লকডাউনে শাস্তি কি শুধু মুসলিমদের জন্য? পুলিশকে প্রশ্ন তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের
মুসলিম নেতা - ছবি : সংগৃহীত
গত কয়েক মাসে ভারতে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক হারে ছড়িয়েছে মুসলিমবিদ্বেষ৷ মুসলিমরাই দেশে কোভিড-১৯ ছড়াচ্ছে বা ওদেরকে বয়কট করা, এমন প্রপাগান্ডা চলেছে ভারতে৷ সংক্রমণ রুখতে ২৫ মার্চ থেকে ভারতে চলছে লকডাউন৷ লকডাউন বিধি ভাঙলে শাস্তিরও ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন৷ কিন্তু সেই শাস্তি কি শুধু মুসলিমদের জন্য? ওরাই কি শুধু লকডাউন অমান্য করছে, অন্য কোনও ধর্মের মানুষ বিধি অমান্য করে বাইরে বেরোয়নি? প্রশ্নগুলো কোনও মুসলিম পক্ষের সমালোচকের নয়৷ প্রশ্ন খোদ তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের৷ বুধবার হাইকোর্ট পুলিশকে জিজ্ঞাসা করে, আনুপাতিক হারে তারা বেশি সংখ্যায় মুসলিমদেরই ধরেছে কেন? অন্য সম্প্রদায়ের কোনও মানুষ কি লকডাউন অমান্য করেনি? লকডাউন চলাকালীন পুলিশ রেড নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাঘবেন্দ্র সিং চৌহান ও বিচারপতি বিজয়সেন রেড্ডির সম্মিলিত বেঞ্চ পুলিশকে এই প্রশ্ন করে৷
এ প্রসঙ্গে তারা আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গদের কৃষাঙ্গ বিদ্বেষের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, দেখুন আমেরিকাতে কি ঘটছে৷ কালো মানুষকে হত্যা করায় আজ পুরো আমেরিকা জ্বলছে৷ এ দেশেও যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে পুলিশ টার্গেট করেছে, সেটা বিচারপতিরা বুঝতে পেরেই এ মন্তব্য করেছেন৷ সমাজকর্মী শীলা ম্যাথিউজ এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছেন৷ লকডাউন চলাকালীন মুসলিমদের যেভাবে পুলিশ হয়রানি ও গ্রেফতার করেছে, তার বিরুদ্ধেই এই মামলা৷ তার আইনজীবী আদালতে এদিন জুনায়েদের ঘটনাটির কথা উল্লেখ করেন৷ পুলিশ তাকে এত মারে যে ৩৫টি সেলাই লেগেছে তার মুখে৷ জুনায়েদ পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার সরবরাহ করত৷ সেই কাজ করার সময়ই পুলিশ তাকে মারধর করে অন্যায়ভাবে৷
বেঞ্চ এদিন গুরুতর প্রশ্ন তোলে, পুলিশ যাদেরকে অত্যাচার করেছে তারা সবাই মুসলিম কেন? ডিজিপিকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট৷ কোর্টের নির্দেশ, অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ২৯ জুনের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে৷
দিল্লি দাঙ্গার জড়িতদের নাম প্রকাশ ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় : কোর্টে জানাল দিল্লি পুলিশ
ফেব্রুয়ারিতে ঘটা উত্তর-পূর্ব দিল্লি দাঙ্গাতে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। নিকাশিনালায় মিলেছিল লাশ। দু’দিনের দাঙ্গায় সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয় ৫০-এর অধিক মানুষের। সেই দাঙ্গায় অভিযুক্তদের আড়াল করা হচ্ছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে।
মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লি দাঙ্গায় জড়িত যাদের নাম এফআইআরে রয়েছে, সেই তথ্য অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’। তাই তাদের নাম ও তথ্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপলোড করা যাবে না। মঙ্গলবারই দিল্লি পুলিশ এ ব্যাপারে পাঁচ পাতার হলফনামা দিল্লি হাইকোর্টে জমা দেয়। পুলিশের আইনি সেল জানাচ্ছে, সচেতনভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দাঙ্গায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করা হবে না। দাঙ্গার অব্যবহিত পরেই অভিযোগ উঠছিল, বিজেপির নেতারা উসকানি দিয়ে এই দাঙ্গা শুরু করেন। পরে দিল্লির বিজেপি নেতা ও কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে (হিন্দু সেনা) অভিযোগ ওঠে, বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনে দাঙ্গা করানোর। দিল্লি দাঙ্গায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। হিংসা না থামিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে তারা। এফআইআর করা হয়নি উসকানি দেওয়া বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে।
এবার দিল্লি পুলিশের সদ্য এই মন্তব্যে ফের বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাদের দাবি, অভিযোগকারী, সাক্ষী ও অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করার মাধ্যমে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে। পুলিশের এই হলফনামা বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের কাছে জমা দেওয়া হয়।
সিপিআইএম নেতা বৃন্দা কারাতের করা এক আবেদনের ভিত্তিতে পুলিশ এই রিপোর্ট জমা দেয়। কারাত আরও দাবি জানিয়েছিলেন, ২৪ মার্চ থেকে লকডাউনের মধ্যে হিংসার অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। পুলিশের জবাব, এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে অভিযুক্তদের অধিকার ক্ষুন্ন হবে। বৃন্দা কারাত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামা উল্লেখ করে আবেদনে জানিয়েছিলেন, এফআইআর করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে তাদের তথ্য আপলোড করতে দিল্লি পুলিশ বাধ্য।
দিল্লি পুলিশ পালটা জানায়, কারাত অভিযুক্ত নন, সাক্ষী বা অভিযোগকারীও নন। তাই তিনি দিল্লি দাঙ্গায় জড়িতদের নাম জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। তবে পুলিশ সিল করা খামে দাঙ্গাকারীদের নাম কোর্টের কাছে পেশ করেছে। হাইকোর্ট রিপোর্টটি গ্রহণ করলেও কোনও নির্দেশ জারি করেনি। পরবর্তীতে মামলাটির ফের শুনানি হবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেই।
সূত্র : পূবের কলম