ভারতীয় বাঘকে যেভাবে চাপে রাখছে চীনা ড্রাগন

নাজমা মিনহাস | Jun 09, 2020 06:04 pm
ভারতীয় বাঘকে যেভাবে চাপে রাখছে চীনা ড্রাগন

ভারতীয় বাঘকে যেভাবে চাপে রাখছে চীনা ড্রাগন - সংগৃহীত

 

প্রবীন সোনি হলেন ফোর্স ম্যাগাজিনের সম্পাদক, সাবেক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা, ও দুটি গ্রন্থের লেখক। তার সাম্প্রতিক গ্রন্থের নাম ‘ড্রাগন অন আওয়ার ডোরস্টেপ’। তিনি কথা বলেছেন গ্লোবাল ভিলেজ স্পেসের সম্পাদক নাজমা মিনহাসের সাথে। ভারত ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা, চীনের অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে তিনি অনেক কথা বলেছেন। এখানে তা তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন : ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন যে সীমান্তে বেশ বড় আকারের চীনা সৈন্য উপস্থিত রয়েছে। সীমান্তের সর্বশেষ অবস্থা কি আমাদের জানাবেন?
জবাব : দুটি সমান্তরাল ঘটনা ঘটছে। একদিকে কূটনীতিক আলোচনার খবর আসছে। কিন্তু ঠিক কী হচ্ছে আমরা জানি না। আবার ঘটনাস্থলে কী হচ্ছে, সে সম্পর্কেও খবর আসছে। ফলে দুটি সমান্তরাল ঘটনা ঘটছে। কূটনৈতিক আলোচনার ব্যাপারে বলা যায়, আমি বিশ্বাস করি চীন বলছে যে ২০১৭ সালের দোকলাম ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনা প্রেসিডেন্ট শির সাথে সাক্ষাতের জন্য ওযানে গিয়েছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালের এপ্রিলে। তাদের মধ্যে যে সব বিষয়ে একমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটিকে আমরা ওহান কনসাস হিসেবে জানি। এর মূল কথা হলো, দুই দেশ সহযোগিতা করবে, একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে না। চীন চায় যে ভারত ওহান কনসাসে অটল থাকুক। চীন বিশ্বাস করে যে তারা ভারতের সাথে সহযোগিতা করে গেলেও ভারত তাদের সাথে সহযোগিতা করছে না, ভারত বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

প্রশ্ন : তাহলে কি এই সঙ্ঘর্ষের মাধ্যমে ভারতকে চীন ওহান চুক্তির কথা মনে করিয়ে দিলো?
জবাব : এর আগে চীন সম্পর্কে বিশেষ কিছু কথা বলে নেই। আমার মনে হয়, চীনই একমাত্র দেশ যে একইসাথে আলোচনাও করতে পারে, পেশীও প্রদর্শন করতে পারে। আর বেশির ভাগ দেশই বলে, হয় তুমি আলোচনা করো, বা যুদ্ধ করো। এ কারণেই চীনা বাহিনী বেশ বড় আকারে এসেছে। মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের প্রধান টার্গেট লাদাখ। সেখানে তিনটি পয়েন্টে চীনারা এসেছে। প্রতিটি স্থানে তাদের সাড়ে তিন থেকে চার হাজার আছে। সামরিক পরিভাষায় তা হলো একটি ব্রিগেড।

প্রশ্ন : অর্থাৎ আপনি বলছেন যে সীমান্তে এখন প্রায় ১০ হাজার চীনা সৈন্য আছে?
জবাব : আমি যা বলছি তা হলো এই যে ১৯৯৩ সালে লাদাখে চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ওই লাইনের ভেতরে সাড়ে তিন হাজার সৈন্য ঢুকে পড়েছে। ওই লাইন পর্যন্ত আমাদের সীমানা বলে আমরা মনে করি। ফলে চীনার আমাদের এলাকায় চলে এসেছে, সংখ্যাটি যাই হোক না কেন।
আর তারা এসেছে তাদের নির্মাণ সরঞ্জাম নিয়ে। তারা স্থায়ী প্রতিরক্ষা নির্মাণ করছে। এটা ভারতের জন্য ভালো জিনিস নয়। আমরা ১৯৯৩ সাল থেকে এই লাইন রক্ষা করছি। আমরা হঠাৎ করে দেখলাম যে এসব লোক আসছে। আমরা কিছুই করিনি, তারা সেখানে প্রতিরক্ষা স্থাপনা নির্মাণ করতে শুরু করল। প্রথমে ভারতের কাছ থেকে পুরোপুরি নীরবতা এলো, তারপর আমরা জানতে পারলাম যে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। আমার মূল্যায়নে পুরো বিষয়টি হলো এই যে ভারত তার পেশীশক্তি ব্যবহার করছে ভারতকে আলোচনার টেবিলে নেয়ার জন্য।

