উত্তেজনায় আগ্রহ কোন পক্ষের?
উত্তেজনায় আগ্রহ কোন পক্ষের? - ছবি : সংগৃহীত
লাদাখের এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টির একটি প্রয়াস যে রয়েছে সেটি বোঝা যায়। সেই প্রচেষ্টাটি আসলে কোন পক্ষের এবং কেন? এ ব্যাপারে ভারতীয় সরকারি বক্তব্য অথবা গণমাধ্যমের খবরে চীনের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের সাদামাটা বক্তব্যের বাইরে সুস্পষ্ট কিছু না থাকলেও চীনা গণমাধ্যম এবং থিংক ট্যাংকগুলোর বক্তব্যে স্পষ্ট একটি ব্যাখ্যা রয়েছে, যা ভারতীয় পক্ষকে খণ্ডন করতে দেখা যাচ্ছে না।
চীন পাবলিক লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল জাং শুইলির বক্তব্য অনুসারে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ভারতীয় সেনারা সোমবার সন্ধ্যায় গ্যালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণের সীমানা পেরিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানিমূলক হামলা চালিয়েছিল, ফলে গুরুতর শারীরিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তিনি উল্লেখ করেন, গ্যালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে চীন সর্বদাই সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেছে এবং ভারতীয় সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর এ ব্যাপারে বক্তব্য অসঙ্গতিপূর্ণ আর তা উভয় দেশ যে চুক্তিতে পৌঁছেছে তাকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। সেনা কমান্ডার-স্তরের আলোচনায় গৃহীত ঐকমত্যকেও তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে।
বেইজিংভিত্তিক সামরিক বিশেষজ্ঞ ওয়েই দোংক্সু বুধবার বলেছেন, চীনা সেনারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া চালিয়েছিল, চীন পরিস্থিতি বাড়িয়ে তোলেনি এবং উভয়পক্ষ সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করতে ইচ্ছুক হলে এখনো এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ওয়েই বলেন, ভারতীয়পক্ষও বুঝতে পেরেছে যে সীমান্ত অঞ্চলে একটি বৃহত্তর এবং তীব্র সঙ্ঘাত হলে দু’দেশের সম্পর্কের ওপর তার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যে, চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ছোট আকারের সঙ্ঘাত সম্ভবত সংঘটিত হতে থাকবে, তবে বড় আকারের সামরিক সঙ্ঘাত হবে না।
উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা
সোমবারের মারাত্মক সংঘর্ষ সত্ত্বেও চীন ও ভারতের মধ্যে সর্বশেষ সীমান্ত বিরোধগুলোর সম্ভবত আগের মতোই ‘নরম অবতরণ’ দেখা যাবে, কারণ উভয় দেশই নিয়ন্ত্রণমূলক বিবৃতি দিয়েছে এবং উভয় দেশই সঙ্ঘাতে বন্দুক ব্যবহার করেনি।
বুধবার একটি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝা লিজিয়ান বলেছেন, চীন ও ভারত উভয় কূটনৈতিক ও সামরিক উভয় চ্যানেলের মাধ্যমেই প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর সমাধানের জন্য নিবিড় যোগাযোগে রয়েছে।
বুধবার রয়টার্স ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, উভয় দেশের সেনা সদস্যরা শান্ত রয়েছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, পরিস্থিতির উত্তেজনা বাড়ানোর কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
থিংক ট্যাংক গ্র্যান্ডভিউ ইনস্টিটিউশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট টিয়ান শিচেন বুধবার বলেছেন, তিনি আগামী দিনে পরিস্থিতি কিভাবে বিকশিত হবে সে সম্পর্কে আশাবাদী এবং চীন ও ভারত উভয়ই বড় শক্তি হওয়ায় তারা এ ঘটনার সমাধানের জন্য কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করছেন।
ঘটনার দু’দিন পর বুধবার চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঝি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। গ্যালওয়ান উপত্যকার বিষয়ে উভয়পক্ষই পরিস্থিতি শীতল করার জন্য তাদের সামরিক নেতাদের দ্বারা ঐকমত্যকে মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন।
কিভাবে এই জাতীয় দ্বন্দ্বের বারবার সংঘটন এড়ানো যায় এবং পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যায় তা চীন-ভারত সম্পর্কে এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।