পেছন থেকে চীনের পিঠে ছুরি মারছে ভারত!
পেছন থেকে চীনের পিঠে ছুরি মারছে ভারত! - সংগৃহীত
ভারতের সাথে সীমান্ত উত্তেজনাকে চীন হয়তো গুরুত্ব দিতে নারাজ, কিন্তু জিনজিয়াং ও তিব্বত এলাকা কাছাকাছি অবস্থান করায় অচলাবস্থায় সতর্ক বেইজিং। বিশ্লেষকেরা মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন।
ভারত শাসিত কাশ্মিরের লাদাদে চীন শাসিত আকসাই চিনের মধ্যকার গালওয়ান নদী উপত্যকায় ৫ মে কিভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তা পরিষ্কার নয়।
গত মাসে সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থানে সঙ্ঘাত হয়েছিল।
এপির তথ্য অনুযায়ী, বেশ কয়েকজন ভারতীয় ও চীনা সৈন্য তিব্বতের কাছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি সীমান্তে হাতাহাতি ও পাথর নিক্ষেপে আহত হয়েছিল।
কোনো দেশই সঙ্ঘাত নিয়ে প্রতিবাদ জানায়নি। বেইজিং বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে এর আগে ২০১৭ সালে উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল। দোকলাম ঘটনা নামে পরিচিত ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছিল ৭০ দিন।
দুই দেশ ১৯৬২ সালে যুদ্ধ করার পর এটি তাদের মধ্যে এই উপত্যকায় প্রথম উত্তেজনা।
সাংহাই ইনস্টিটিউটস ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ওয়াং দেহুয়া বলেন, ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর চীনা সামরিক বাহিনী পূর্ব ফ্রন্ট থেকে সরে এলেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন রুট হওয়ায় আকসাই চিন এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।
ভারত ও চীন উভয়ের কাছেই আকসাই চিন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। জিনজিয়াং ও তিব্বতের মধ্যে এটিই একমাত্র সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। উভয় স্থানেই বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু জাতিগত গ্রুপ বাস করে। বেইজিং ভয় পায় যে এসব গ্রুপ বিচ্ছিন্নতাবাদের উৎস হতে পারে।
আবার কাশ্মিরের কাছে হওয়ায় ভারতও এ ব্যাপারে সতর্ক। কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতার পর থেকে লড়াই করে যাচ্ছে। গত আগস্টে ভারত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে।
কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হর্ষ পান্ত বলেন, ভারতের ব্যাপারে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের স্থিতিশীলতার বিষয়টি সবসময় অগ্রাধিকার পায় চীনের কাছে।
তিনি বলেন, ভারত জম্মু ও কাশ্মিরের প্রশাসনিক মর্যাদা পরিবর্তন করায় এলাকাটি চীনের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ২০১৭ সালের দোকলাম ঘটনার চেয়ে এবাবের সঙ্ঘাতে বেইজিং অনেক বেশি অসন্তুষ্ট হয়েছে। কিন্তু তবুও তারা এখন ভারতের সাথে উত্তেজনা বাড়াতে চাইছে না। কারণ একদিকে রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি এবং অন্যদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরী সম্পর্ক।
সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান আবারো বলেন যে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণাধীন।
ঝাও আরো বলেন, কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ সাবলীল রয়েছে এবং চীন দুই দেশের নেতাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সমঝোতা অনুসরণ করবে।
মে মাসে সঙ্ঘাত যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন চীন অনেক কাজে ব্যস্ত। অনেক বিলম্বিত আইন পরিষদের সম্মেলন, সুনির্দিষ্ট প্রবৃদ্ধি টার্গেটহীন প্রথম বার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, হংকংয়ের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন চীনা নেতারা।
চীনা সূত্রগুলো জানিয়েছে, চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না।
ফলে এখন সঙ্ঘাতে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই চীন। ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের উপ-পরিচালক লিন মিনওয়াঙ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যখন চীন সমঝোতা করার চেষ্টা করছে, তখন ভারতের পদক্ষেপকে চীন তার পেছন থেকে ছুরি মারার মতো ঘটনা বলে বিবেচনা করছে।
লিন বলেন, তবে চীন ও ভারত উভয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সম্ভবত এই উত্তেজনা উভয়েই আর বাড়তে দিতে চায় না।
কিন্তু বাস্তবে ভারত সীমান্তে সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে বেশ সুবিধাজনক (৬:১) অবস্থানে রয়েছে। কারণ সবচেয়ে প্রত্যন্ত মালভূমিতে বড় ধরনের সৈন্য সমাবেশ ঘটানো চীনের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
এসসিএমপি