আফগানিস্তানে তালেবান-পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি : কী করবে ভারত
আফগানিস্তানে তালেবান-পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি : কী করবে ভারত - সংগৃহীত
গত সপ্তাহে দি হিন্দু পত্রিকায় আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জমির কবুলভ মন্তব্য করেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি যে তালেবানের সাথে সব ধরনের সম্পৃক্ততা এড়িয়ে যাওয়ার নয়া দিল্লির নীতির কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে, বিশেষ করে আসন্ন আন্তঃআফগান আলোচনা ও আফগানিস্তানে প্রভাবশালী বৈধ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তালেবান আন্দোলনের অনিবার্য রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে।
তালেবানের আলোচনা করাটা আফগানিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত সব শক্তির কাছে এক মাত্রায় ছিল না কখনোই। অদূর ভবিষ্যতে গ্রুপটি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মূল খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা নিশ্চিত হওয়ার কারণেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তাদের অবস্থানের আলোকে তালেবানের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নির্ধারণ করার চেষ্টা করবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হওয়ায় ভারত এখন তালেবানের সাথে সম্পৃক্ত হবে কিনা সে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে আরো জোরালোভাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে নতুন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রেক্ষঅপটে আফগানিস্তানের ব্যাপারে ভারতকে নতুন করে ভাবতে হবে। ভারতের জন্য আফগানিস্তান হবে নতুন বিষয়।
লাল রেখা কি আর থাকবে?
একসময় তালেবানের ওপর অনেক শর্ত আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যেমন আল-কায়েদার নিন্দা করা, অস্ত্র সমর্পণ, আফগান সংবিধান মেনে নেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তারা অনেক নমনীয় হয়েছে। শান্তি চুক্তিতে আল-কায়েদার নিন্দার পাশাপাশি আন্তঃআফগান আলোচনার কথা বলা হয়েছে। আসলে যুক্তরাষ্ট্র তার পরাজয়কে ন্যূনতম করার লক্ষ্যেই এসব শর্ত যোগ করেছে। কাবুল সরকার প্রথমে এই চুক্তির প্রতি বৈরী মনোভাব প্রদর্শন করলেও এখন তারা সবকিছু মেনে নিয়েছে।
চুক্তিটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সমর্থনও পেয়েছে। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কে কুমারনকে পাঠিয়ে চুক্তির প্রতি ভারতের সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেছেন, আফগান নেতৃত্বাধীন, আপগান মালিকানাধীন ও আফগান নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক নিষ্পত্তির প্রতিটি সুযোগের প্রতি ভারত সমর্থন দেবে। তবে আফগান সরকারকে বাদ দিয়ে তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি সইয়ের ফলে অনেক সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায় মনে করে, এই চুক্তিতে আফগানিস্তানে ভারতকে খুবই কঠিন অবস্থায় ফেলা হয়েছে এবং পাকিস্তানকে খুবই সুবিধাজনক অবস্থায় আনা হয়েছে। ফলে আফগানিস্তান ভারতের সম্পৃক্ততা ও তালেবানের সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
ভারত কি নতুন বাস্তবতা মেনে নিয়েছে?
আফগানিস্তানের বেসামরিক নির্মাণ কার্যক্রমে অন্যতম বৃহত্তম অবদান রয়েছে ভারতের। তবে বেশির ভাগ কার্যক্রম কাবুলের আশপাশে ও মার্কিন উপস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত। এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যহার করে নেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকায় আফগানিস্তানে ভারত তার অবস্থান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়বে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিবেশে ভারতকে তার আফনিস্তান নীতি বদলাতে হবে, তালেবানের সাথে চলমান শান্তি আলোচনায় সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে।
চলমান পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তালেবানকে কিভাবে দেখবে ভারত? ভারতের সরকারি বিবৃতিগুলোতে এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে তারা তালেবানকে এখনো ভবিষ্যতের আফগান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পক্ষ মনে করে না।
অবশ্য আফগানিস্তানের ব্যাপারে ভারতের নীতি অনেকটাই পাকিস্তানকে ঘিরে আবর্তিত হবে। আবার আফগানিস্তানে ভারতের কোনো ধরনের নিরাপত্তাগত ভূমিকা কাম্য নয় পাকিস্তানের। তাদের মতে, আফগানিস্তানে ভারতের অবস্থান তাদের জন্য ক্ষতিকর।
আবার ভারতও পাকিস্তানের ভূমিকা বৃদ্ধিকে ভালোভাবে দেখছে না। তাদেবানের সাথে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। আবার আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের বিবৃতিতে তালেবানের প্রসঙ্গ তারা সতর্কভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এমনকি রাশিয়া, চীন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আফগানিস্তানে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠালেও তালেবানের সাথে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে অস্বীকার করে আসছে ভারত। ভারত দৃশ্যত অনড় অবস্থানে থেকে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই আখ্যায়িত করছে।
নতুন ভূমিকার অনুসন্ধান
তবে অনেকে মনে করছে, আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতি সুরক্ষিত রাখতে তালেবানের কাছ থেকে নিশ্চয়তা প্রয়োজন ভারতের এবং এ কারণে তারা তাদের সাথে গোপনে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। তালেবান যদি ভারতকে আশ্বাস দেয়, তবে দিল্লি বিষয়টি প্রকাশ করতে পারে। তবে যাই হোক, তালেবানের ব্যাপারে ভারতকে নতুন করে ভাবতে হবে। আফগানিস্তানে ভারতের অবস্থান সুরক্ষিত করতে ও তা বিকশিত করতে নতুন করেই পরিকল্পনা করতে হবে তাকে।
দি ডিপ্লোম্যাট