রিজিক সম্পর্কে যা বলে ইসলাম
রিজিক - সংগৃহীত
আমরা আজ রিজিকের জন্য পেরেশান। কিভাবে টাকা উপার্জন করা যাবে, সবাই আছি এই চিন্তায়। আমাকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হতে হবে; সবসময় মাথায় ঘোরে এই পেরেশানি। তাই টাকার জন্য, গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। অথচ কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমন অনেক জন্তু আছে, যারা আগামীকালের জন্য খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিজিক দেন তাদের ও তোমাদেরও। তিনি সর্বশ্রোতা তোমরা যা বলো, আর সর্বজ্ঞ যা তোমরা করো।’ [সূরা আনকাবুত : ৬০]
সকাল বেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখবেন, আপনার সামনেই উড়ে বেড়ায়। তারা কি আপনার মতো খাদ্য সঞ্চিত রাখে? কিভাবে রাখবে, তাদের ডানায় তো জোর নেই যে মানুষের মতো খাদ্য জমা করে রাখবে? তারা দুর্বল। তারা খাদ্য জমা রাখতে অক্ষম। তাদের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট নেই। খাদ্য জমা করার মতো কোনো গুদাম নেই। কিন্তু তারা কি না খেয়ে আছে? রিজিকের অভাবে মৃত্যু হয়েছে? নাহ্। তাহলে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা কে করেন? আল্লাহ। শুনুন রাসূল সা:-এর একটি হাদিসÑ ‘হজরত ওমর রা: থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যদি আল্লাহর উপর দৃঢ় ইয়াকিন ও বিশ^াস রাখতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করতেন। যেমন পাখিদের রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা তো সকালে খালি পেটে ক্ষুধা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়, আবার শেষ বিকেলে ভরা পেটে নীড়ে ফিরে আসে।’ [সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৩৪৪]
আল্লাহ পাখিকে দুর্বল হওয়ার পরও তার রিজিকের ব্যবস্থা করেন। সুতরাং আল্লাহ প্রত্যেক সৃষ্টির পরিমাণ মতো রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। রিজিক শেষ না হওয়ার আগে কারও মৃত্যু হবে না। রিজিক শেষ, মৃত্যুও এসে যাবে। শুনুন রাসূলুল্লাহ সা:-এর একটি হাদিস- ‘হজরত মুতাল্লিব ইবনে হানতাব রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, নিশ্চয় জিব্রাইল আমার অন্তরে ওহি ঢেলে দিয়েছেন, অবশ্যই রিজিক শেষ হওয়ার আগে কারো মৃত্যু হয় না। সুতরাং তোমরা হারাম ছেড়ে হালাল পথে রিজিকের অনুসন্ধান করো।’ [মুসান্নেফে ইবনে আবী শায়বা ৯/২৫৪]
সুতরাং টাকার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ করা যাবে না। একটা কথা এখানে বলে রাখা ভালো, দুনিয়া কামানোতে নিষেধ নেই। তবে দুনিয়া কামাতে গিয়ে আখিরাত ভোলা যাবে না। এটার প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনের এই আয়াত থেকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুমার দিন খুতবা শোনার পর নামাজ শেষে (রিজিকের অনুসন্ধানে) জমিনে ছড়িয়ে পড়ো। নিজের চেষ্টার মাধ্যমে অর্থাৎ চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির মাধ্যমে রিজিক অনুসন্ধান করো। সুখে-দুঃখে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করো। যাতে তোমরা দুনিয়াতে ও আখিরাতে সফল হও।’ [সূরা জুম‘আ ১০]
আয়াতে আরবি শব্দ এসেছে ‘ফাদলুন’। আর ফাদলুন দ্বারা রিজিক বুঝানো হয়। আবার মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়াÑ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’। এখানেও ফাদলুন শব্দ দ্বারা রিজিক বুঝানো হয়েছে। সুতরাং কুরআনের আয়াত এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়ায় নামাজ শেষে রিজিকের অনুসন্ধানে বের হওয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তবে রিজিক অনুসন্ধানে গিয়ে হুঁশ রাখতে হবে। যেন উপার্জন হারাম পথে না হয়। অবশ্যই নিজের উপার্জিত সম্পদ হতে হবে হালাল পথে।
হজরত ইরাক ইবনে মালেক রা:। তিনি ছিলেন প্রবীণ তাবিয়ি, প্রখ্যাত আলেম এবং ফকিহ। তিনি জুমার নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দোয়া পড়তেন- ‘হে আল্লাহ! আমি (মসজিদে এসে) জুমার আজানের ডাকে সাড়া দিয়েছি। আপনার হুকুম ফরজ আদায় করেছি। এখন আমি রিজিকের সন্ধানে যাবো, আপনিই তো রিজিকের সন্ধানে বের হতে আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনি আমাকে রিজিক দিন, আর আপনিই তো উত্তম রিজিকদাতা।’
দুনিয়ার সব কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারার্থে। মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু মানুষকে বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। আল্লাহর গোলামির জন্য। সুতরাং আমাদের রিজিকের ব্যবস্থাও আল্লাহই করবেন। তাই আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, আর সাথে সাথে এই ইয়াকিন ও বিশ^াস রাখতে হবে যে, আমার তাকদিরে যে রিজিক লেখা আছে তা অবশ্যই আমার কাছে পৌঁছবে। তাতে কোনো প্রকারের সন্দেহ-সংশয় করা যাবে না। কেননা, আল্লাহই তো সবার রিজিকের জিম্মাদার। সবার রিজিক তো তাঁরই কুদরতি হাতে। এই ইয়াকিন ও বিশ^াস আমাদের থাকা চাই। এই ইয়াকিন ও বিশ^াস থাকলে, ইনশাআল্লাহ আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা হবে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে। অধৈর্য হলে চলবে না। অতএব আসুন, আমরা হালাল পথে রিজিক অনুসন্ধান করি। হারাম পথ এড়িয়ে চলি। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : শিক্ষক, মাদারাস উলুমে শরিয়াহ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা