চীন-ভারত উত্তেজনা : এর পর কী?
চীন-ভারত উত্তেজনা : এর পর কী? - সংগৃহীত
হিমালয় রণাঙ্গনে চীনা ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যকার উত্তেজনাকর মুখোমুখি অবস্থান উচ্চ পর্যায়েল সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার পরও অব্যাহত থাকবে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বুধবার বলেছেন, বেইজিং পরিস্থিতি সমাধানের জন্য নয়া দিল্লির সাথে ইতিবাচক সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। আর ভারত রোববার বলেছে, দুই দেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে সম্মত হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি এত দ্রুত হবে না।
তারা বলেন, মনে রাখতে হবে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) হিসেবে পরিচিত ৩,৪৮৮ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা নিয়ে ছয় দশক ধরে বিরোধ রয়েছে। ফলে উভয় পক্ষ একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখবে।
গত সপ্তাহের আলোচনার ফলাফল কী?
গত শুক্রবার ভিডিও সম্মেলনের পর শনিবার চশুল মল্ডোতে উভয় পক্ষের শীর্ষ জেনারেলরা এলএসির লাদাখের পূর্ব অংশে মিলিত হন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চার ঘণ্টার আলোচনা সৌহার্দ্য ও ইতিবাচকভাবে হয়েছে। আর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হুয়া বলেন, দুই দেশ তাদের মতপার্থক্যকে বিরোধে পরিণত হতে দেবে না। তিনি সীমান্ত পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণাধীন বলে জানান।
মঙ্গলবার নাগাদ ফাঁস হওয়া মিডিয়া তথ্যের মাধ্যমে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট ইঙ্গিত দেয় যে এলএসিজুড়ে অবস্থা ভালো। দুই দেশ সৈন্য প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুই পক্ষ বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্থানীয় সামরিক পর্যায়ে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখবে।
অবশ্য, ভারতীয় কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এসব বিবৃতি নিশ্চিত করেননি, আর চীনা কর্মকর্তারা নীরবই রয়েছেন।
চীন ২০১৭ সালের দোকলাম সঙ্কটের পর থেকে ভারতের সাথে স্থিতিশীল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুবার অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে বসেছেন। তারা উভয়ে মতপার্থক্যকে মতবিরোধে পরিণত হতে না দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের চায়না প্রগ্রামের পরিচালক ইয়ুন সান বলেছেন, উভয় পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস আর বৈরিতা বিরাজ করছে, আর এর পেছনে রয়েছে উভয় দেশের আঞ্চলিক আধিপত্যের উচ্চাভিলাষ ও সম্ভাবনা।
তিনি বলেন, তাদের দীর্ঘস্থায়ী সঙ্ঘাত নিরসনের প্রয়াসের ফলে আরো আপসের ব্যবস্থা করতে পারে। তবে তা পরাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ঘরোয়া লোকরঞ্জকবাদে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
বস্তুত, উভয় পক্ষই জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগকে উস্কে দিয়ে বর্তমান বিরোধের জনমতকে প্রভাবিত করতে চায়। ২০১৭ সালের অচলাবস্থার সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল।
ভারতের সংবাদ চ্যানেলগুলো ইতোমধ্যেই যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনকে ‘হুঁশিয়ার’ করে দিয়ে দাবি করেছে এবং দাবি করেছে যে চীনা সৈন্যরা যুদ্ধ করতে আগ্রহী নয়।
ভারতের কিছু মিডিয়ায় প্রকাশিত তিব্বতি প্রবাসী সরকারের ভাষ্যে বলা হয় যে সেন্ট্রাল তিব্বতিয়ান অথোরিটির প্রেসিডেন্ট ড. লোবস্যাঙ স্যানগে চীনা আগ্রাসনের তীব্র সমালেচানা করেছেন এবং একে চীনের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার প্রয়াস হিসেবে অভিহিত করেছেন।
চীনা মিডিয়ায় তাদের সৈন্য বাহিনীর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এলএসিতে সমাবেশের খবর প্রকাশ করেছে। এর প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন যে তাদের দেশে কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে এর পরিণাম হবে কঠিন।
ভূরাজনৈতিক উপাদান
নয়া দিল্লির জওহেরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির চীন ও চায়না স্টাডিজের অধ্যাপক বি আর দিপক বলেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারত ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারিত হবে। বাণিজ্য, করোনাভাইরাস ইত্যাদির মতো ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আবার ভারত মহাসাগরে চীনা শক্তির সম্প্রসারণে উদ্বিগ্ন ভারত। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আরো ঘনিষ্ঠ হতে চায় ভারত।
তিনি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান স্নায়ুযুদ্ধ অব্যাহত থাকতে পারে।
এর পর কী হবে?
দিপকের মতো বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান বিরোধ সম্ভবত অব্যাহত থাকবে এবং বাড়বে। কারণ চীন সম্ভবত তার আগুয়ান অবস্থান থেকে তাড়াহুড়া করে সরে যাবে না।
দিপক বলেন, চীন এখন সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। ফলে ভারতের কাছ থেকে ছাড় না পেলে তারা সেখান থেকে প্রত্যহার করবে না।
সূত্র জানায়, উভয় পক্ষ দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে। একদিকে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হবে, অন্যদিকে এলএসিতে স্থানীয় পর্যায়ের সম্পৃক্ততাও থাকবে।
এসসিএমপি