করোনা প্রতিরোধ : জাদুকরি ফল পাওয়া যাবে ডেক্সামেথাসোনে!

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jun 19, 2020 03:07 pm
 ডেক্সামেথাসোন

ডেক্সামেথাসোন - প্রতীকী ছবি

 

সারা বিশ্বের মানুষ এখন করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের একটি ব্যবস্থা খুঁজছে। নানা সময়ে নানা ওষুধের কথা ওঠে আসছে। কম দামি বহু ব্যবহৃত স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোনও আলোচনায় উঠে এসেছে। গবেষকরা বলেছেন কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মৃত্যু কমাতে এই ওষুধ কার্যকর।

ডেক্সামেথাসোন কী?
মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন ঠিকভাবে কাজ করে না এবং তার ফলে প্রদাহ হয় ও টিস্যুর ক্ষতি হয় তখন এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ডেক্সামেথাসোন শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং একইসঙ্গে শ্বেত রক্ত কণিকার উপর প্রভাব ফেলে প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

ডেক্সামেথাসোন কোর্টিকোস্টেরয়েড গ্রুপের মধ্যে পড়ে, যার সঙ্গে যোগ রয়েছে কর্টিজোল হরমোনের। এই হরমোন মানুষের অ্যাড্রিনালিন গ্ল্যান্ডে স্বাভাবিক ভাবে উৎপন্ন হয়। পেশির প্রদাহ, রক্ত নালীর প্রদাহ, ক্রনিক আর্থ্রাইটিস ও লুপাসের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ফুসফুসের অসুখ, কিডনি ও চোখের প্রদাহে, এবং মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের টিউমার ঘটিত ফোলা কমাতে এই ওষুধ কাজে লাগানো হয়। ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপির জন্য যে বমিভাব ও বমি হয়, তার চিকিৎসাতেও এ ওষুধ ব্যবহার করা হয়।


কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা কতদূর?
কোভিড-১৯-এর জন্য এখনো কোনো প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নেই। অন্য রোগের জন্য অনুমোদিত ওষুধ দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে।

২০০৩ সালে সার্স প্রকোপের সময়ে কর্টিকোস্টেরয়েড চিকিৎসার সাহায্য নেয়া হয়েছিল। কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও বেশ কিছু দেশ যেসব রোগীর শ্বাসযন্ত্রে ভয়াবহ সংক্রমণ হয়েছে, তাদের উপর কর্টিকোস্টেরয়েড চিকিৎসা কীভাবে কার্যকর হয় সে নিয়ে গবেষণা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কর্টিকোস্টেরয়েডের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

২৭ মে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য অন্তর্বর্তী নির্দেশিকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাল নিমোনিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহারের বিরুদ্ধে বলেছে। বলা হয়েছে সার্স কোভ ২, সার্স কোভ ও মার্স কোভের উপর কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের ফলে দেখা গেছে এতে মৃত্যুর আশঙ্কা হ্রাস পায় না, হাসপাতালে থাকার সময়কাল কমে না, আইসিইউ -এর ভর্তি হার বা যান্ত্রিক ভেন্টিলেশন কমায় না এবং এর অনেক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

তাহলে নতুন কী জানা গেল?
ব্রিটেনে ডেক্সামেথাসোন নিয়ে পরীক্ষা চলছিল। এ সপ্তাহে অক্সফোর্ডের গবেষকরা এর ট্রায়ালের ফল ঘোষণা করেছেন। তারা জানিয়েছে ২১০৪ জন রোগীকে ৬ মিলিগ্রাম ওষুধ ১০ দিন ধরে দেওয়া হয়েছিল। দেখা গিয়েছে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের এক তৃতীয়াংশের এবং যারা কেবল অক্সিজেন নিচ্ছিলেন তাদের এক পঞ্চমাংশের মধ্যে মৃত্যুহার কমানো গিয়েছে।

জানানো হয়েছে ২৮ দিনে মৃত্যুহার ১৭ শতাংশ কমেছে এই ওষুধ ব্যবহারে এবং ভেন্টিলেশন প্রয়োজন এমন রোগীদের মধ্যে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে।

এই ফলাফল কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
প্রথমত গবেষণায় যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন নেই তেমন রোগীদের মধ্যে এর সাফল্যের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অধ্যাপক পিটার হরবি স্বীকার করেছেন যে যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন কেবল সেই রোগীদের মধ্যেই এর সাফল্য দেখা গেছে।

হাসপাতালে ভর্তি নন এমন রোগীদের উপর এই গবেষণা করা হয়নি। ফলে এ ওষুধ সামান্য আক্রান্ত ব্যাপক রোগীদের ব্যবহারের সুপারিশ করা হচ্ছে না।

ভারতে কি এই চিকিৎসা হচ্ছে?
হ্যাঁ। স্বাস্থ্যমন্ত্রক কোভিড-১৯ মোকাবিলার প্রটোকলে কোর্টিকোস্টেরয়েড মিথাইলপ্রেডনিসোলোন ব্যবহারের স্বীকৃতি দিয়েছে। বলা হয়েছে ০.৫ থেকে ১ mg/kg আইভি মিথাইলপ্রেডনিসোলোন তিন দিনের জন্য দেওয়া যেতে পারে (ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বা অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে এমন দেখা গেলে)। এবং ব্যাপক সংক্রমিতদের ক্ষেত্রে – গ্লুকোকর্টিকয়েড ৩ থেকে ৫ দিনের জন্য দেয়া যেতে মারে। এর ডোজ হিসেবে মিথাইলপ্রেডনিসোলোন ১ – ২ 2mg/kg/প্রতিদিনের বেশি দেয়া উচিত নয়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী?
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রটোকলে বলা হয়েছে গ্লুকোকর্টিকয়েডের ডোদ বেশি হলে করোনাভাইরাস শরীর থেকে যেতে সময় বেশি লাগতে পারে। ২৫ মে ল্যান্সেট এর অধিক ব্যবহার সম্পর্কে সাবধান করেছে।

কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ায় এবং সম্ভাব্য কুফল থাকায় অন্য প্রয়োজন ছাড়া এ ওষুধ ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us