রোগী কমাতে ঢাকা মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে অভিনব কৌশল!
ঢাকা মেডিক্যাল - সংগৃহীত
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হচ্ছে কেবল হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের। যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসেন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। আর এটিকে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার চাপ কমাতে ডাক্তারদের অভিনব কৌশল বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগীরা।
রোগীরা অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়াও এক কঠিন সমস্যা। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা দেলোয়ার হোসেন নামে এক রোগী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, আমি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি কিনা জানতে নমুনা পরীক্ষা করার জন্য আসি। কিন্তু হাসপাতালে এসে ভিন্নরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে একপর্যায়ে চিকিৎসকের দেখা পাই। পরে চিকিৎসক আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেন এবং করোনার নমুনা পরীক্ষা করার জন্য এক সপ্তাহ পরে আবারো হাসপাতালে আসতে বলেন।
দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, আজ কেন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হবে না; এমন প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসক বলেন আগে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, তারপর করোনা পরীক্ষা করা হবে। এখন রোগীর অনেক চাপ রয়েছে উল্লেখ করে তাকে সামনের সপ্তাহে আবারো হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। তবে এই অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, যেসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার তাদেরই ভর্তি করা হচ্ছে। আর ভর্তি হওয়া রোগীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষাও করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ঢামেক হাসপাতালে শিশু করোনা ইউনিটসহ ৭৭০ বেডের তিনটি করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন ভাইরোলজি বিভাগের লোকজন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের কাছ থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন অনেক রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকে যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম ছিল, তখন যারা উপসর্গ নিয়ে আসতেন, তাদের স্যাম্পল সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু এখন সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ, অনেকের কোনো উপসর্গ নেই, শুধু শুধু ভয়ের কারণে হাসপাতালে এসে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। আগত সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালে প্রচ- ভিড় লেগেই থাকত। এ কারণে সেই নিয়ম বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের নিয়ম বাতিল করে আমরা ৭৭০ বেডের তিনটি করোনা ইউনিট করেছি। সেখানেই ভর্তি করে রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারোনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া তাদের ফ্যামিলি সদস্যদের এর আওতায় আনা হয়েছে। কারণ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের অধিকার বেশি। তারা করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ঢামেকের ভাইরোলজি বিভাগেই প্রতিদিন শত শত রোগীসহ ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এ কারণে ভাইরোলজি বিভাগে পরীক্ষার চাপ থাকে বেশি। তাই ভর্তিকৃত রোগীরা ছাড়া অন্য কেউ হাসপাতালে এসেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারবে না।
তিনি বলেন, গত ২ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালে ৯৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো অনেকেই মারা গেছেন। মৃত্যুর পাশাপাশি রোগীর সুস্থতার সংখ্যাও কম নয়। প্রতিদিন অনেক রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার করোনা উপসর্গ নিয়ে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিদিনই জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগে রোগীরা আসছেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা যাদের মনে করছেন তাদের ভর্তি করে নিচ্ছেন। আর যাদের ভর্তি হওয়া দরকার নেই, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলছেন।