প্রতিবেশীদের যেভাবে হাতছাড়া করছে ভারত
প্রতিবেশীদের যেভাবে হাতছাড়া করছে ভারত - সংগৃহীত
ভারতের সমস্যা পর্বত-প্রমাণ।
ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত লাদাখের হিম-শীতল, বায়ু-তাড়িত এলাকায় উত্তেজনাকর সামরিক মুখোমুখি- এটি বড় ধরনের সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করতে পারে- ভারতের ভোঁতা পররাষ্ট্রনীতির পরিণাম এবং তা উপমহাদেশে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার সময়টাতেই ভারত তার উত্তর প্রতিবেশীর কাছ থেকে সীমান্ত সমস্যায় পড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সরকারের পেশী শক্তি (প্রতিবেশী ছোট ছোট দেশের প্রতি স্পর্শকাতরতা দেখাতে ব্যর্থ) প্রদর্শনে লাভ হয়নি।
এই অঞ্চলের কৌশলগত সম্প্রদায় বলছে, ভারতের ‘বন্ধুপ্রতীম’ ছোট দেশগুলো- নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা- সবাই সহানুভূতিসম্পন্ন ভারতকে চায়, তারা কেউ পেশী শক্তি প্রদর্শনকারী ও ভীতি সৃষ্টিকারী ভারতকে পছন্দ করে না।
দুটি সীমান্ত বিরোধ, ভিন্ন প্রকৃতির, ভারত ও এর উত্তর প্রতিবেশীদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।
কৌশলগত বিশ্লেষক ড. বিনোদা কুমার মিশ্র বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী চীন ও ভারতের মধ্যে লাদাখের অচলাবস্থা উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, উভয় পক্ষই দৃঢ় হওয়ায় তা উদ্বেগজনক বিষয়। সীমান্ত বিরোধের ফলে সশস্ত্র সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হবে না, তবে এটি বিঘ্নতা সৃষ্টিকারী অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে।
কলকাতাভিত্তিক সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিএসআইআরডি) পরিচালক মিশ্র ভূবেনেম্বর থেকে টেলিফোনে সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, যুদ্ধ আমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। ভারতের উচিত হবে সঙ্ঘাতটি দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে নিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, চীন যদি সামরিকভাবে বেশি আগ্রাসী হয়, তবে ভারতের উচিত হবে অর্থনীতিসহ অন্যান্যভাবে তাকে আঘাত করা, বিশ্ব জোট নতুন করে গঠন করে।
ভারতের প্রমাণ করা উচিত যে তারা পূর্ব এশিয়ায় উচ্চ মাত্রার কৌশলগত সামুদ্রিক ভারসাম্য সৃষ্টি করতে সক্ষম। উল্লেখ্য, ওই পূর্ব এশিয়ায় চীনের সামনে আছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও মাঝে মাঝে মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন। তিনি বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবিসংবাদিত শক্তি হওয়ার চীনের উচ্চাভিলাষের বিরুদ্ধে পাথরের প্রাচীর হতে হবে ভারতকে।
তিনি বলেন, ভারতের উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াগ গঠন করা। এখানেই স্নায়ুযুদ্ধ দানা বেঁধে উঠছে।
তিনি বলেন, এই উত্তাল সাগরে একটি কৌশলগত জোট বাস্তবতা এবং ভারত থাকবে মার্কিন পক্ষে। আর মনে রাখতে হবে, চীন মনে করে ভারতই এই অঞ্চলে তা সবচেয়ে কঠিন আঞ্চলিক প্রতিযোগী ও বৃহত্তম হুমকি।
তবে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন হিমালয় সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান করছে, তখন নেপালের সাথে আরেকটি সীমান্ত বিরোধ বাড়ছে।
ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রাসাদ ওলি ৩১ মে তার দেশের নতুন মানচিত্র-সংবলিত সাংবিধানিক সংশোধনী পেশ করেছেন। তিনি ভারত ও চীনের মধ্যে থাকা ত্রিদেশীয় সংযোগ স্থলে কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা ও লিপুলেখকে নেপালের সীমান্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটি নেপালি পার্লামেন্টে পাস হয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নেপাল ও ভারতের মধ্যকার নতুন বিরোধ সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে কৈলাশ সরোবরে যাওয়ার একটি লিঙ্ক রোড নির্মাণ ও ভারতের সেনাপ্রধানের একটি বিতর্কিত মন্তব্য।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কৌশলগত ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক গেজা শর্মা ওয়াঙ্গল বলেন, দিল্লির সাথে এই বিরোধ ওলিকে নতুন জীবন দেবে। তিনি বলেন, নেপালের সাথে শত শত বছর ধরে বহুমাত্রিক, বিশেষ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত মাঝে মাঝেই নেপালকে আহত করছে, নেপালি ভূখণ্ড দখল করছে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অহেতুক হস্তক্ষেপ করছে।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে নেপালের সংবিধান নিয়ে দেশটির ওপর অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে বড় ধরনের ভুল করেছিল।
আর এখন অপ্রয়োজনীয় কূটনৈতিক জুয়া খেলে নেপালকে আরো বেশি করে চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এর ফলে ভারত অজনপ্রিয় হয়ে পড়ছে, ভারতবিরোধী ভাবাবেগ এখন নেপালে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যদি নেপালের ওপর চাপ বাড়ায়, তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো নষ্ট করবে।
কাঠমান্ডু পোস্টের সাবেক সম্পাদক ও কাঠমান্ডুভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ফেলে অখিলেশ উপাধ্যায় বলেন, এমনটি করলে চীনের দিকে নেপালকে আরো ঠেলে দেবে ভারত।
তিনি বলেন, উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ভারত ও নেপাল- উভয়ের উচিত হবে দ্রুত একে অপরের সাথে প্রকাশ্য কূটনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া। তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সমাধানই কাম্য।
সূত্র : এসএএম