আবার অনাহার-অর্ধাহারে রানু মণ্ডল!
রানু মণ্ডল - প্রতীকী ছবি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রানাঘাটের রানু মণ্ডলের জীবন অনেকটা সাপ লুডোর মতো।একসময় রানাঘাট ষ্টেশন চত্বরে একপ্রকার ভিক্ষা করে দিন কাটত তার । মাত্র একটা গান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হবার পর সব কিছু বদলে যায় তার । শুরু হয় স্বপ্নের উড়ান । কিন্তু বর্তমানে লকডাউনের মধ্যে কেমন আছেন তিনি? প্রায় অনাহার আর অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তার আর কেউ খোঁজ নেয় না ।
তার লাইললাইটে আসাটা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। প্রতিদিনের মতো সেদিনও রানু মণ্ডল রানাঘাট ষ্টেশনে গান গাইছিলেন শতছিন্ন পোশাক পরে । তার মিষ্টি গলায় আকৃষ্ট হয়ে কেউ দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন আবার কেউ বা একপলক তাকিয়ে নিজেদের গন্তব্যে । এমন তো প্রতিদিনই হয়। কিন্তু ওই দিন একটি ছেলে শুধু মুগ্ধ হয়ে রানু মণ্ডলের গান শোনেনি, নিজের মোবাইলে রেকর্ডিং করে নিয়েছিল গান । পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় রানুর গান । আর পিছনে তাকাতে হয়নি রানাঘাটের রানু মণ্ডলকে । রাতারাতি ভাগ্য বদল হয়ে যায় তার। পুরো উপমহাদেশে তার পরিচিতি গড়ে ওঠে।
সেই দিনকার সেই ছেলেটির নাম অতীন্দ্র চক্রবর্তী । রানু মণ্ডলের স্বপ্নের সফর সঙ্গী হয়ে তিনিও ঘুরে বেড়িয়েছেন ।
তবে অনেকে অভিযোগ করছেন যে হঠাৎ করে সুদিন ফেরার পর তিনি অতীতকে ভুলে গিয়েছিলেন। এমনকি ফ্যানদের ভালোবাসাও তার কাছে বিরক্তিকর ব্যাপার হলে দাঁড়িয়েছিল। অনেকের গায়ের গন্ধও নাকি তার সহ্য হতো না। ফলে একে একে সরে যেতে থাকে অনেকেই। কিন্তু তবুও এমন অবস্থায় তিনি পড়বেন, তা হয়তো ভাবেননি।
প্রচারের আলোয় থাকা সেই রানু মণ্ডলের খোঁজ নেয় না কেউ আজ । অতীন্দ্র চক্রবর্তীও দূরে সরে গেছে । অথচ রানু মণ্ডলের বাড়িতে কিছু মাস আগে পর্যন্ত লোকের ভিড় উপচে পড়ত । লকডাউনের যাঁতাকলে হারিয়ে গেছে রাণু প্রসঙ্গ । কিন্তু লকডাউনে কোথায় ছিলেন তিনি? জানা গেছে মাস দুয়েক আগে শোনা যায়, মুম্বই থেকে কোনো এক অনুষ্ঠানের জন্য কেরালা গিয়েছিলেন তিনি । কেরালা থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ । এখন একপ্রকার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি ।
রানা ঘাটের মণ্ডল বলেন, “কেরালা থেকে বাড়ি ফেরার পর টানা পাঁচ দিন প্রায় না খেয়েই কাটাতে হয়েছে । কেউ খোঁজ নিতে আসেনি । এখনও ঠিকমতো খাবার পাই না। কোনো দিন ভাত জোটে । কোনো দিন জোটে না। মুড়ি কিংবা কোনো সবজি সিদ্ধ করে, তা খেয়েই থাকতে হয় । মাঝে মধ্যে কেউ এসে একটু চাল-ডাল সাহায্য করে যায়।”
তাই সেদিন স্টেশনের ভাইরাল হওয়া গান আজ- “কুছ খো কর পানা হ্যাঁয়, কুছ পা কর খোনা হ্যায়, জীবনকা মতলব তো আনা অর যানা হ্যায়’ নিজের জীবনে দেখতে পাচ্ছেন তিনি ।