নেপালকে পাত্তা দিতে চায় না ভারত!
নরেন্দ্র মোদি ও কে পি ওলি - ছবি : সংগৃহীত
নেপালের পার্লামেন্ট লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা এলাকাকে তার ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রণীত মানচিত্রকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি সাংবিধানিক সংশোধনী অনুমোদন করেছে।
এই বিল পাস নেপালের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ভারতের জন্য বড় ধরনের আঘাত। ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো সে আঞ্চলিক ভীতি প্রদর্শনকারী এবং নেপালের প্রতি দাদাগিরি ফলায়। ভারতের এই মনোভাবের আরো প্রকটভাবে ফুটে ওঠে দেশটি সামরিক ও এমনকি কূটনৈতিকভাবে চীনের সাথে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী হলেও নেপালের সাথে করতে রাজি নয়।
সীমান্ত ইস্যু নিরসনের জন্য ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চায় নেপাল। কিন্তু ভারত এ ব্যাপারে কখনো আগ্রহ দেখায়নি। মিডিয়ার খবরে প্রকাশ, দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের ফোন কল করার শেষ মুহূর্তের প্রস্তাবটি আসলে ছিল সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রয়াসকে বিচ্যুত করার কৌশল।
ভারত ছয় মাস আগে লিপুলেখ ও কালাপানিকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করার পর নেপাল সরকারের আনুষ্ঠানিক মানচিত্র প্রকাশিত হলো। কৈলাশ-মানস সরোবরের তীর্থযাত্রী সড়কের অংশ হিসেবে ভারত লিপুলেখ হয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি সংযোগ সড়ক উদ্বোধনের পর নেপাল-ভারত উত্তেজনা আরো বাড়ে। এই সড়কটি নির্মাণের ব্যাপারে নেপালের অনুমতি নেয়নি ভারত। ছোট দেশগুলোকে বড় দেশগুলো কিভাবে ভয় দেখায়, এটি তার একটি উদাহরণ।
নেপাল দাবি করছে যে নতুন রাস্তাটি গেছে তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে। নেপাল দাবি করছে যে অ্যাঙ্গো-নেপালি যুদ্ধের পর ১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের রাজার মধ্যে সই হওয়া সুগুইলি চুক্তি অনুযায়ী লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ নেপালের অংশ। নেপাল সরকার বলছে, ওই চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে এই অঞ্চলগুলো নেপালের।
কিন্তু ভারত তা মেনে নেয়নি। ভারতের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে, তবে তারা কেন তা উপস্থাপন করছে না। এতে বোঝা যাচ্ছে, ভারতের কাছে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই কিংবা তারা নেপালকে অগ্রাহ্য করছে।
নেপালের তার রাজনৈতিক মানচিত্র সংশোধন করার সিদ্ধান্তটি হলো ভারতীয় দাবির বিরোধিতা করে দেশটির নেয়া প্রথম বড় ধরনের পদক্ষেপ। এর আগে নেপালি নেতারা সীমান্ত ইস্যুগুলো নিয়ে ভারতের সাথে গুরুতর আলোচনা করতে অনীহ ছিল। নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের জোরাল প্রভাব থাকায় তারা চাইতেন না ভারতকে ক্ষুব্ধ করতে।
এখন দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ এসেছে। কার্যকর ও উচ্চপর্যায়ের সংলাপ হওয়া উচিত। তবে নেপাল যখন এসব ইস্যু নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করছে, তখন ভারতীয় পক্ষ একে ‘চীনা মদত’ বা জনসমর্থন লাভের কেপি ওলি সরকারের চেষ্টার নেপালি ভাবাবেগ হিসেবে অভিহিত করে নাকচ করে দিয়েছে।
কোভিড-১৯ বিস্তার রোধের জন্য সহযোগিতা যখন খুবই প্রয়োজন, তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই দেশ সীমান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। ভারতের উচিত হবে নেপালের সংলাপের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে এই ইস্যুর নিরসন করা।
ভারতের তা করতে ব্যর্থ হলে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিপুল পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমৈ প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন লাভ করার সুযোগটি বাগিয়ে নিচ্ছে চীন। কিন্তু প্রতিবেশীদের আস্থা হারাচ্ছে ভারত।
নেপাল যখন দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার কথা বলছে, ভারত তখন বলছে, করেনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নেপালের সাথে সীমান্ত প্রশ্নে আলোচনা করতে সে আগ্রহী নয়। কিন্তু ভারতের তার বৃহৎ প্রতিবেশী চীনের সাথে ব্যাপক আলোচনা করতে কোনো সমস্যা দেখছে না। এখানে কি করোনাভাইরাস কোনো সমস্যা নয়? নাকি শক্তিই আসল কথা- এই নীতিই ভারতীয় কূটনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে?
দি ওয়্যার