করোনাভাইরাসের ঝুঁকি : যা করতে পারেন
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি : যা করতে পারেন - সংগৃহীত
যদি আপনি উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে থাকেন-
যদি আপনার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চমাত্রার ঝুঁকি থাকে তাহলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে বলে দেবে আপনাকে বিশেষ কী করতে হবে।
এই স্তরে আপনি আপনার জেনারেল প্র্যাকটিশনার অথবা স্বাস্থ্যসেবা টিমের সাথে যোগাযোগ করবেন না। সরাসরি আইইডিসিআরের পরামর্শ নেবেন। দেশে করোনা আক্রান্ত নিশ্চিত হওয়ার জন্য একমাত্র পরীক্ষাগার আইইডিসিআর।
আপনি আইইডিসিআরের ফোনে যোগাযোগ করুন-
০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫
কে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন
আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন যদি আপনার নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থাকে :
যদি আপনার অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়ে থাকে এবং আপনি ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন।
যদি আপনার কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি চলতে থাকে।
যদি আপনার রক্তের বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার থাকে, যেমন লিউকোমিয়া।
যদি আপনার বুকের মারাত্মক সমস্যা থাকে, যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা তীব্র অ্যাজমা।
যদি আপনার অন্য কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।
কিভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায় : যেহেতু এটি একটি নতুন রোগ তাই এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে এটা জানা যায়নি করোনাভাইরাস একজনের কাছ থেকে আরেকজনের মধ্যে কিভাবে ছড়ায়। তবে এ ধরনের ভাইরাসগুলো কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।
ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ানো : ভাইরাসটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে প্রধানত সংক্রমিত হয়-
যদি একজন ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তির খুব কাছে বসে (প্রায় ৬ ফুটের মধ্যে)
যদি সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তির পাশে কাশি দেয় বা হাঁচি দেয়
কাশি বা হাঁচির কণা কাছাকাছি অবস্থান করা ব্যক্তির মুখে অথবা নাকে লাগে এবং নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে ঢুকে যায়।
অসুস্থ না হয়েও কি কেউ ভাইরাস ছড়াতে পারে : কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সংক্রামক চিন্তা করা হয়।
উপসর্গ দেখা দেয়ার আগেও সংক্রমিত ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াতে পারে।
দূষিত কোনো কিছুর উপরের স্তর বা দূষিত বস্তুর সংস্পর্শ থেকে সংক্রমণ
কোনো ব্যক্তি ভাইরাস দ্বারা দূষিত কোনো টেবিল, চেয়ার, বই-পত্র বা বিছানা স্পর্শ করলে কিংবা ভাইরাস দ্বারা দূষিত যে কোনো বস্তু স্পর্শ করলে এবং সেই হাত দিয়ে নিজের মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে ওই ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে পারেন।
জনসমাজে বিস্তৃতি : একটি এলাকায় ভাইরাসটি ঢুকলে এবং সেখানকার লোকজন সতর্ক না হলে ওই এলাকার বিপুল লোকজন ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন।
কী উপসর্গ প্রকাশ পায় : ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
জ্বর; কাশি; ছোট ছোট শ্বাস নেয়া অথবা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া; অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
ক্লান্তি, শরীর ব্যথা; সর্দি; গলাব্যথা।
কোভিড-১৯-এর উপসর্গ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে। কিছু ব্যক্তির কোনো উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। যেসব ব্যক্তি বয়স্ক কিংবা যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে যেমন হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখ কিংবা ডায়াবেটিস- তারা করোনায় আক্রান্ত হলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা : এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিশেষ চিকিৎসা নেই। অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজে আসে না, কারণ তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। চিকিৎসার লক্ষ্য হলো উপসর্গ কমানো। আপনাকে অন্যান্য লোকজনের কাছ থেকে দূরে, আইসোলেশনে থাকতে হবে।
তবে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে করোনাভাইরাসের জন্য ম্যালিরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন ফসফেটের অ্যান্টিভাইরাল ভূমিকাকে কাজে লাগিয়ে ওই ওষুধ প্রয়োগ করার কথা বলছেন। একই সাথে এজিথ্রোমাইসিনের কথাও বলছেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় : এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসভিত্তিক ২০১৯ (কোভিড-১৯) প্রতিরোধ করার কোনো ভ্যাকসিন নেই, সুতরাং এই ভাইরাস প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো ভাইরাসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
নিজেকে রক্ষা করুন
১. ঘন ঘন হাত ধোবেন
সাবান-পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে আপনি আপনার দু’হাত ধোবেন। বিশেষ করে আপনি জনসমাগম স্থল থেকে ফেরার পর অথবা আপনি নাকঝাড়া, কাশি অথবা হাঁচি দেয়ার পর।
যদি সাবান ও পানি পর্যাপ্ত না থাকে তাহলে আপনি হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। লক্ষ করবেন হ্যান্ডস্যানিটাইজারে যেন কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে। আপনার হাতের দিকে ভালোভাবে মাখবেন ও না শুকানো পর্যন্ত হাত দুটো একসাথে ঘষবেন।
হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
বন্যজন্তু কিংবা গৃহপালিত পশুপাখি খালি হাতে স্পর্শ করবেন না।
২. সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন
শুধুমাত্র অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শেই নয়, অন্য সবার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন, কারণ আপনি জানেন না কেউ করোনাভাইরাস বহন করছে কিনা।
যদি আপনার এলাকায় কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে অন্য লোকদের সাথে আপনি দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন।
ঠাণ্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাবেন না। মুখে মাস্ক ব্যবহার করবেন।
অন্যকে রক্ষা করুন : যদি আপনি অসুস্থ হন, বাড়িতে অবস্থান করুন।
হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখুন। এ ক্ষেত্রে আপনি টিস্যু ব্যবহার করুন। কাছে টিস্যু না থাকলে কনুইয়ের ভেতরের পাশ দিয়ে নাক-মুখ ঢাকুন।
ব্যবহৃত টিস্যু ঝুঁড়িতে ফেলে দিন।
দ্রুত হাত দুটো সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন। যদি সাবান-পানি না থাকে তাহলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন। মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার-১ : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি: ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০৯৬১৩৭৮৭৮০২
চেম্বার-২ : আজগর আলী হসপিটাল, ১১১/১/এ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
ফোন : ০১৭৮৭৬৮৩৩৩৩, ১০৬০২