আবার সাধারণ ছুটি!
আবার সাধারণ ছুটি! - সংগৃহীত
টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর গত ৩১ মে থেকে খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। তবে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি নেই, ক্রমেই তা অবনতিশীল। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৬৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩৭ জন। আগের দিন একই সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল বেশি, দুই হাজার ১১ জন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি ক্রমেই এভাবে অবনতির দিকে যায়, তাহলে সরকার ফের সাধারণ ছুটিতে ফিরে যাবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে গেলে ফের সাধারণ ছুটি দেয়া হবে কি নাÑ জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যদি দেখি আমাদের ব্যাপক অবনতি ঘটছে তাহলে তো আমাদের (ছুটিতে যাওয়া ছাড়া) বিকল্প কিছু থাকবে না। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো চালিয়ে নেয়ার জন্যই এটা খুলে দেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি ৮৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগী ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবে। সংক্রমণ যাতে না বাড়ে সে জন্য আমরা ব্যাপকভাবে চেষ্টা করছি। ছোট দেশ বিশাল জনসংখ্যা, ম্যানেজ করা কঠিন হচ্ছে। আমরা পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করছি।
মানুষের চলাচল বাড়লে করোনা সংক্রমণ আরো বাড়বে এ কথা জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্টেজ আছে, আস্তে আস্তে ছড়াতে ছড়াতে শেষের দিকে হয়তো বেশি ছড়াবে। এর চেয়েও সামনে বাড়বে হয়তো। বেড়ে আবার নামা শুরু করবে।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কার মধ্যেই টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। একই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ ও ট্রেন) চালু হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বরং ক্রমেই তা অবনতিশীল।
সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে সরকারি দফতরগুলোকে অফিস করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৫টি দিন দিয়েছি। আজ (বুধবার) চতুর্থ দিন। প্রথম দিনের চেয়ে আরো কমসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অফিস করছি। আমাদের মেসেজটা অলরেডি সব জায়গায় পৌঁছে গেছে। অফিস টাইমও খুবই ফ্লেক্সিবল। যার যখন কাজ শেষ হবে দ্রুত চলে যাবে। যদি কেউ দুই ঘণ্টায় কাজ শেষ করতে পারে সে চলে যাবে। যদি না এসে বাসায় বসে করতে পারে করে দেবে। কোনো কিছু আটকাবে না। কিন্তু মুভমেন্ট কম থাকবে।
গতকাল বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গণপরিবহন নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর অনুরোধ করছি। যাত্রীদের নিজেদেরও সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। না হয় টার্মিনাল এবং বাসযাত্রা হতে পারে সংক্রমণ বিস্তারের কেন্দ্র। নিজ বাসভবন থেকে এক ভিডিওবার্তায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী সবাইকে ‘সচেতনতার প্রাচীর’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, না হলে জনস্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার আরো কড়াকড়ি আরোপ তথা কঠোর হতে বাধ্য হবে। কাদের বলেন, কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে শৈথিল্য প্রদর্শন করছে, যা সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এ অবহেলা নিজের জন্যই শুধু নয়, পরিবার, সমাজ তথা অন্যদের জন্যও ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো: হাবিবুর রহমান খান বলেন, আমাদের হাতে আরো কিছুটা দিন সময় আছে। আমরা পরিস্থিতি দেখছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তো কোনো সমস্যা নেই। তবে অবনতি হতে থাকলে আমরা বসে তখন করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবো।
চলতি বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম একজন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে গেলে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩০ মে ছুটি শেষ হয়। দীর্ঘ ছুটির কারণে ইতোমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ছুটির পথ থেকে সরে আসে। দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ১৪০ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৭৪৬ জন।