করোনার উৎপত্তি : ধরা খাচ্ছে চীন?
করোনার উৎপত্তি : ধরা খাচ্ছে চীন? - সংগৃহীত
ডিসেম্বরে নয়, বরং আগস্ট মাসেই করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল চীনে। হারভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, বোস্টন ইউনিভার্সিটি অফ পাবলিক হেলথ এবং বোস্টন শিশু হাসপাতালের গবেষকরা এক নতুন গবেষণায় বলেছেন পার্কিং লটের উপগ্রহ চিত্র এবং সার্চ ইঞ্জিনে রোগ সংক্রান্ত সার্চ দেখে মনে হচ্ছে গত বছর অগাস্ট মাস থেকেই উহানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি সত্য হয়ে থাকলে তা চীনের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। তখন প্রমাণিত হবে, চীন মিথ্যা কথা বলছিল, আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই সত্য বলেছিলেন।
গবেষণায় কী বলা হয়েছে?
গবেষকরা বলেছেন তারা হাসপাতালের রোগী বৃদ্ধি এবং রোগ সংক্রান্ত সার্চের পরিমাণ ২০১৯-এর গ্রীষ্মের শেষ থেকে বেড়েছে বলে দেখেছেন, যাতে মনে হতে পারে হুনানের বাজারে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরুর আগে থেকেই ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ইঙ্গিত মিলছে যে হডিসেম্বরের শেষে যখন এই ভাইরাস চিহ্নিত হচ্ছে ততদিনে দক্ষিণ চীন থেকে শুরু হওয়া এই সংক্রমণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে গবেষণায় বলা হয়েছে কাশির মতো শ্বাসজনিত উপসর্গ ইনফ্লুয়েঞ্জার বার্ষিক মরশুমের সঙ্গে যুক্ত হলেও এই সময়কালের সার্চে যুক্ত হয়েছে ডায়েরিয়াও, যা কোভিড-১৯ জনিত উপসর্গ।
এই গবেষণায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি ৯ থেকে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উহানের ১১১টি উপগ্রহ চিত্র সংগ্রহ করা হয়ছে যা ১৪০টি হাসপাতালের পার্কিং লটের দৈনিক ছবি দিচ্ছে। এই বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ থেকে ২০২০-র মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি বেড়েথে এবং ২০১৮ সালের অগাস্ট মাস থেকে এই বৃদ্ধির হার অতীব বেশি। একই সঙ্গে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে পাঁচ ছটি হাসপাতালে যখন ভিড় সবথেকে বেশি হচ্ছে ওই সময়কালেই সার্চ ইঞ্জিনে ডায়েরিয়া ও কাশি নিয়ে সার্চের পরিমাণ বেড়েছে।
হোম কোয়ারান্টিনের সেরা অভ্যাস
ডায়েরিয়া সার্চ বাড়তে থেকেছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে, বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা মরশিম বলে এই সময়ে কাশি নিয়ে সার্চের সঙ্গে তা মিলে গিয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চয়তা পাওয়ার তিন সপ্তাহ আগে এই সার্চ ব্যাপক হারে বাড়ে। ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তে জনস্বাস্থ্যে লকডাউনের পর হাসপাতালের ভিড় ও সার্চ উভয়েই ভাটা পড়ে।
এর অর্থ কী?
গবেষকরা বলছেন, হাসপাতালের ট্রাফিক বৃদ্ধি ও সার্চের ব্যাপকতা থেকে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে, তবে তাঁরা বলছেন হুনানের সামুদ্রিক খাদ্যের বাজারে চিহ্নিত হওয়ার আগে থেকেই যে এ রোগ ছড়াচ্ছে, তার কিছু বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ মিলছে।
গবেষকরা উহান ইউনিয়ন হাসপাতাল ও উহান টোংজি মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণার উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট একটা সাধারণ উপসর্গ এবং একটা বড় সংখ্যক রোগী হজমের গণ্ডগোলে ভোগেন, সামাজিক সংক্রমণে ডায়েরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তর্ক দানা বেঁধেছে। তিন সপ্তাহ আগে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে নিরপেক্ষ গবেষণায় সম্মতি দিয়েছে চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতিমারী বিষয়ে হুয়ের ভূমিকা চীন কেন্দ্রিক বলে আখ্যা দেন এবং বারবার অভিযোগ করেন এই রোগের প্রকোপের ভয়াবহতা চীন যেভাবে কম করে দেখিয়েছিল, তাকে সমর্থন করে এসেছে এই সংস্থা।
ট্রাম্প এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেও দাবি করেছেন এই ভাইরাসের উৎপত্তি হুবেই প্রদেশের উহান ইনস্টিট্যুট অফ ভাইরোলজিতে। চীন এ সম্পর্কিত সমস্ত অভিযোগ কলঙ্কলেপনের চেষ্টা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এপ্রিলের শেষে ভাইরোলজি ল্যাবের প্রধান সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেন ল্যাবরেটরিতে এ ভাইরাসের উৎপত্তি এরকম দাবির কোনো ভিত্তি নেই, তবে একই সঙ্গে তিনি এ রোগের শুরু কী থেকে এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান।
আরো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, গত ৪ জুন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্টে বলা হয় ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স শেয়ার করার ব্যাপারে দেরি করেছে চীন।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীন নিউমোনিয়ার একটি ধরনের কথা হুয়ের কাছে জানায় এবং ১১ মার্চ হু একে অতিমারী বলে ঘোষণা করে। এই ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবেই উৎপত্তি হয়েছে বলে বৈজ্ঞানিকরা সহমত। হু তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে কোভিড-১৯ যে কোনো পশুর থেকে এসেছে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা মেলেনি। কেউ কেউ বলেছেন সবচেয়ে বেশি চোরাচালান করা হয় যে স্তন্যপায়ী, সেই প্যাঙ্গোলিন থেকে এর উৎপত্তি, কেউ বলেছেন বাদুড়ের থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। এ ব্যাপারে গবেষণা চলছে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস