ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়ার সেই ঘটনা
জিয়া - সংগৃহীত
জিয়াউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। এটাও সমসাময়িক ঘটনা। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়া সেই বিক্ষোভের মোকাবেলা করেছিলেন। তার নীরব অথচ প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি। সবাই জড়ো হচ্ছিল টিএসসি প্রাঙ্গণে। জিয়াউর রহমান আসার আগেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ঠেলে দিলো ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে। বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। টিএসসির উত্তর দিকের রাস্তার পর এই প্রাঙ্গণ। জিয়াউর রহমান টিএসসির প্রবেশপথে এলেন। সাথে সাথে বিক্ষোভরত ছাত্ররা এগিয়ে গেল জিয়াউর রহমানের দিকে। জিয়াউর রহমান টিএসসিতে প্রবেশ না করে বিক্ষোভরত ছাত্রদের দিকে এগিয়ে এলেন। আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করছিলাম রোকোয়া হলের গেট থেকে। অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব থেকে। সবাই দুরুদুরু বুকে আতঙ্কিত।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের পুলিশ হটিয়ে দেবে, লাঠিপেটা করবে- এটাই রেওয়াজ। জিয়াউর রহমান তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কর্র্ণধার। প্রধান সামরিক আইন প্রাশাসক। সুতরাং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা তার প্রাপ্য। পুলিশ যদি অ্যাকশন নেয়, তাহলে তা অন্যায় কিছু হবে না। অথচ তেমন কিছুই ঘটল না। উল্টো প্রেসিডেন্ট এগিয়ে এলেন ছাত্রদের দিকে। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী তোমাদের কথা?’ আমরা দেখলাম, প্রেসিডেন্ট এগিয়ে যাচ্ছেন আর ওরা পিছিয়ে যাচ্ছে। আবার প্রেসিডেন্ট যখন ফিরে আসছেন, ওরা তখন তার পিছু নিচ্ছে। দু-একটা ইটও এসে পড়ল প্রেসিডেন্টের সামনে। আমরা এটাও লক্ষ করছিলাম, পুলিশ অফিসার এবং সামরিক কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের নিকটবর্তী হচ্ছে বারবার। হয়তো বা আদেশের অপেক্ষা করছে তারা। ১০-১৫ মিনিট ধরে এভাবে চলতে থাকল। অপেক্ষমাণ লোকেরা বলাবলি করছে, পুলিশ কেন অ্যাকশন নিচ্ছে না। বাংলাদেশের লোকজন সততই সরকারবিরোধী। অথচ অপেক্ষমাণ লোকেরা প্রেসিডেন্ট জিয়ার ধৈর্য ও সাহস দেখে তাৎক্ষণিকভাবে তার পক্ষে চলে গেছে। ছাত্ররা অবশেষে পিছু হটল। জয় হলো মহানুভবতার।
প্রেসিডেন্ট নিরাপদে প্রবেশ করলেন সভাস্থলে- টিএসসিতে। শুনেছি সেখানেও কোনো কোনো শিক্ষকের তির্যক বাক্যবাণের শিকার হয়েছেন তিনি। আজকের বিএনপির শীর্ষনেতা প্রফেসর খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই প্রতিবাদীদের একজন। তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা। জিয়া পরে বঙ্গভবনে তাকে ডেকে নিলেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা চাইলেন। ‘শত্রু হতে চেয়ে তিনি বন্ধু বলে গণ্য হলেন’। এত দিনে ক্ষমতার অনেক রদবদল হয়েছে। বদল হননি খন্দকার মোশাররফ। অতীতের দুর্দিনে এবং আজকের দুর্যোগে তিনি আছেন জিয়াউর রহমানের আদর্শের শীর্ষদেশে। জিয়াউর রহমানের এই ঔদার্যের ১৬ আনা ফসল তিনি পেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী তার ভক্ত-অনুরক্ত বনে যায়। পরবর্তীকালে জিয়া যখন লোকান্তরে তখন ছাত্রসমাজের মধ্যে লক্ষ জিয়া তৈরি হয়েছিল ঘরে ঘরে। সময়ের পরীক্ষায় তার প্রমাণ রয়েছে।