মোদির মতোই ট্রাম্পও বড় বিপদে!
মোদি ও ট্রাম্প - সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রায় বিপদে পড়ে গেছেন ইতোমধ্যে পড়ে গেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্পের সখ্যের ভিত্তি হলো দু’জনই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন কোন সমাধান করার জন্য নয় বরং নিজেদের ব্যক্তি ইমেজ গড়তে কাজে লাগাতে চান বলে। হংকংয়ের স্বাধীনতা নিয়ে চীনের সমস্যা আছে তা বেশ পুরানা। কিন্তু তা নিয়ে এই সময়ে চীনের বড় কোনো গোলযোগে পড়ার কথা নয়। কেবল, গত ৪ জুন ছিল ১৯৮৯ সালের তিয়েনানমেন স্কয়ার ম্যাসাকারের বার্ষিকী। সেটি পালন করতে চেয়ে কিছু উত্তেজনা তৈরি হবে আর স্বভাবতই হংকং সরকার ওই বার্ষিকী পালনে অনুমতি দেবে না। কিন্তু ট্রাম্প এটাকে নিয়েই তার ব্যক্তি পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। তিনি তাইওয়ানকে দিয়ে হংকংয়ের স্বাধীনতার দাবি সমর্থন করিয়ে দেন। আর তাতেই উত্তেজনা তৈরি হয় যেটাকে আরো বড় করে দেখাতে মার্কিন নৌবহর তাইওয়ানের দিকে টহলের আয়োজন শুরু করান ট্রাম্প। ব্যাপারটা হলো, আজ হয়তো এই ভাষায় এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে বসতে হতো না যদি ট্রাম্প এই কাজগুলো সিরিয়াস হয়ে করতেন, অধিকারের প্রশ্নে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি হিসেবে করতেন। কিন্তু না, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য এসব উত্তেজনাকে আমেরিকান নির্বাচনের আগে তিনি ‘চীন-ব্যাসিং লড়াকু প্রার্থী’ নিজের এই নির্বাচনী ইমেজ গড়তে কাজে লাগানো- সবই দেখানোর একেকটা শো মাত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান!
কিন্তু অলক্ষ্যে ন্যায়ের ঘণ্টা সম্ভবত হেসে বেজে উঠেছিল। কে জানত ঠিক এ সময়েই কালো আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড পুলিশের নৃশংসতায় খুন হয়ে যাবেন। আর সারা পশ্চিমা দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়বে! এই লেখার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রকাশিত আলজাজিরার একটা খবরের শিরোনাম পাঠ করে আগাই, তাহলে কম কথায় ব্যাপারটা বলা যাবে। পেছনের ঘটনা হলো, ফ্লয়েড মারা যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার রাস্তায় রাস্তায় কালো-সাদা নির্বিশেষে বিক্ষোভ শুরু হলে এতে ট্রাম্প খুবই খারাপভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। এতেই তিনি ধরা পড়ে গেলেন যে তিনি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে কেমন!
