একসাথে চীন-পাকিস্তানের মুখোমুখি ভারত!
একসাথে চীন-পাকিস্তানের মুখোমুখি ভারত! - সংগৃহীত
চীন ও পাকিস্তানের সাথ ভারতের বিরোধপূর্ণ সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান শক্তিটির একসাথে দুটি সম্ভাব্য সঙ্কট সামাল দেয়ার সক্ষমতা পরীক্ষায় পড়েছে।
গত মাসে চীনের সাথে থাকা প্রায় ২১ শ’ মাইল দীর্ঘ সীমান্তে নিরস্ত্র সঙ্ঘাতের পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে খবরে প্রকাশ। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে মার্কিন নেতা মধ্যস্ততা করার প্রস্তাব দিয়েছিলৈন। কিন্তু নয়া দিল্লি ও বেইজিং উভয়ে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বুধবার বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে চনি-ভারত সীমান্ত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে রয়ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত-সম্পর্কিত বিষয়ে সার্বিক সুষ্ঠু ব্যবস্থা রয়েছে, ভারত ও চীনের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেল রয়েছে এবং দুই পক্ষ বিদ্যমান ইস্যুগুলো সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে মীমাংসা করতে সক্ষম। তিনি বলেন, এখানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।
কিন্তু উত্তেজনা হ্রাস পাওয়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে কমিউনিস্ট পার্টির সরকারি প্রকাশনা গ্লোবাল টাইমসে খবর দেয় যে সীমান্ত বাহিনীকে নতুন ট্যাঙ্ক, ড্রোন ও হেলিকপ্টার দেয়া হবে। এর পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে খবর প্রকাশ করে যে চীনা সামরিক বাহিনী সম্প্রতি ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন তিব্বতের তানগুলা মাউন্টেন এলাকার উচ্চভূমিতে অনুপ্রবেশের মহড়া সম্পন্ন করেছে।
চীন-নিয়ন্ত্রিত আকসাই চিন ও ভারত-শাসিত লাদাখে উভয় পক্ষের টহলের সময় পানগঙ লেক, গালওয়ান ভ্যালি, ডেমচক ও দৌলত বেগ ওলদাইয়ের মতো কয়েকটি স্থানে দুই পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘাত হয়। দুই দেশের মধ্যকার লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারত সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রেক্ষাপটে এই সঙ্ঘাত হলো।
এই সঙ্ঘাতের খবর প্রথম প্রকাশ করে ভারতীয় মিডিয়া। তারা সীমান্তে চীনাদের ৫ হাজার সৈন্য জড়ো করার খবরও পরিবেশন করে। মঙ্গলবার নয়া দিল্লি জানায়, তারা ওই এলাকায় আরো সৈন্য পাঠাচ্ছে। অবশ্য পরের দিন সীমান্তের কোনো স্থানেই সঙ্ঘাতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় সামরিক বাহিনী বুধবার জানিয়েছে যে ভারত-শাসিত কাশ্মিরের নওশেরায় ছোট অস্ত্রের গুলি ও ভারী মর্টার হামলা চালিয়ে পাকিস্তান লাইন অব কন্ট্রোলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এর কয়েক দিন আগে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ভারতের দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করে।
ভারত ও চীন ১৯৬০-এর দশকের যুদ্ধ ও সীমান্তে মাঝে মাঝে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হলেও দিল্লি ও ইসলামাবাদ ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মির নিয়ে কয়েকবার প্রাণঘাতী লড়াইয়ে জড়িযেছে। গত বছর দুই দেশ আকাশযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল।
গত আগস্টে মোদি ভারত-শাসিত কাশ্মিরের স্বায়াত্তশাসন ব্যবস্থা বাতিল করলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়ে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নীতিতে যোগ দিয়েছে পাকিস্তান। চীনের এই প্রকল্পে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও যোগ দিয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা বেড়েছ, দুই দেশ জানুয়ারিতে যৌথ নৌমহড়াতেও অংশ নিয়েছে।
গত মঙ্গলবার ফোর্বেস সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্রম স্পেস স্যাটেলাইট ছবিতে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে নতুন উচ্চ নিরাপত্তা কম্পউন্ডের অস্তিত্ব দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি চীনের নতুন বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটি।
অবশ্য বেইজিংয়ের সম্প্রসারিত উপস্থিতির সমালোচনা করেছে ওয়াশিংটন। সোমবার আমেরিকান এন্টারপ্রাইস ইনস্টিটিউটের সাথে এক বেতার সাক্ষাতকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও ভারত সীমান্তের কাছে চীনা সৈন্যের সমাবেশকে আগ্রাসী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ রাজনাথ সিংয়ের সাথে কথা বলার সময় ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে ভারতের নেতৃত্বের প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা প্রকাশ করেন।
নিউজউইক