ওয়েব সিরিজের নামে যা হচ্ছে
ওয়েব সিরিজ - সংগৃহীত
দেশীয় ওয়েব সিরিজে এখন অবলীলায় চলছে অশ্লীলতা । আর এতে অভিনয় করছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারা। সেন্সরশিপ না থাকায় জনপ্রিয় নির্মাতাদের নির্মিত ওয়েব ধারাবাহিক, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো এখন আর পারিবারিকভাবে দেখার অবস্থায় নেই। কারণ গল্পে থাকছে অশ্লীল সংলাপ এবং সহিংসতার দৃশ্য। বলা যায় ব্যবসায়িক স্বার্থে দর্শক টানতে বিদেশী অনুষ্ঠানগুলোর সাথে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন দেশের কনটেন্ট নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা।
গত ২৭ মে অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’ শিহাব শাহীন পরিচালিত ক্রাইম থ্রিলার ‘আগস্ট ১৪’। ঐশী নামে বখে যাওয়া এক মেয়ের গল্প এটি। সে পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে। ২০১৩ সালে যে মেয়েটি মা-বাবাকে নির্মমভাবে খুন করেছিল। আলোচিত সেই ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে সিরিজটি। এই ধারাবাহিকে তুশি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা, শহিদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনিরা মিঠু, শাওন, তানভীর প্রমুখ।
সেখানে দেখা যায়, বন্ধুদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক, বাসায় একা নীল ছবি দেখার মুহূর্তসহ নানা কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য। থ্রিলারের শুরুতেই বলে নেয়া হয়, এটি ১৮ বছরের কম বয়সী দর্শকের জন্য নয়। আর এমন অশ্লীল দৃশ্যগুলোতে অবলীলায় অভিনয় করেছেন তিশা, যেভাবে আগে কখনোই তাকে দেখা যায়নি।
আদনান ফারুক হিল্লোল ও নাজিয়া হক অর্ষা অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং’ মুক্তি পেয়েছে ঈদে। সিরিজের শুরুটাই চমকে দেবে দর্শককে। পর্দায় বাংলাদেশী অভিনয়শিল্পীদের এত নিবিড় বিছানার দৃশ্য এর আগে কখনো দেখানো হয়েছে কি না, তা নিয়েও ভাবাবে দর্শককে। সিরিজটির নির্মাতা ওয়াহিদ তারেক জানান, ‘আমরা গল্পের বাইরে কিছুই দেখাইনি। আমাদের তিনটি স্টোরির বেসিক জিনিস হচ্ছে কারমা। এখন কারমার ব্যাপারে আমরা ভায়োলেন্স বলেন, সেক্স বলেন, খুব বেশি কাটছাঁট করিনি। আদিরস নিয়ে যখন কাজ করছি, সেভাবেই তাকে গল্পে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। যে যেভাবে দেখবেন, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি গল্পের বাইরে গিয়ে কোনো অশ্লীলতা কখনো দেখাতে চাই না।’
এসব ওয়েব সিরিজ দেখে অনেক দর্শক বিস্মিত ও হতাশ। তারা বলছেন, এটি সমাজ এবং সংস্কৃতির জন্য নিঃসন্দেহে একটি অশনি সঙ্কেত। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এ জাতীয় কার্যক্রম প্রতিটি পরিবারে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। টাকার লোভে এমন অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থারও দাবি জানান তারা।
এর আগে ২০১৭-১৮ সালে অনলাইনে মুক্তি পাওয়া কিছু নাটকে দেখা যায় কতিপয় তারকার খোলামেলা দৃশ্য। সেই সময়ে ‘আবাসিক হোটেল’, ‘হেলেন অব ট্রয়’ সিরিজগুলোতে কিছুটা খোলামেলা দৃশ্য থাকায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন সেগুলোর নির্মাতা এবং শিল্পীরা।
বিশেষ করে গত ১৮ সালের রোজার ঈদে ইউটিউব চ্যানেলে একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রকাশ পায়। তার মধ্যে সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে ৭ পর্বের ‘আমি ক্রিকেটার হতে চাই’ ও ‘অ্যাডমিশন টেস্ট’, ‘এল আমোর টিভি’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে ‘টেস্টিং সল্ট’, বাংলা ঢোলের উদ্যোগে ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম বাংলা ফিক্সে প্রচার পায় বিশেষ নাটক ‘উপহার’।
এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহায়ও প্রকাশ পায় একাধিক নাটক। এর মধ্যে সিএমভির ব্যানারে সাত পর্বের ওয়েব সিরিজ ‘দ্য লিস্ট’, ধ্রুব এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে সাত পর্বের দুই সিরিজ ‘বাঘবন্দী’ ও ‘আবাসিক হোটেল’, কিংবা টয়া অভিনীত ‘পালাবি কোথায়’ উল্লেখযোগ্য।
এসব গল্পের মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা দিতে গিয়ে নেতিবাচক বিষয়গুলোকেই যৌনতার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে সে বছর ঈদুল আজহায় প্রচারিত ‘পালাবি কোথায়’ দেখে অনেকে বিব্রত বোধ করেছেন। ঈদের ‘লিস্ট’, ‘বাঘবন্দী’ প্রভৃতি ওয়েব সিরিজে যৌনতা, অশালীন সংলাপ ও অঙ্গভঙ্গি, মাদকগ্রহণের বিষয়গুলো সমালোচনার জন্ম দেয়। অপর দিকে আরেক ওয়েব সিরিজ ‘আবাসিক হোটেল’-এর প্রমো রিলিজ হয়েছে। তা দেখে বিবেকবান দর্শক রীতিমতো বিস্মিত ও হতবাক । এ ছাড়া বর্তমানে আরেক নির্মাতা অনন্য মামুন নির্মাণ করেছেন একই রকমের ‘ফোন এক্স’ নামে ওয়েব সিরিজ।
এ বিষয়ে টেলিভিশন নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, বিষয়টি কিছুতেই কাম্য নয়। তিনি নির্মাতাদের উদ্দেশে বলেন পরিবার নিয়ে যা দেখতে পারবেন না তা দর্শকদেরও দেখানোর চেষ্টা করবেন না। তার মতে, নির্মাতা নির্মাণ করবেনÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যদি অসামাজিক হয় তবে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যদি এ রকম মানহীন নির্মাণ চলতে থাকে তবে এ অঙ্গন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তিনি বলেন, ওয়েব সিরিজ যাতে সেন্সরের মাধ্যমে প্রচারে যায় তার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত দাবি জানাবেন।
অন্য দিকে টেলিভিশন শিল্পীদের সংগঠন ‘শিল্পী সংঘের’ সভাপতি ক্রাইম থ্রিলার ‘আগস্ট ১৪’ ওয়েব সিরিজের অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। নিজের বাসার ইন্টারনেট নষ্টের অজুহাত দেখিয়ে বলেন, তিনি যেহেতু এগুলো দেখেননি তাই কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। এ বিষয়ে সংগঠনের অন্য নেতা অভিনেতা নাসিমের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।