যেখানে কাজ হারিয়েছে চার কোটি ২৬ লাখ লোক, সেখানে এই সময়ে দেশটির বিলিওনিয়ারদের সম্পদ বেড়েছে ১৯.১৫ শতাংশ। ‘বিলিওনিয়ার বোনাঞ্জা ২০২০’ শীর্ষক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়।
এই সময়ে বিলিওনিয়ার জেফ বেজোসের সম্পদ বেড়েছে ৩৬২০ কোটি ডলার, যার মোট সম্পদ ১৪৯০০ কোটি ডলার; মার্ক জুকারবার্গের বেড়েছে ৩০১০ কোটি ডলার, তার মোট সম্পদ ৮৪৮০ কোটি ডলার; এলন মাস্কের সম্পদ বেড়েছে ১৪১০ কোটি ডলার, তার মোট সম্পদ ৩৪৭০ কোটি ডলার; সার্গে ব্রিনের বেড়েছে ১৩৯০ কোটি ডলার,তার মোট সম্পদ ৬৩০০ কোটি ডলার; ল্যারি পেইজের বেড়েছে ১৩৭০ কোটি ডলার, তার মোট সম্পদ ৬৪৬০ কোটি ডলার; স্টিভ ব্যালমারের বেড়েছ ১৩৩০ কোটি ডলার, মোট সম্পদ ৬৬০০ কোটি ডলার; ম্যাকেঞ্জি বেজোসের বেড়েছে ১২৬০ কোটি ডলার, মোট সম্পদ ৪৮৬০ কোটি ডলার; মাইকেল ব্লুমবার্গের বেড়েছে ১২১০ কোটি ডলার, মোট সম্পদ ৬০১০ কোটি ডলার; বিল গেটসের বেড়েছে ১১৮০ কোটি ডলার, মোট সম্পদ ১১০০০ কোটি ডলার; ফিল নাইটের বেড়েছে ১১৬০ কোটি ডলার, মোট সম্পদ ৪১১০ কোটি ডলার; ল্যারি এলিসনের বেড়েছে ৮৫০ কোটি ডলার, মোট সম্পদ ৬৭৫০ কোটি ডলার; ওয়ারেন বাফেটের বেড়েছে ৭৭০ কাটি ডলার, মাইকেল ডেলের বেড়েছে ৭৬০ কোটি ডলার, শেল্ডন অ্যাডেলসনের বেড়েছে ৬১০ কোটি ডলার।
দেশে দেশে এভাবে সম্পদ বৈষম্য বেড়ে চলার প্রবণতা প্রবল। এই করোনার সময়ে যদি এই প্রবণতা রোধে কার্যকর নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করা হয়, তবে করোনা দুর্ভোগে পড়া মানুষর সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। ধনী-গরিব প্রতিটি দেশের জন্য এদিকে নজর দেয়ার এখন চূড়ান্ত সময়।