ভারত-চীন সঙ্ঘাত অনিবার্য!
ভারত-চীন সঙ্ঘাত অনিবার্য! - প্রতীকী ছবি
আরেকটি বছর এবং চীন ও ভারতের মধ্যে আরেকটি সীমান্ত সঙ্ঘাত প্রশমিত হয়েছে।
এবার দুই দেশের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর উত্তেজনা প্রশমিত হয়। গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যকার লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) কয়েকটি স্থানে যে সঙ্ঘাত হয়েছিল, এর মাধ্যমে তার অবসান ঘটে।
সঙ্ঘাতের সূচনা হয়েছিল গালওয়ান রিভার উপত্যকায় ভারতের একটি রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে। এই উপত্যকার একদিকে রয়েছে ভারত-শাসিত লাদাখ, অন্যদিকে চীন-শাসিত আকসাই চিন।
এখন সৈন্যরা পিছিয়ে এলেও ৩,৫০০ কিলোমিটার (২২,০০ মাইল) সীমান্ত রাস্তাটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি। এর ফলে আরো সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।
দুই দেশের সঙ্ঘাত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। চীন ১৯৫৯ সালে আকসাই চিন থেকে সরাসরি দুটি পশ্চিম দিকের এলাকার সাথে যুক্ত করতে জিনজিয়াঙ-তিব্বত রাস্তা নির্মাণকাজ শুরু করলে ওইসময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ভারত মনে করত, আকসাই চিন হলো লাদাখের অংশ। এ কারণে ভারত এই নির্মাণকাজের বিরোধিতা করে।
ওই যুদ্ধে দুই পক্ষ এক মাস যুদ্ধ করে। এর অবসান হয় চীনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে। চীন ২০ কিলোমিটার পেছনে চলে আসে।
আর ২০১৭ সালে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় দোকলাম মালভূমিতে চীনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগের কারণে। এই সঙ্ঘাতের স্থায়িত্ব হয়েছিল দুই মাস। ১৯৬২ সালের পর এটিই ছিল সবচেয়ে খারাপ।
গত বছর ভারত ওই এলাকায় সব ঋতুতে ব্যবহার করা যায়- এমন একটি রাস্তা নির্মাণ করে। তারা চলতি বছর এলএসি বরাবর আরো ১১টি রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
রাস্তাগুলো নির্মাণের দায়িত্ব বর্ডার রোডস অর্গ্যানাইজেশনের (বিআরও)। এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি সংস্থা।
ভারত ২০২৩ সালের মধ্যে এলএসি বরাবর মোট ৩,৩০০ কিলোমিটার লম্বা ৬১টি রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। আর ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিআরও ঘোষণা করেছে, তারা ৭৫ ভাগ কাজ শেষ করেছে।
বিশেষ করে বলা যায় ২০১৯ সালে সমাপ্ত লেহ ও লাদাখের কারাকোরাম পাসের মধ্যকার ২৫৫ কিলোমিটার রাস্তার কথা। এটি ৫,০০০ মিটার উঁচুতে এবং প্রায় ৩৭টি বরফ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে করা হয়েছে। এটি কারাকোরাম পাস থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ এটি চীন, ভারত ও পাকিস্তানের সংযোগবিন্দুতে চলে গেছে। এসব রাস্তা দ্রুত সৈন্য ও ভারী সামরিক যানবাহনী চলাচলের ব্যবস্থা করবে।
আবার চীনও থেমে নেই। তারাও তাদের জিনজিয়াং-তিব্বত রোডকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ২১৯-এর সাথে যুক্ত করতে সম্প্রসারণ করছে। এছাড়া পশ্চিম সীমান্তের দিকেও এটি বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে।
জিনজিয়াং থেকে জি২১৯ গেছে কুনলান, কারাকোরাম, গ্যাংদাইস ও হিমলয় পর্বতমালার দিকে। এটি তিব্বতের শানান ও নিয়াচি এলাকায় পৌঁছে গেছে। এটি ভারত-নিয়ন্ত্রিত অরুনাচল প্রদেশের খুব কাছে।
গত ৫ বছরে বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তা নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজের পরিচালক লিন মিনওয়াং বলেন, সঙ্ঘাত অনিবার্য।
তিনি বলেন, এখন ভারত ও চীনের সামনে সীমান্ত বিরোধ মেটানো অসম্ভব কাজ। তাদের সামনে বাস্তবস্মত যে কাজটি রয়েছে তা হলো সঙ্ঘাতের ব্যবস্থাপনা করা।
এসসিএমপি