যে জেনারেলের ভুলে চীনের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল ভারত
যে জেনারেলের ভুলে চীনের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল ভারত - সংগৃহীত
১৯৬২ সালে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল ভারত। এই যুদ্ধের লজ্জাজনক স্মৃতি এখনো তাদের তাড়িত করে। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনার জন্য অপারেশন রিভিউ নামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদন রচনা করেছিলেন। তারা হলেন লে. জেনারেল হেন্ডারসন ব্রুকস ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রেমিন্দ্র সিং ভঅগত (ভিক্টোরিয়া ক্রস)।
এতে সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রধান অপরাধী হিসেবে অভিহিত করা হয় লে. জেনারেল বি এম কাউলকে। তিনি ছিলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ ও পরে কমান্ডার ৪ কোর। প্রতিবেদনে পরোক্ষভাবে তাকে দায়ী করে বলা হয়, ইস্টার্ন সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনী পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়। ব্রুকস তীব্র ভাষায় চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) কাউলের সমালোচনা করে বলেন যে তিনি সৈন্যদের ওপর অসম্ভব টার্গেট নির্ধারণ করে দেন। লেফটেন্যান্ট থাকার সময় কাউলকে আর্মি সাপ্লাই কোরে বদলি করা হয় এবং ব্রিগেডিয়ার হওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে লড়াই করার কোনো অপারেশনাল ইউনিটের কমান্ডার করা হয়নি। ইনফেন্ট্রি, আরমার, আর্টিলারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং (কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারদের পদাতিকের চেয়ে অনেক কঠিন ভূমিকা পালন করতে হয়) বিভাগের সিনিয়র অফিসারদেরকেই কমব্যাট ইউনিটের কমান্ডে থাকতে হয়। কিন্তু কিভাবে যেন সাপলাই কোরের কেউ হয়ে গেলেন। তিনি কিভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অপারেশনাল কোরের প্রধান হয়ে গেলেন, তা বোধগম্য নয়। তবে কাউলের বেশির ভাগ পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছে তার ‘ব্রাহ্মণ’ কানেকশনে। তিনি প্রধানমন্ত্রী জওহেরলাল নেহরুর খুবই কাছের লোক ছিলেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণ মেননের প্রিয়পাত্র ছিলেন।
সিজিএস হিসেবে জেনারেল কাউল সরকারের এই মিথকে গ্রহণ করেছিলেন যে চীনারা নেহরুর ফরোয়ার্ড পলিসিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে না। এছাড়া স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি মাঠ পর্যায়ের অভিযান থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন, কমান্ডের দায়িত্বে থাকার সময় দিল্লিতেই অবস্থান করে নির্দেশ দিতে থাকেন।
১৯৬৮ সালে ব্রিগেডিয়ার জন ড্যালভি, ৭ম ইনফ্যানিট্র ব্রিগেডের সাবেক কমান্ডিং অফিসার ও ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী, হিমালয়ান ব্লান্ডার নামের একটি বই লিখেন। এতে তিনি ভারতের পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ বিবরণ দেন। জেনারেল কাউল সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি কষ্ট থেকে এবং জুনিয়র হিসেবে সামরিক কমান্ডারের জ্ঞান শেখা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সক্ষম হলেও তার সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্মি সিনিয়র কমান্ডে নিয়োগ লাভে সক্ষম হন। জওহেরলাল নেহরুর সাথে তার সম্পৃক্ততা চীনাদের হাতে লজ্জাজনক পরাজয় ও ভারতীয় সৈন্যদের গণহারে নিহত হওয়ার একটি বড় কারণে পরিণত হয়।
কাউল ছিলেন নেহরুর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বিদায়ী সেনাপ্রধানের পরামর্শ না শুনে ও যুদ্ধ অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি কে কৃষ্ণ মেনন তাকে জেনারেল স্টাফের চিফ করেন। জেনারেল কাউলকে ১৯৬২ সালের বিপর্যয়ের পর পদত্যাগ করতে হয়। তার ব্যক্তিগত সুপারিশের কারণেই ভারতীয় বাহিনী এমন শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।
লেখক : ইকরাম সেহগাল প্রতিরক্ষা ও নিরা