যেভাবে ফুসফুস ও শিরা-উপশিরায় ধ্বংসলীলা চালায় করোনা
যেভাবে ফুসফুস ও শিরা-উপশিরায় ধ্বংসলীলা চালায় করোনা - সংগৃহীত
ফুসফুসে কার্যত ধ্বংসলীলা চালায় করোনাভাইরাস। কো-মরবিডিটি বা অন্য রোগে আক্রান্ত হলে তো কথা নেই! ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো নষ্ট করে, সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরাগুলিতে রক্ত চলাচল আটকে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। গত ৮ জুন বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র তোলপাড় ফেলেছে বিশ্বজুড়ে। ইতালির মিলান ও বার্গামোর চিকিৎসকরা ৩৮ জন কোভিড রোগীর ময়নাতদন্ত করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিকের প্রধান ডাঃ বিপ্লব শী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পরীক্ষা করা ১২ জনের কারও ক্ষেত্রেই জীবদ্দশায় কোভিড পরীক্ষা করা হয়নি। অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, করার সময়ও ছিল না বলে শুনেছি। কিন্তু পুলিশ ও বাড়ির লোকজনের বক্তব্যে মনে হয়েছে, সবক’টি ক্ষেত্রেই করোনার উপসর্গ ছিল। তাই ময়নাতদন্তের সময় সতর্কতা নিয়ে কাজে নামতে হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল সূত্রে খবর, ইতালির সঙ্গে তাদের প্রাপ্ত ফলাফলের কিছুটা ফারাকও রয়েছে। শুধু ফুসফুস নয়, লাশগুলোর ময়নাতদন্তে ডাক্তাররা শরীরের অন্য অংশেও করোনার মরণকামড় পেয়েছেন। এক, ফুসফুসে জল জমেছে। বড় হয়ে গিয়েছে। দুই, বায়ুথলিগুলো ও ফুসফুসের সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন, রক্ত সংবহন বাধা পেয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় শিরা-ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধেছে। অক্সিজেনযুক্ত রক্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। চার, অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচ, ক্ষতি হয়েছে কিডনিরও।
অন্যদিকে, ইতালির লুইগি সাকো ও পাপা জিওভানি—এই দুই হাসপাতালের ৩৩ জন পুরুষ, পাঁচজন মহিলা কোভিড রোগীর ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাদের সমীক্ষাপত্রটি গোটা ইউরোপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কোভিড রোগীর ময়নাতদন্তের দলিল। এর মধ্যে ১৮ জনের প্রেশার, ১১ জনের হার্টের অসুখ, ন’জনের সুগার, চার জনের ক্যান্সার, তিন জনের সিওপিডি’র মতো কো-মরবিডিটি ছিল।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও প্যাথোলজিস্টরা জানিয়েছেন, শিরা-উপশিরায় রক্ত জমাট বাঁধা এবং ফুসফুসে তীব্র সংক্রমণ—করোনার এই দু’টি প্রধান বিপদ কী করে আটকানো সম্ভব, ভাবুক পৃথিবী। সমস্ত ধাঁধার উত্তর হয়তো মিলবে তাতেই।
এদিকে হাসপাতালে করোনাভাইরাস নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, সেখানে উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য রোগীর দ্বিগুণ। আবার যে সব উচ্চরক্ত চাপ সম্পন্ন রোগী ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, তাদের মৃত্যু ঝুঁকি তারও দ্বিগুণ। শুক্রবার এক গবেষণা তথ্যে এ কথা বলা হয়। ইউরোপীয়ান হার্ট জার্নালের এক খবরে বিশেষজ্ঞরা এ কথা জানান।
চীনের জিয়ান-এর শিজিং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ও কার্ডিওওলাজিস্ট ফি লী জানান,‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে,উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের বুঝতে হবে তাদের কোভিড-১৯-এ মৃত্যু ঝুকি অনেক বেশি।’
চীন এবং আয়ারল্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত উহানের হোশেনশান হাসপাতালের ২,০২৭ জন রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, হাসপাতালের ভাইরাস আক্রান্ত শতকরা ৩০ ভাগ, ৮৫০ জন রোগীর হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের এসব রোগীর মধ্যে শতকরা চার ভাগের মৃত্যু হয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে শতকরা ১ ভাগের।