পুঠিয়ার তাজা মাছের স্বর্ণযুগ
রাজধানীসহ সারাদেশে রাজশাহী অঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে - ছবি : নয়া দিগন্ত
রাজশাহীর পুঠিয়ায় গত কয়েক বছর থেকে মাছ চাষের সোনালী যুগ চলছে। রাজধানীসহ উত্তরাঞ্চলে তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত নতুন পুকুরের পাশাপাশি বাড়ছে চাষীদের সংখ্যা। এই উপজেলায় প্রতিবছর নতুন ও পুরোনো পুকুর মিলে ৩২ হাজার মে. টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকা। আর মৎস্যজীবির পেশায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় তিন হাজার বেকার যুবকদের।
উপজেলা ভূমি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের তালিকা অনুসারে উপজেলায় এক হাজার আট শ’ হেক্টর জমিতে সাত হাজার সাতটি পুকুর রয়েছে। ওই পুকুরগুলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার মে. টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে।
তবে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর তথ্যমতে, গত ১০ বছরে নতুন করে পুরো উপজেলায় প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে, যা ভূমি ও মৎস্য অফিসের অন্তর্ভূক্ত নয়। এর মধ্যে ভালুকগাছি ও শিলমাড়িয়া এলাকায় বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই পুকুরগুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মাছ চাষীরা বলছেন, রাজধানীসহ সারাদেশে রাজশাহী অঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে মাছে ফরমালিন আতঙ্কের কারণে ক্রেতারা গত কয়েক বছর থেকে বড় আকারের তাজা মাছ কিনতে বেশি আগ্রহী। তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতিদিন শত শত ট্রাকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাজা মাছ সরবরাহ করছেন চাষীরা। বর্তমানে বড় ও তাজা মাছগুলো প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৩ শ’ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভালুকগাছি এলাকার মৎস্য চাষী নবীর উদ্দীন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে বাজার ভালো হওয়ায় বর্তমানে এই এলাকার অনেকেই এখন মাছ চাষে আগ্রহ হচ্ছেন। অনেক কৃষক তাদের নিচু জমিগুলোতে পুকুর খনন করছেন। আবার কেউ তাদের জমিগুলো পুকুর খনন করতে আগ্রহী হয়ে মৎস্য চাষীদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি বিঘা পুকুর বছরে ইজারা মূল্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর আধুনকি প্রযুক্তিতে প্রতিবছর এক বিঘা পুকুরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
আমজাদ হোসেন নামের অপর একজন মাছ চাষী বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষের মাছ চাষ হচ্ছে অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানে মাছ চাষ অনেক লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন চাষীদের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে প্রতিবছর এই উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার মে. টন বিভিন্ন জাতের মাছ উৎপাদন হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশিরভাগ তাজা মাছ দু’শতাধিক ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। আর মাছ চাষকে ঘিরে এলাকার তিন হাজারেরও বেশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে গুনগত মানের পোনা শনাক্ত করতে ব্যর্থতা ও প্রযুক্তিগতভাবে মাছ চাষ করতে না পেরে অনেকই লোকসান গুনছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, বর্তমানে মাছ চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহে এগিয়ে আসছেন। এর মধ্যে নতুন করে পুকুর খনন করতে আমাদের কাছে ৩৬টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। আমরাও আগ্রহী মাছ চাষিদের সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছি। চাষীদের সঠিক তদারকির কারণে সারা দেশে এই অঞ্চলের উৎপাদিত তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। আর মাছ চাষ করে এলাকার চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন।