দুধ পানে সত্যিই লম্বা হওয়া যায়!
দুধ পানে সত্যিই লম্বা হওয়া যায়! - সংগৃহীত
বিজ্ঞান বলে আমরা লম্বা হব না বেটে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের পারিবারিক ইতিহাস বা জিনের উপর। কিন্তু একথাও ঠিক যে একাধিক এক্সটারনাল ফ্যাক্টরও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন ধরুন, দুধ। এটি পান করলে শরীরের দৈর্ঘ বাড়বেই।
আপাত দৃষ্টিতে একথাটা বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলেও একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে দুধে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান নানাভাবে এই কাজটি করে থাকে। তবে দৈহিক বৃদ্ধি ১৮ বছরের পর যেহেতু হয় না, তাই এই বয়সে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত যদি প্রতিদিন এ পানীয়টি খাওয়া যায় তাহলে লম্বা হতে কেউই আটকাতে পারবে না বলেই ধারণা করা হয়।
তাই তা বাবা-মায়ের কাছে অনুরোধ ৫ বছরের পর থেকেই বাচ্চদের প্রতিদিন দুধ খাওয়ানো শুরু করুন, যদি না আপনি তাদের বেটে বানাতে চান তো!
দুধের সাথে লম্বা হওয়ার সম্পর্ক লুকিয়ে ইতিহাসে
দুধের সঙ্গে লম্বা হওয়ার যোগ যে বেশ নিবিড়, তা নেদারল্যান্ডের নাগকিরদের দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। ডাচেরা সারা দিনে আর কিছু খাক বা না খাক, দুধ পান করবেই। তাই তো সারা বিশ্বের মধ্যে সব থেক লম্বা হলো ডাচেরা এবং বিজ্ঞানীরা বারবার একথা মেনে নিয়েছেন যে বিশ্বের এই অংশের মানুষদের এমন লম্বা হওয়ার পিছেন দুধ ছাড়া আর কিছুর ভূমিকা নেই।
কয়েক বছর আগে বিবিসি-তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, শুধু নেদারল্যান্ড নয়, হল্যান্ডের মানুষরা যে এত লম্বা, তার পিছনেও দুধের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই বিজ্ঞান এবং ইতিহাস দুইই প্রমাণ করে যে লম্বা হতে দুধের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।
উল্লেখ্য, ১৮০০ শতকের আগ পর্যন্ত ডাচেদের গড় উচ্চতা ছিল কম-বেশি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। এই সময়ের পর থেকেই কোনো এক আজানা কারণে নেদারল্যান্ডের মানুষরা বেশি বেশি করে দুধ খাওয়া শুরু করল। এক সময় গিয়ে দেখা গেল তারা বিশ্বের বাকি দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণ দুধ খাচ্ছে। ১৮০০ শতকের পর থেকে ডায়েটের এই পরিবর্তনের কারণে ২০০ বছর পর কী দেখা গেল জানেন? যেখানে একটা সময় ডাচেদের উচ্চতা ৫ ফুট ছিল, সেখানে তাদের গড় উচ্চতা গিয়ে পৌঁছালো ৬ ফুটে। এই উচ্চতা বৃদ্ধির পিছনে বিজ্ঞানীরা দুধের অবদনাকেই স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন।
এক্ষেত্রে শুধু ডাচেদের কথা বললে চলবে না। আফ্রিকার বিখ্যাত শিকারিদের গোষ্ঠী মাসাইদেরও মূল খাবার হলো দুধ। তাই তো তাদের উচ্চতাও ডাচেদের মতোই ৬ ফুটের কাছাকাছি। বিজ্ঞান যখন পাশে আছে তখন তো মানতেই হবে।
তাই একথার মধ্যে কোনো ভুল নেই যে দুধ খেলে উচ্চতা বাড়বেই, আর যদি না খান তাহলেই স্রষ্টাই ভরসা। আসলে দুধে উপস্থিত প্রোটিন,স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমেরিকায় করা এক গবেষণা কী বলছে দেখা যাক : দুধ ও উচ্চতার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে ৯-১১ বছর বয়সী মেয়েদের উপর একটা গবেষণা চালিয়েছিল একদল মার্কিন বিজ্ঞানি। তারা দেখতে চাইছিলেন দুধের সঙ্গে বাস্তবিকই উচ্চতা বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা। বহু বছর ধরে চলা এই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যে মেয়েরা বেশি করে দুধ খেয়েছে তাদের উচ্চতা বেশি বৃদ্ধি পয়েছে বাকিদের তুলনায়।
গর্ভাবস্থায় দুধ পান
প্রেগন্যান্সির সময় মায়েদের রোজের ডায়েটে দুধ থাকলে বাচ্চা যে লম্বা হবেই সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ডেনমার্কের একদল গবেষকের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি করে দুধ খেয়ে থাকেন, তাদের বাচ্চাদের হাড়ের গঠন এতটাই ভালো হয় যে বেটে হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না। তাই তো ভাবী মায়েরা আজ থেকেই দুধ খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন আপনার শারীরিক উন্নতি তো ঘটবেই, সেই সঙ্গে বাচ্চার স্বাস্থ্য যেমন ভালো হবে, তেমনি আগামী দিনে সে লম্বাও হবে।
দুধ নিয়ে কিছু বেশ আকর্ষণীয় তথ্য
১. দুধ ছিল মানুষের সব থেকে প্রথম খাদ্য। যখন চাষ করা হতো না তখন মূলত দুধ খেয়েই আদি মানবেরা নিজেদের পেট ভরাত।
২. আদি কালে গ্রিকেরা মনে করতেন দুধ সাধারণ কোনো পানীয় নয়। এটি একটা ওষুধ। তাই তো সে সময় অলিম্পিয়ানদের প্রতিদিন লিটার লিটার দুধ খাওয়ানো হত। মনে করা হতো এমনটা করলে তারা ভালো খেলবেন।
৩. ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই জানা যাবে, মিসরীয় রানী ক্লিয়োপেট্রা প্রতিদিন দুধে গোসল করতেন। তিনি মনে করতেন সুন্দর ত্বকের রহস্য় লুকিয়ে রয়েছে দুধে।
৪. ভারতীয়রা সহ বিশ্বের অনকে দেশের নাগরিকরা মূলত গরুর দুধ খেয়ে থাকেন। তবে অনেকে ভেড়া, ছাগল, উট, বাঁদর, ঘোড়া এবং ইয়াকের দুধও খেয়ে থাকেন।
দুধ এবং শরীর
১. দুধে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান নানাভাবে আমাদের শরীরের গঠনে সাহায্য করে। তাই তো শুধুমাত্র দুধ খেয়েই অনেক দিন পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
২. আমাদের শরীরে উপস্থিত ভালো ব্যাকটেরিয়াদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে দুধের কোনো বিকল্প নেই।
৩. ছোট বয়সে বেশি করে দুধ খেলে বেটে হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।
৪. পরিসংখ্যান বলছে, যে যে দেশের নাগরিকরা বেশি বেশি করে দুধ খান, তারা আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। মানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পিছনেও দুধ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. শরীরকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার পর দুধ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন কোনো রোগ ছুঁতে পারবে না।
৬. নানাবিধ হাড়ের রোগকে দূরে রাখতে দুধে উপস্থিত ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সূত্র : বোল্ডস্কাই