সুন্দর জীবনযাপনের জন্য রাসুলের (সা.) ১০ নির্দেশনা
সুন্দর জীবনযাপনের জন্য রাসুলের (সা.) ১০ নির্দেশনা - সংগৃহীত
ইসলাম মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক মহান জীবনাদর্শ। এতে রয়েছে মানবজীবনের সব দিকনির্দেশনা। এই নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে মানবজাতি যে তার কাক্সিক্ষত পথ খুঁজে পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা ইসলাম এসেছে সর্বময় প্রজ্ঞার অধিকারী মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। আর তার বাস্তব প্রয়োগ শিখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সা:। এই বিস্ময়কর মহানাদর্শের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা চিন্তাশীল মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. অহঙ্কার না করা। অহঙ্কার ইসলামে মহাপাপ। অহঙ্কারী ব্যক্তির ঠিকানা হবে জাহান্নাম। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ ( এ কথা শুনে ) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, মানুষতো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, ( তাহলে সেটাও কি অহঙ্কারের মধ্যে গণ্য হবে?) রাসূল বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহঙ্কার হচ্ছে, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা। (মুসলিম, ইফা-১৬৭)
২. মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছে ইসলাম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা মূর্তিরূপ অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো এবং মিথ্যা কথা হতে দূরে থাকো।’ (সূরা হাজ্জ-৩০) রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ নির্দেশ করে।’ ( বুখারি ও মুসলিম)
৩. ইসলাম পরস্পরকে ক্ষমা করতে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেছেন : তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিন? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নুর-২২) এক ব্যক্তি রাসূল সা:-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল সা: আমরা দাস-দাসীকে কতবার ক্ষমা করব? এ কথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। অতঃপর লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক দিন তাকে সত্তরবার ক্ষমা করো।’(আবু দাউদ-৫১৬৪)
৪. ইসলাম গালাগালি করতে নিষেধ করেছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং তার সাথে ঝগড়া করা কুফরি। (বুখারি ও মুসলিম)
৫. ইসলাম প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে। মহানবী সা: বলেছেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি হে আল্লাহর রাসূল সা:? তিনি বললেন : যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না। (বুখারি ও মুসলিম)
৬. ইসলাম মানুষকে সমাজসেবী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মহানবী সা: বলেছেন : সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। (জামে-৩২৮৯)। তিনি আরো বলেন : ফরজ আমলগুলোর পর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হল মুসলিমের মনে আনন্দ ভরে দেয়া।
৭. নিরুপায় বা বাধ্য হলে ইসলামে হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : আল্লাহ যা কিছু তোমাদের ওপর হারাম করেছেন তা হচ্ছে, মৃতদেহ, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যে প্রাণীর ওপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে। তবে যদি কেউ আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা পোষণ না করে অথবা প্রয়োজনের সীমা না ছাড়িয়ে ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে এসব খেয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ( নাহল, ১১৫)
৮. অত্যাচারকে ইসলামে নিষিদ্ধ করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না। পরকালে তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন কঠিন শাস্তি। আল্লাহ তায়ালা বলেন : যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তিনি তাদের প্রতিদান পুরোপুরিভাবে দেবেন। বস্তুত, আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারীদের ভালোবাসেন না। (আলে ইমরান-৫৭) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে আমার বান্দাহরা, আমি নিজের উপর জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তা হারাম করছি। সুতরাং তোমরা একে অন্যের প্রতি জুলুম করো না। (মুসলিম-২৫৭৭)
৯. ইসলাম অঙ্গীকার পালনে আদেশ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : তোমরা অঙ্গীকার পালন করো, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে। (বনি ইসরাঈল-৩৪) অঙ্গীকার বা চুক্তি পালন না করা মুনাফিকের লক্ষণ। মুসলিমের মাঝে সে দোষ থাকতে পারে না। এমনকি শত্রুপক্ষের সাথেও যে চুক্তি করা হয় তা পালনীয়।
১০. ইসলাম আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি মুসলিম)। রাসূল সা: আরো বলেন : আত্মীয়তার বন্ধন (আল্লাহর) আরশে ঝুলানো আছে, সে (আত্মীয়তার বন্ধন) বলে, যে ব্যক্তি আমাকে (আত্মীয়তার বন্ধন) বজায় রাখবে, সে ব্যক্তির সাথে আল্লাহ সম্পর্ক বজায় রাখবেন এবং যে ব্যক্তি আমাকে (আত্মীয়তার বন্ধন) ছিন্ন করবে, সে ব্যক্তির সাথে আল্লাহও সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।’ (বুখারি, ৫৯৮৯)
লেখক: হেড অব ডিপার্টমেন্ট, মানার এডুকেশন কমপ্লেক্স, ঢাকা