ভারতের দাদাগিরির কারণেই নেপাল ক্ষুব্ধ!

বিশ্বাস বরাল | Jun 05, 2020 09:28 am
মোদি ও ওলি

মোদি ও ওলি - সংগৃহীত

 

নেপাল-ভারত সম্পর্ক পুনঃবিন্যাস নিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোত্তমভাবে বিশ্লেষণ করেছেন ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকদের অন্যতম সি রাজা মোহন। অতিরিক্ত সহজীকরণের ঝুঁকির বিষয়ে আলোকপাত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় তিনি দুটি মৌলিক বিষয়ের ওপর দৃষ্টিপাত করেছন : একটি হলো, তিনি নেপালের ‘সহজাত ভারসাম্যের রাজনীতির’ সাথে মানিয়ে নিতে নয়া দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন; এবং দ্বিতীয়টি হলো, তিনি একথা স্বীকার করে নিতে বলছেন যে “অত্যন্ত গর্ব করে বলা ‘বিশেষ সম্পর্কই’ সমস্যার অংশবিশেষ।“

তিনি তার প্রথম যুক্তিটি দিয়েছেন পৃথ্বী নারায়ন শাহের সাথে মিল রেখে এই যে নেপাল সবসময়ই ভারত ও চীনের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে চেয়েছে। কে পি ওলি দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যমান ওই নীতিই কেবল অনুসরণ করছেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন যে কৌশলগত স্বায়াত্তশাসনের স্রেফ উল্লেখের মাধ্যমে দম্ভ প্রকাশকারী দিল্লির পক্ষে কাঠমান্ডুর উৎস স্বীকার করা কঠিন হবে না।

দ্বিতীয়ত রাজা মোহন দিল্লির উচিত হবে না বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য লালায়িত হওয়া। কারণ কাঠমান্ডুর বড় অংশই এমনটা চায় না। তিনি বলেন যে বিশ্বাস, মতাদর্শ বা ঐতিহ্য- যাই হোক না কেন ভাবাবেগ দিয়ে কোনো দুই দেশের মধ্যেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেবল অভিন্ন স্বার্থে শিকড় থাকা সম্পর্কই টিকে থাকে।
নেপালের কৌশলগত চিন্তাবিদেরা দীর্ঘ দিন ধরেই দুটি যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে এবং দিল্লির কেউ তা শুনতে আগ্রহী নয়। অনেক নেপালে কেবল এ কারণেই ‘ভারতবিরোধী’ যে তারা দেখতে পাচ্ছে যে দিল্লি তাদের ওপর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ চাপিয়ে দিতে আগ্রহী : দুই দেশের মধ্যকার ক্ষমতা ও জনসংখ্যার সাম্য না থাকার প্রেক্ষাপটে সম্পর্ক ‘স্পেশাল’ কেবল বড় অংশীদারের জন্যই। ভঅরত যদি নেপালকে সার্বভৌম্য সাম্যতা বিবেচনা করে, তবে তাকে ব্রিটিশ উত্তরাধিকার সূতে পাওয়া ‘বড় ভাই সুলভ’ মানসিকতা পরিহার করতে হবে এবং তার অনুকূলে স্রেফ এক আশ্রিত হিসেবে বিবেচনা করা বন্ধ করতে হবে।

প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি তার স্ব-নির্ধারিত জাতীয় স্বার্থে নিহিত। নয়া দিল্লির বিশেষ সম্পর্কও এই বিশ্বাসের ওপর নিহিত যে তা ভারতের স্বার্থ সিদ্ধি করবে, যদিও তা নেপালের স্বার্থ সিদ্ধি নাও করতে পারে। কাঠমাণ্ডুতে এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে দিল্লি অনেক বছর ধরে তার বিশেষ সম্পর্ককে নেপালে তার হস্তক্ষেপের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে।

অবশ্য, ভারত তার জন্য উপযোগী বিবেচিত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টার মধ্যে ভুল কিছু নেই। অবশ্য ভারতীয়রা যদি বুঝতে পারে যে বর্তমান কর্মপন্থা আর কাজ করছে না, তাহলে তাদের উচিত হবে তা পরিবর্তন করা। এই প্রেক্ষাপটে রাজা মোহনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি নতুন বাতাসের সঞ্চার করেছে। এতে কেবল ভারতের নীতির কারণেই নেপালে অসন্তোষ সৃষ্টির উপলব্ধি প্রকাশ করা হয়নি সেইসাথে এই বিশ্বাসও প্রতিফলিত হয়েছে যে সেকেলে ও কৃত্রিম তকমার বদলে পারস্পরিক স্বার্থেল ভিত্তিতেই ছোট ছোট প্রতিবেশীর সাথে কাজ করা উচিত।
অবশ্য নেপালেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। ভারত যদি তার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ পুনঃবিন্যাস করে, তবে নেপালকেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে ভাতে নেপালি নাগরিকদের জাতীয় মূল্যায়ন, বাণিজ্য ও ট্রানজিট চুক্তি, উন্মুক্ত সীমান্ত ও ভিসামুক্ত ভ্রমণের বিষয়গুলোও আসবে।

আমরা কি পুরনো মডেল থেকে যেসব বিষয় ধরে রাখতে চাই, সেগুলো রেখে দিতে পারব? ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে বাকি বিশ্বের সাথে যদি আরো সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্য আমাদের থাকে, তবে নেপাল কিভাবে তার ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা কাটাবে? ভারতীয় মুদ্রা থেকে তখন কি সে নিজের মুদ্রাকে সরিয়ে নেবে?
এক মুহূর্তের জন্য দক্ষিণের উদ্বেগ ভুলে যান। আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো : বিশেষ সম্পর্ক বাদ দিলে নেপাল কিভাবে ভারতের সাথে ‘সমানভাবে’ কাজ করার পরিবর্তিত বাস্তবতার সাথে তাল মেলাবে, তা নিয়ে কি আমরা কোনো হোমওয়ার্ক করেছি?

অন্নপূর্ণ এক্সপ্রেস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us