প্রশ্ন : আপনি বলছেন যে গত কয়েক বছর ধরে চীনাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। আর ভারতয়ি মিডিয়া বলছে, হাজার হাজার অনুপ্রবেশ ঘটছে। আপনি কি মনে করে, এতে যুদ্ধ শুরু হতে পারে?
জবাব : প্রথম কথা হলো, যুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন : কেন?
জবাব : প্রথমত, ভারতের সাথে যুদ্ধে যেতে চায় না চীন। দ্বিতীয়ত, চীন যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ওই ভারত ওই যুদ্ধের জন্য কাজ করছে না। যুদ্ধ যে কেন হবে না তা দুটি বাক্যে বলে দিচ্ছি। তবে সাইবার যুদ্ধের কথা বলা যায়। এটি নীরব ঘাতক। এতে পুরো জাতি জড়িত।

আমি যা বলতে চাচ্ছি, তা হলো আমাদের বিদ্যুৎ গ্রিডে, আমাদের যোগাযোগ গ্রিডে, আমাদের প্রতিরক্ষা গ্রিডে চীনের সক্ষমতা আছে। কারণ আমরা তাদের সরঞ্জাম এসব গ্রিডে বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করেছি। তাদের সরঞ্জাম সস্তা। এখন তারা ওইসব সরঞ্জামে ম্যালওয়্যার বসিয়েছে। তাদের হাতে এখন সাইবার অস্ত্র আছে। তারা চাইলে অর্ধেক দেশ অচল করে দিতে পারে।

প্রশ্ন : প্রচলিত যুদ্ধের বদলে চীন সাইবার যুদ্ধ করতে পারে?

জবাব : ঠিক কথা। তাদের আসল যুদ্ধের দরকার নেই। কেন তারা হত্যার খেলা খেলবে?
প্রশ্ন : আপনি বলছেন যে ওহান চেতনার বিরুদ্ধে গেছে ভারত। ভারত কী করেছে? যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভূমিকা পালন কী?

জবাব : প্রথমত, চীনের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাণিজ্য। ভারত সম্প্রতি এফডিআই সীমা বেঁধে দিয়েছে চীনকে এ থেকে দূরে রাখতে। এর মানে হলো, চীনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। চীনকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দিতে পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশ ভারতের ওপর চাপ দিচ্ছে। লাদাখকে কেন্দ্রীয় ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করাতেও আপত্তি জানিয়েছে চীন। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, কোয়াড্রিলেটারাল ডায়ালগও বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে অনেক কিছু।

প্রশ্ন : কৌশলের অংশ হিসেবেই কি চীন তিব্বত এলাকায় এত সৈন্য সমবেত করেছে?

জবাব : চীন অনন্য একটি দেশ। তারা একইসাথে আলোচনা করে, আবার পেশী শক্তিও দেখায়। এখানে যা হবে বলে আমি আশা করছি তা হলো এই যে চীন আমাদের কিছু ভূমির ওপর দাবি করবে। তখন আমরা বলব, না, এই এলাকা আমাদের। তারা তখন একটি গ্রে জোন, গ্রে এলাকার কথা বলবে।
এর মানে হলো, তারা ভারতীয়দের প্রথমে তাদের সব ব্যাঙ্কারসহ সবকিছু অপসারণ করতে বলবে। তারপর তারাও তাদেরগুলো সরিয়ে নেবে। আর তাতে ভারতীয় সরকার দাবি করবে যে তাদের জয় হয়েছে। কিন্তু আসল সাফল্য হলো আলোচনার টেবিল।

এটাকে বলে স্ট্র্যাটেজিক্যালি চিন্তা করা। যেটা দেখা যায় না, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা কেন এমনটা করে? তারা ভারতের কাছ থেকে সহযোগিতা চায়। তারা কিছু ভূমি ছেড়ে দিয়েও খুশি থাকবে। তারা একে পরাজয় দেখে না। দোকলামেও তারা এমনটিই করেছিল। ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা আলোচনাকে মনে করি পরাজয়। আমরা ট্যাকটিক্যাল লাভ-ক্ষতির কথা চিন্তা করি, তারা চিন্তা করে স্ট্র্যাটেজিক্যালি।

প্রশ্ন : আপনি বলতে চাচ্ছেন যে চীন সম্ভবত কিছু ভূমি ছেড়ে দেবে যাতে ভারত মনে করতে পারে যে তারা ট্যাকটিক্যালি জয়ী হয়েছে। ৬ জুন কি তাই হয়েছে? নাকি এখনো ওই সময় আসেনি?

জবাব : আমাকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে দিন। আমি বলিনি যে চীন কিছু জমি ছেড়ে দেবেই। আমি যা বলছি তা হলো তারা আলোচনা চায়। আর আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বলেছেন যে তিন চ্যানেলেই আলোচনা চলছে। আর এতে চীন খুশি যে অন্তত অর্ধেক হলেও ভারত ওহান কনসাসে ফিরে এসেছে এবং ভারত কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তারা কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে না। তারা ইতোমধ্যে। আমাদের ভূমি দাবি করছে। খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে ভারত বলবে যে এই এলাকা থেকে তোমরা সব স্থাপনা সরিয়ে নাও। তারাও তাদের কিছু স্থাপনা সরাবে। তারপর তারা যখন চাইবে, তখন আবার ফিরে আসবে। এটা হলো ক্ষমতার প্রশ্ন।

গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us