ভারতকে চমকে দিয়েছেন ওলি!
ওলি - ছবি : সংগৃহীত
যে সরকার অত্যাধিক মাত্রায় পেশীবহুল জাতীয়তাবাদের ওপর নির্ভরশীল ও ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব নিয়ে বাগাড়ম্বড়তা করে সেইাসাথে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করার কথা বলে, সেই বিজেপি-শাসিত ভারতই আরেক দেশের একই কৌশল গ্রহণে দৃশ্যত বেশ বিস্মিত হয়ে পড়েছে।
নয়া দিল্লি সেই ১৯৯০-এর দশক থেকে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরার (ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে) ওপর নেপালের দাবির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুর বর্তমান উদ্বেগ সম্পর্কে ভারতকে সতর্ক করে দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ভারত সরকার দৃশ্যত সতর্ক হয়নি এবং চীনে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা তৈরী করে ফেলে। এতে করে নেপালের জাতীয়তাবাদী চেতনা জেগে ওঠে।
নেপাল পার্লামেন্ট শনিবার তাদের জাতীয় মানচিত্র পরিবর্তন করে একটি সংশোধনী পাস করে। এতে ওই তিনটি এলাকা তাদের বলে দাবি করা হয়েছে।নয়া দিল্লি এই পদক্ষেপকে লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। তবে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হওয়া সাংবিধানিক সংশোধনী ভারতের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক ব্যর্থতাই। ভারত এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে, কাঠমান্ডুকে ওই পরিবর্তন বাতিল করার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছে ভারত।
তবে কাঠমান্ড এখানে অনড় থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সরকার মাত্র কয়েক মাস আগে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া দিয়ে ওঠে। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে ভারতের রাস্তা নির্মাণ নতুন কিছু নয়, গোপন ব্যাপারও ছিল না।
তবে ইস্যুটি সম্ভবত ওলির পালে হাওয়া দিয়েছে। এ কারণেই তিনি দ্রুততার সাথে পার্লামেন্টে বিল পাস করতে উদ্যোগী হন। এমনকি নেপালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ঝুঁকি সৃষ্টি করতেও দ্বিধা করেননি।
আর নেপালি কোনো রাজনীতিবিদই সম্ভবত বিশ্বাস করেন না যে ভারত সত্যি সত্যিই তার নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো ভূমি ছেড়ে দেবে। এমনকি নেপাল যদি চীন কার্ড খেলা চেষ্টাও করে বা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়, তবুও অবস্থার পরিবর্তন সম্ভবত হবে না।
আর ভারতও তা জানে। তারা সম্ভবত রাস্তা নির্মাণের প্রেক্ষাপটে নেপালের কাছ থেকে মৃদু উদ্বেগ প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু নেপালে যেভাবে জোরালো প্রতিবাদ দেখা গেছে, তা সম্ভবত বিস্মিত করেছে নয়া দিল্লিকে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের কনস্টাটিনো হ্যাভিয়ার বলেছেন, ভারতের নীরবতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কাঠমান্ডুতে স্বাভাবিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে। নেপালের উত্তপ্ত অবস্থঅ নিয়ে ভারত তার অসন্তোষ প্রকাশ করার পর দেশটি এখন মোটামুটিভাবে নীরব রয়েছে। নীরবতা অনেক কথা বলে এবং সম্পর্ক এখন সম্ভবত বেশ শীতল হয়ে পড়েছে। ভারত কেন ইস্যুটি সমাধানে আগ্রহ নয়, তা বোঝা যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিবেশী প্রথম নীতিটি বেশ গুরুত্ব পেয়েছিল। এই নীতির কারণে কানেকটিভিটি ফ্রন্টে বেশ বড় অগ্রগতি হয়। কিন্তু চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও ভারতের স্বাভাবিক কিছু বাস্তবায়নগত ব্যর্থতার কারণে যে সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছিল, তা পূরণ হয়নি।
আবার বিজেপি-পরিচালিত সরকারের পেশীশক্তির জাতীয়তাবাদ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
তবে তার মানে এই নয় যে ভারত পরাজয় স্বীকার করে নেবে। বরং এর কূটনীতিক বাহিনী ও কৌশলবিদেরা এগিযে যাওয়ার পথ তৈরি করবে। তবে বিজেপির রণহুঙ্কারের কারণে প্রতিবেশীদের মধ্যেই দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।
স্ক্রল.ইন