নতুন বাজেট, নতুন গন্তব্য

মাসুম খলিলী | Jun 12, 2020 05:25 am
নতুন বাজেট, নতুন গন্তব্য

নতুন বাজেট, নতুন গন্তব্য - সংগৃহীত

 

এই কলাম লেখার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ বাংলাদেশের নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শেষ করেছেন। যে পরিবেশে তিনি দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাববিবরণী ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন সে পরিবেশ আমাদের চেয়ে প্রবীণ বয়সীদেরও জীবদ্দশায় এসেছে বলে শুনিনি। এ ধরনের এক অবস্থায় বাজেট উপস্থাপন খুব সহজ কাজ নয়। তবে খ্যাতনামা অ্যাকাউন্টেন্টরা যখন অর্থনীতির হাল ধরেন তখন অনেক কঠিন হিসাবও সহজ করে ফেলতে পারেন। এ কারণেই হয়তো এবারের বাজেট প্রস্তুত করাটাও অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় কোনো বিপত্তি সৃষ্টি করেছে বলে শোনা যায়নি।

বাংলাদেশ শুধু নয়, বলা যায় পুরো পৃথিবী যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে মানুষ এবং মানব সভ্যতাই যেন এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তি , যাদের জন্য বিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোনো বিষয় নয় তারা যথাযথ চিকিৎসা আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য অক্সিজেন সংযোগ তথা ভেন্টিলেটরের অভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটছে। জীবন-জীবিকার গতি, অর্থনীতির লেনদেন সবই এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। ধনী-নির্ধন সবাই যেন এক কাতারে এসে সমস্যার মোকাবেলা করছে।

বিশ্ব বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়বাণিজ্য শিক্ষা-দীক্ষা খেলাধুলা পর্যটন বিনোদন কোনো কিছুরই আর স্বাভাবিক সচলতা নেই অতিশয় ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাসটির আসলেই ধ্বংসকরী ক্ষমতা বা প্রকৃতি কী সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা গবেষকরা একেক দিন একেক কথা বলছেন কোভিট-১৯ সম্পর্কে। বলা হচ্ছে, ভাইরাসটি শতবার নিজেকে রূপান্তর করে আরো ধ্বংসাত্মক হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে ভাইরাসটির মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে আসছে। একবার বলা হচ্ছে, উপসর্গহীন ভাইরাস বহনকারীরা সবচেয়ে বেশি রোগ ছড়াচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে এ ধরনের লোকদের মাধ্যমে তেমন একটা সংক্রমণ বিস্তারের সম্ভাবনা নেই। শত শত দেশ ও প্রতিষ্ঠান এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য কাজ করার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো ওষুধ আবিষ্কারের কথা শোনা যাচ্ছে না। আবিষ্কারের আগেই কত ভ্যাকসিন কোন দেশ কিনে নেবে তা নিয়ে আবার নানা সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো বৈশ্বিক এই চ্যালেঞ্জের সময়টিতে বাংলাদেশ আসলে ঠিক কোথায় এখন দাঁড়িয়ে আছে? বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, সিপিডিসহ দেশের থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সমীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে অনিশ্চিত এক অবস্থার দিকে যাচ্ছে তা তুলে ধরতে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে দিনমজুর হতদরিদ্র থেকে শুরু করে বড় মাপের শিল্পপতি পর্যন্ত সবাই নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উদ্যোক্তারা দেশ-বিদেশের বাজার হারাচ্ছেন। শিল্প কারখানা সঙ্কুচিত করতে বাধ্য হচ্ছেন। চাকরি বা কাজ হারিয়ে মধ্যবিত্তরা দরিদ্র, দরিদ্ররা হতদরিদ্র আর হতদরিদ্ররা অনাহারীদের দলে ঢুকে পড়ছেন। গবেষক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেউ দেখাচ্ছেন ৫ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় ঢুকে পড়েছেন, কেউবা বলছেন ৮০ ভাগ পরিবারের আয় কমে গেছে, কেউ বলছেন ৪০ ভাগ মানুষ চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন অথবা হারাতে চলেছেন।

প্রশ্ন হলো তাহলে আমরা কোথায় কিভাবে কোন গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেছি? এই যাত্রার পরিণতিইবা কী হবে? সৃষ্ট সঙ্কটে দেশের মানুষকে প্রকৃতপক্ষে কী কী মৌলিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে? এক্ষেত্রে দেশের মানুষ আর সরকারের কী করণীয় রয়েছে? বাজেটে যে সব ব্যবস্থা থাকছে তা সঙ্কট নিরসনে কি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে অথবা কী করার অবকাশ সরকারের রয়েছে?

বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট সব সময় যে কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবারের বাজেটেও তার কোনো ব্যতিক্রম আসলেই হয়নি। রাষ্ট্রের রাজস্ব প্রশাসন আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে কত টাকার প্রয়োজন তার একটি হিসাব করে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকার একটি ব্যয়বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। সেই ব্যয়ের টাকা কিভাবে সংস্থান করা হবে তার একটি হিসাবও দাঁড় করিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়া হয়েছে কোন খাত থেকে কত টাকা রাজস্ব আয় হবে। ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার এই রাজস্ব আয়ের জন্যও কোনো মৌলিক সংস্কার উদ্যোগ নেই। কেবল প্রক্রিয়াগত কিছু সহজতা আনার চেষ্টার কথা বলা হয়েছে। ফলে এবারের পরিস্থিতি যতই ভিন্ন হোক না কেন বাজেটের সম্পদ কাজে লাগানো অথবা সম্পদ সংগ্রহ কোনো ক্ষেত্রে গুণগত বা রেডিক্যাল কোনো ফল আশা করার মতো উপকরণ বাজেট প্রস্তাবে রাখা যায়নি। মূলত অর্থ সংস্থানের যে যে খাত থেকে যতটা অর্থের প্রাপ্তি ঘটতে পারে সেই খাতে সেই অঙ্ক বসিয়ে বাকি অর্থ বিদেশ থেকে এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার হিসাব করা হয়েছে। আয় ও ব্যয়ের কাঠামোগুলোতে বড় রকমের কোনো পরিবর্তন আসেনি বা আনার জন্য কোনো প্রস্তুতি বা কাজও হয়নি। বিভিন্ন খাত উপখাতে গতানুগতিকভাবে যে সম্পদ বরাদ্দের অনুপাত থাকে অনেকটা সে রকমটাই রয়েছে এবারের বাজেটে। কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাত সামাজিক নিরাপত্তা আর সুদ ভর্তুকিতে খরচের অঙ্কটা বাড়ানো হয়েছে। খরচের হিসাবের সাথে তাল মিলিয়ে আয় বৃদ্ধি দেখানো সম্ভব না হওয়ায় ঘাটতি জিপিডির ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে রেকর্ড ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

কোভিড চলমান বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ চারটি। প্রথমত. কোভিডের সংক্রমণে মৃত্যু ও স্বাস্থ্যগত বিপত্তি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। স্বাস্থ্যসেবাকে যতটা সম্ভব সহজলভ্য করে তোলা। কোভিডের জরুরি সেবার পাশাপাশি বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা যে ভেঙে পড়েছে সেটাকে সচল করা। দ্বিতীয়ত. বড় বড় কর্মসংস্থানকারী ক্ষেত্রগুলোকে সচল রাখা। বিশেষত পোশাক খাতের মতো শ্রমঘন শিল্পগুলোর ব্যাপকভাবে বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি যতটা সম্ভব প্রতিরোধ করা। তৃতীয়ত. রাষ্ট্রের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকতার দিকে নিয়ে আসা। চতুর্থত. এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান হারানোদের জন্য বিকল্প ক্ষেত্র সৃষ্টি করা।

প্রথমে উক্ত স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে বিদ্যমান অবকাঠামো রয়েছে তার বাইরে বড় কিছু করার অবকাশ থাকে না। তবে কিছু নীতিগত সহায়তা দিয়ে বেসরকারি খাতকে কোভিড স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করার অবকাশ রয়েছে। বিভিন্ন দেশে জরুরিভাবে কোভিডের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সংবলিত বিশেষ হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। বিশেষত করোনা পরীক্ষা ও ভেন্টিলেটর সুবিধা বিস্তৃৃত করার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকার দেশের বিদ্যমান সামরিক বেসামরিক সরকারি হাসপাতালগুলোতে এর জন্য বিশেষ সেবা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনেকে প্রাথমিকভাবে এতে সাড়া দিলেও অজ্ঞাত এক কারণে তা বাস্তবে কার্যকর হতে দেখা যায়নি। বাজেটে এ নিয়ে বিশেষ কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। দ্বিতীয়ত. বাংলাদেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থানকারী খাত হলো পোশাক শিল্প। এই শিল্পের উদ্যোক্তা সংস্থার নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। এই শিল্পের সাথে প্রায় ৮০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। এই শিল্পের সুরক্ষার জন্য অব্যাহত কার্যাদেশ বা বাজারসুবিধা আর বৈরী অবস্থায় প্রয়োজনীয় প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হয়। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার শেষের কাজ অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এর কার্যাদেশ না থাকলে বা বাজার নিশ্চিত করা না গেলে শুধু প্রণোদনা দিয়ে কোনোভাবে পোশাক শিল্প টিকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বাজেটে পোশাক খাতের জন্য কম-বেশি প্রণোদনা থাকছে কিন্তু বাজার নিশ্চিত করাটা সরকারের বৃহত্তর পররাষ্ট্র কৌশল এবং রফতানি বাজারগুলোর কোভিড সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠার সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে এ দিকটার ওপর খুব একটা আলোচনা নেই।

অর্থনীতিতে স্বাভাবিকতা আনার জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তবে লকডাউন তুলে নেয়ার সাথে সাথে সংক্রমণ হারও বেড়ে গেছে। ফলে হিসাব-নিকাশ করেই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে এক্ষেত্রে। চতুর্থত. বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তাৎক্ষণিক ক্ষেত্র রয়েছে দু’টি। একটি হলো সড়ক জনপথ ও গ্রামীণ অবকাঠামোগত ছোটখাটো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বিপুল বরাদ্দ রাখা এবং জরুরিভাবে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকার হলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। এটি করতে গিয়ে ছোটখাটো উন্নয়ন প্রকল্প এবং রক্ষণাবেক্ষণের বাজেট মেগা প্রকল্পে চলে গেছে। নতুন বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ করার সুযোগ নেই। এসব প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে তা শেষ করতে হবে। তবে মেগা প্রকল্পের মেট্রো রেলের নতুন রুটের কাজের মতো যে সব কাজের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি তা এ বছরের বাজেটে না নিয়ে সেই অর্থ ক্ষুদ্র উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানান্তর করতে হবে কর্মসংস্থানের স্বার্থে। দ্বিতীয় ব্যবস্থাটি নেয়া যেতে পারে খামার ও প্রকৃত খাতে। এই ক্ষেত্রে দু’টি লক্ষ্য থাকতে পারে। একটি হলো আমদানি করা ফলমূলের স্থানীয় আবাদের ব্যবস্থা করা; যেমন দেশের অনেক অঞ্চলে এখন কমলা মাল্টা ও বিদেশী খেজুরের আবাদ হচ্ছে। এর ব্যাপক স্থানীয় বাজার রয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা দিলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে এখানে। স্ট্রবেরি বা ড্রাগনের মতো যেসব ফলের বিশ্ববাজার রয়েছে সেসব উচ্চমূল্য সংযোজনকারী ফলের আবাদে সহায়তা করা যায়।

বাংলাদেশে খামার ও প্রকৃত খাতে এক সময় ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছিল। এ সময় পোলট্রি ডেইরি ও ফিশিং উদ্যোগগুলো দেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো উপকরণ ও খাবারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওযায় এক পর্যায়ে তা আর লাভজনক থাকে না। এসব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী উপকরণের যে ধরনের গবেষণা হওয়া উচিত সেটি দেখা যায় না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ব্যাপারে কী উদ্যোগ নেয়া যায়
সেটি দেখতে হবে। মাছ ও পোলট্রি শিল্পের খাবারের মূল্য কিভাবে কমানো যায় এবং এর উৎপাদন ও বাজারের সাথে কিভাবে সংযোগটি কার্যকরভাবে করা যায় সেটি দেখা প্রয়োজন। এটি কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এখন দেশ-বিদেশে অর্গানিক পণ্য বা খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এ জন্য জৈব সার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ও বাজারের যোগসূত্র সৃষ্টি করা সম্ভব না হওয়ায় সেটিকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে নতুন পরিস্থিতিতে। শুধু সরকার নয়, বেসরকারি এনজিওগুলোও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থান করোনা উত্তর সময়ের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের চাহিদায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে কর্মবর্ধমান ১০ চাহিদাক্ষেত্র উল্লেখ করেছে। আর ১০টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে যে সব খাতের চাহিদা কমে যাবে। জীবিকা নির্বাহের জন্য একজন ব্যক্তির ক্ষমতা পরিবর্তন হচ্ছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হ্রাস পাচ্ছে। দেশ-বিদেশে অটোমেশনের প্রভাব সমস্ত সংস্থার প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো নতুনভাবে ঠিক করছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অব জবস ২০১৮-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অটোমেশনের কারণে মানুষের শ্রমদান ৭১ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশে নেমে আসবে। মেশিন ও অ্যালগরিদমগুলো নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে তাদের অবদানকে গড়ে ৫৭ শতাংশ বাড়িয়ে তুলবে।
প্রায় ৫০ ভাগ সংস্থা আশা করে যে ২০২২ সালের মধ্যে অটোমেশনে পূর্ণ-সময়ের কর্মী হ্রাস পাবে। ভোক্তাপণ্য শিল্প অন্যান্য শিল্পের তুলনায় দ্রুত এবং এর প্রভাব বেশি অনুভব করছে। তবে মানব দক্ষতার চাহিদা এতে কমছে না। মানবিক দক্ষতার পাশাপাশি স্বতন্ত্রভাবে মানবিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত চাকরিগুলোর এখনো চাহিদা রয়েছে।

ফিউচার অব জবসের প্রতিবেদন অনুসারে, মানুষ, মেশিন ও অ্যালগরিদমের মধ্যে শ্রম বিভাগের পরিবর্তন বদলে ৭৫ মিলিয়ন বর্তমান চাকরি থাকবে না, তবে ১৩৩ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। এ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগটি গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে।

এবারের বাজেটের একটি বিশেষ দিক হলো এর প্রণোদনা ও বাস্তবায়ন বড়ভাবে ব্যাংকনির্ভর হয়ে গেছে। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নানাভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখান থেকে বিপুল তহবিল বের করে বিদেশে নিয়ে গেছে। ফলে প্রতিটা ব্যাংকই এখন আর্থিক ও সুশাসন সঙ্কটে রয়েছে। সরকারের প্রণোদনার কোনো সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা ছাড় দেয়ার পরও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। মাফিয়া নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংক খাত কোনোভাবে বাজেট বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।

করোনা চলমান ও পরবর্তী সময় বাংলাদেশের জন্য এক অস্বাভাবিক অবস্থা। এ সময় অতিক্রম কেবল সরকারের একক প্রচেষ্টায় সম্ভব হবে না। যদিও সরকারের নীতিগত পদক্ষেপ এবং কার্যক্রম পরিস্থিতি উত্তরণে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এর পাশাপাশি সার্বিকভাবে পুরো দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে নিতে হবে। রেজিমেন্টেড ধরনের পরিস্থিতি সারা দেশ ও দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অনুকূল নয়। সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য উদার এক পরিবেশ সরকারকে সৃষ্টি করতেই হবে। তা না হলে অনিশ্চিত অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া বেশ কঠিন হতে পারে।

mrkmmb@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us