করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন যে তথ্য জানালেন নাসিমা সুলতানা
নাসিমা সুলতানা - সংগৃহীত
দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পর্যন্ত এ ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৩০ জনে।
গতকাল রোববারও একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। ওইদিনও ৪২ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শনাক্ত বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এ দিকে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৬৮ হাজার ৫০৪ জন রোগী রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৭৩৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ ৮ জন কম আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিল ২ হাজার ৭৪৩ জন।
নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ আক্রান্তের হার দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৬০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছে ৬৫৭ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।
নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬১টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১২ হাজার ৮৪২টি। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ১১৯টি নমুনা বেশি সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৪টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ১৩৬ টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১৯২টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ১০ হাজার ৯৩১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনায় ২ জন, রংপুরে ১ জন, ময়মনসিংহে ২ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন রয়েছে। এদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছে।
নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪২ জন মারা গেছে, এরমধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। এরমধ্যে পুরুষের হার ৭১ শতাংশ ও নারী ২৯ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ এবং নারী ২৩ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ২৯৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে ৭ হাজার ৫৫২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ১৪৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ৪ হাজার ৩১৯ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২ টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিন মিলে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে ২ হাজার ২২৮ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৫ জনকে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারিন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র পেয়েছে ১ হাজার ৮৫২ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৩ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারিন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ৭২ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত সংগ্রহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১২ হাজারটি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৭টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৮ হাজার ১১৭টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৯১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ২৪ ঘন্টায় আরও ৫ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৪৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১০ হাজার ৫৩৮ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৫ জন। মোট আক্রন্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫৪২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছে ৩৫৬ জন এবং মোট মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৭২ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে চীনের ১০ সদস্যের করোনা বিশেষজ্ঞের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল আজ ঢাকায় এসেছে। তারা বাংলাদেশে ১৪ দিন থাকবেন। এ সময়ে তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক করোনা হাসপাতালের কোয়ারিন্টিন সেন্টার ও ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করবেন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।
সূত্র : বাসস