ট্রাম্পকে মোদি বিশ্বাস করেন না?
ট্রাম্পকে মোদি বিশ্বাস করেন না? - সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ নিরসনে মধ্যস্ততার প্রস্তাবটি উভয় দেশই প্রত্যাখ্যান করেছে।
ট্রাম্প ২৭ মে টুইট করেন যে আমরা ভারত ও চীন উভয় দেশকে অবগত করেছি যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যকার বিদ্যমান সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্ততা করতে প্রস্তুত, আগ্রহী ও সক্ষম। কিন্তু তারপর ভারতের পররাষ্ট্র দফতর পরিষ্কার করে জানায় যে ভারত এ ব্যাপারে চীনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে। আর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একইভাবে জানায়, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তারা দুই দেশ আলোচনা ও পরামর্শ করে তাদের সমস্যার যথার্থ সমাধান করতে পারবে।
অর্থাৎ সীমান্ত বিরোধ নিস্পত্তির ট্রাম্পের প্রস্তাব থেকে ভারত নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কেন চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্পের প্রস্তাব দিল্লি প্রত্যাখ্যান করল?
প্রথমত, ওয়াশিংটনকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না নয়া দিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের উষ্ণ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ভারতীয় কর্মকর্তারা। ভারতীয় মিডিয়া উল্লেখ করেছে যে চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনায় মধ্যস্ততা করার ট্রাম্পের প্রস্তাবের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভোটারদের মন জয় করা।
ভারতীয় মিডিয়া বিশ্লেষকেরা বলছেন যে ট্রাম্পও সম্ভবত জানতেন যে ভারত তার প্রস্তাবে সাড়া দেবে না। কিন্তু তারপরও তিনি প্রস্তাবটি দিয়েছেন এই কারণে যে তার নিজের নির্বাচনের আছে মাত্র ১৬৫ দিন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভঅবে যুক্তরাষ্ট্রের কেউ তাকে বিশ্বাস করে না। কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পর ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ের জন্য সম্ভব সবকিছু করছেন। ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, মার্কিন জনসংখ্যায় চীন ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকের সংখ্যা ২.৫ ভাগের বেশি। ফলৈ চীন-ভারত বিরোধ নিষ্পত্তি নির্বাচনে তার প্রতি সমর্থন বাড়বে বলে ট্রাম্প বিশ্বাস করেন।
দ্বিতীয়ত, ভারত সবসময় ‘স্বায়ত্তশাসনে’ বিশ্বাস করে। তারা তৃতীয় শক্তিকে গ্রহণ করতে চায় না, বিশেষ করে ভারত ও অন্যান্য দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে তারা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চায় না।
বস্তুত, আগেও মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। গত বছরের জুলাই মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কাশ্মির বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্ততার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ভারত সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ভারত পরাশক্তিগুলোর সাথে নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকলেও তারা তাদের স্বায়াত্তশাসনে কারো হস্তক্ষেপ কামনা করে না।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সাল থেকে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে। কিন্তু তবুও ভারত তাদের স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
তাছাড়া ভারত আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে তার অবস্থান সুসংহত করতে চায়। এক্ষেত্রে ডব্লিউএইচওতে ভারতের অবস্থানও একটি বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ওয়াশিংটন যেভাবে চাচ্ছিল, ভারত সেভাবে ভূমিকা পালন করেনি। তাছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতাদের সাথে ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠক করেছেন। মোদি এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আরো বড় ভূমিকা পালন করতে চান।
সবশেষে বলা যায়, ভারত নিজেকে আমেরিকার ঘুঁটি হিসেবে দেখতে চায় না।
ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েদং ২৭ মে ভারতের একটি যুব প্রতিনিধিদলের সাথে অনলাইন মতবিনিময়কালে ‘ড্রাগন-হাতি টাঙ্গো’র কথা বলেছিলেন। এটিই হতে পারে সঠিক বিকল্প। এটি চীন ও ভারত এবং উভয় দেশের জনসাধারণের স্বার্থ পূরণ করতে পারে।
চায়না মিলিটারি অনলাইন