দুই সিকদারকে ঢাকা ছাড়তে সহায়তা করেছিল কে?
দুই সিকদারকে ঢাকা ছাড়তে সহায়তা করেছিল কে? - সংগৃহীত
সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার এবং তার ভাই দিপু হক সিকদার ২৫ মে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা থেকে ব্যাংককে গিয়েছেন৷ করোনা পরিস্থিতিতে মাথার ওপর মামলা নিয়েও কিভাবে দেশ ছাড়লেন তারা?
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে রন হক সিকদার আর দীপু হক সিকদারের নিজস্ব এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন৷
তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার পরও তারা কিভাবে এই করোনার মধ্যে দেশ ছাড়লেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে কি নাই এটা দেখার কাজ আমাদের নয়৷ সেটা পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের কাজ৷ তারা চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারতো৷ কারণ, তারা যে দেশের বাইরে যাবেন সব তথ্য পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের কাছে আগেই দেয়া ছিল৷’’
গত ১৯ মে এক্সিম ব্যাংক র্কতৃপক্ষ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করে৷ মামলায় অভিযোগ, ওই ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণের বিষয় নিয়ে ব্যাংকটির এমডি মো. হায়দার আলি মিয়াসহ দুই র্শীষ র্কমর্কতাকে তারা নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছে৷ অভিযুক্তরা অবশ্য আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগ অস্বীকার করে মামলাটিকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন৷
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল আহসান জানান,‘‘আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ২৫ মে সকাল ৯টা ১১ মিনিটে বিমানবন্দর ছেড়ে যায়৷
আমার কাছে যে অ্যাপ্রুভাল আসে তাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লেখা ছিল না৷ আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশন লেখা ছিল৷ আর যাত্রী সংখ্যা লেখা ছিল দুই জন৷ যাত্রীদের নাম, তারা পুরুষ না নারী তা আমি বলতে পারবো না৷ এটা ইমিগ্রেশন বলতে পারবে৷ আর বলতে পারবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো উড়োজাহাজ চলাচল করে না৷’’ আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশন সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান৷
ইরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার বলছে, দুই ভাই ‘মুমূর্ষু রোগী’ হিসেবে ব্যাংকক গেছেন৷ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিকে থাইল্যান্ডে অবতরনের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয় থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস৷ ওই দিনই অনুমোদন দেয়া হলে ঢাকায় থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দিয়ে দুই জনকে মেডিকেল ভিসা দেয়ার অনুরোধ করা হয়৷ পরের দিন ২৪ মে তাদের ভিসা দেয়া হয়৷ ২৫ মে তারা দেশ ত্যাগ করেন৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অব প্রোটোকল আমানুল হক বলেন, ‘‘বিশেষ ফ্লাইটের বিষয়ে আমাদের কাছে কাগজপত্র আসে৷ আমরা তা দেখে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেই৷ করোনার মধ্যে বিশেষ ফ্লাইটে বিদেশিরা যাচ্ছেন৷ কোনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কাগজপত্র আমাদের কাছে আসার কথা নয়৷ এটা সিভিল অ্যাভিয়েশন দেখে৷’’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানও বলেন, ‘‘ইমারজেন্সি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে না৷ এটা সিভিল অ্যাভিয়েশনই দেখে ৷ আমরা দ্রুত অনুমোদন দিয়ে দিই৷’’
শিকদার গ্রুপের দুই ভাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘হ্যাঁ তারা আমাদের অনুমোদন নিয়েই গেছেন৷’’
মামলা থাকার পরও তারা রোগী হিসেবে কিভাবে বিদেশে গেলেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো মামলা দেখি না৷ আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখি৷ হাসপাতালের কাগজপত্র, পাসপোর্ট, ভিসা দেখি৷ যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাবেন, সেটা দেখি৷ কেউ পালিয়ে যাচ্ছেন কিনা সেটা তো আমাদের দেখার কাজ নয়৷ এটা পুলিশ, ইমিগ্রেশন দেখবে৷ লাশেরও ইমিগ্রেশন হয়৷ কে যাবেন, কোথায় যাবেন, কেন যাবেন সেই তথ্য তাদেরকে আগেই দেয়া থাকে৷ তারা যদি আমাদের পারমিশন বাতিল করতে বলে তখন আমরা দেখি৷ আর তারা নিজেরাও এটা করতে পারেন ইমিগ্রেশন বা তার আগে-পরে৷’’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার বিকেলে ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত অ্যাডিশনাল এসপি বলেন, ‘‘২৫ মে ওই দুই ভাই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশের বাইরে গেছেন কিনা সে তথ্য আমাদের পক্ষে এভাবে জানানো সম্ভব নয়৷ আপনাকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে লিখিত আবেদন করতে হবে৷’’
রন হক সিকদার এবং তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছেন থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম৷ তিনি জানান, ‘‘আমি শুনেছি তারা দেশের বাইরে চলে গেছেন৷ কিন্তু কোনো সত্যতা পাইনি৷ ইমিগ্রেশনের কাছে জানতে চেয়েছি৷ তারাও এখনো তাদের দেশত্যাগের ব্যপারে কোনো তথ্য দেয়নি৷’’ তাদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো বিমান চলাচল বন্ধ৷ তাই আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞা দেইনি৷’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা তাদের গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছি৷’’
সূত্র : ডয়চে ভেলে