একজন প্রেসিডেন্ট আর পাবলিকের মধ্যে সম্পর্কটাই বা কী তা তিনি আজীবন বুঝতেই পারলেন না, বুঝতেও চাননি, খেয়াল করে দু’দণ্ড বুঝবার চেষ্টাও করেননি। অথচ পাবলিক সমর্থন বা ভোট দিয়েছে বলেইও তো তিনি প্রেসিডেন্ট এবং তিনি পাবলিকের সাক্ষাৎ রিপ্রেজেন্টেটিভ। ফলে পাবলিকলি তিনি আর যা খুশি করার ব্যক্তি ইচ্ছাধীন নন, যা মনে চায় তিনি বলে ফেলতে পারেন না, করতে পারেন না! কারণ তিনি পাবলিকের সম্মিলিত ইচ্ছার প্রতিনিধি। অর্থাৎ যিনি রিপ্রেজেন্টেশন শব্দটার মর্মই সারা জীবনে বুঝতে পারলেন না তিনিই হয়ে গেছেন এক প্রেসিডেন্ট। আর সেই তিনিই হলেন ব্যবসায় টাকাপয়সা খোয়ানো হতাশ এক দেউলিয়া ব্যবসায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের শেখেরা কোনোকালে যাকে দয়া করে তাদের পকেটমানি দিয়ে দানখয়রাত করে দেউলিয়ামুক্ত করে রেখেছিল। অতএব ফ্লয়েডের খুন হওয়ার প্রতিবাদ মিছিলকে তিনি খামোখাই যেচে গিয়ে দেখলেন তার বিরোধী সব মানুষের তৎপরতা ও কাণ্ডকারখানা হিসেবে ।
অথচ দরকার ছিল সিম্পল একটু সহানুভূতি আর পাশে দাঁড়ানো! আপন করে নিয়ে দুটো কথা বলা। তিনি ন্যায়-ইনসাফের পক্ষে, এই কথাটাই নতুন করে নাগরিকের মনে সাহস জোগায় এমন কিছু শব্দে আবার ঘোষণা করা। কিন্তু উল্টো তিনি হম্বিতম্বি করা শুরু করলেন হাভাতে লোকের মতো। ইনি ঘোষণা করলেন সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে তিনি এই প্রতিবাদ ভেঙে দেবেন, ব্যবস্থা নেবেন ইত্যাদি। হাভাতে বললাম এজন্য যে প্রায় সময়ই তিনি এমন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ব্যাপক নির্বাহী ক্ষমতা এসবই যেন তার ব্যক্তিগত, তার ব্যক্তি সম্পদের মতো। কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই যেন এসব ক্ষমতা তিনি যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারেন।
এখন আলজাজিরার প্রকাশিত শিরোনাম হলো- ‘জেনারেলেরা বিদ্রোহে: মার্কিন মিলিটারি নেতাদের ঝাঁজালো তাপ কেমন ট্রাম্প তা বুঝছেন।’ সেই সাথে এই আলজাজিরা রিপোর্ট আরো বলছে যে, প্রেসিডেন্টের ডিফেন্স সেক্রেটারি (মন্ত্রী) মার্ক এসপার কনস্টিটিউশন মোতাবেক ঘোষণা করতে প্রেসিডেন্টকে পাবলিকলি মনে করিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন যে একটিভ-ডিউটিতে আছে যেসব মিলিটারি ফোর্স তাদের কাউকেই প্রেসিডেন্ট গণ-প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেন না। সোজা কথায় মিলিটারি ডাকার হুমকি প্রেসিডেন্ট দিতে পারেন না। আর এই কথা শুনে এবার পেন্টাগনের বাকি জেনারেলরা ডিফেন্স সেক্রেটারির পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। তবে এটা প্রেসিডেন্ট করতে পারেন একেবারেই অন্য উপায়হীন হয়ে পড়লে, খুবই শোচনীয় পরিস্থিতিতেই একমাত্র, এসপার যোগ করেন।
আর তাতেই এখনকার প্রশাসনের টপ জেনারেল মার্ক মিলি একই দিনে একটা পাবলিক ঘোষণা দেন। তাতে তিনি লেখেন যে, তিনি আমেরিকান মিলিটারি লিডারদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে কনস্টিটিউশনাল শপথ নেয়া বাক্য অনুসারে তারা জনগণের কথা বলার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ জমায়েতের অধিকার রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর সোজা মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাপড় খুলে নেয়া হয়েছে সকলে মিলে। আলজাজিরার ভাষায়, এটা বিরলদৃষ্ট এক দুর্ঘটনা!
এর মানে ট্রাম্পও মোদির মতোই নির্বাচনী বা ব্যক্তিগত লাভালাভ ঘরে তুলতে পারলেন না বা ব্যর্থ হতে যাচ্ছেন!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com