মধ্যপ্রাচ্যের বড় রাষ্ট্রগুলোকে ভেঙে দেয়া হবে!
মধ্যপ্রাচ্যের বড় রাষ্ট্রগুলোকে ভেঙে দেয়া হবে! - সংগৃহীত
২০০৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যে পরিবর্তিত মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল তার লেখক ছিলেন আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাবেক এক ইহুদি লে. কর্নেল। তার সাথে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানা যায়। অবলোকনের গত দিনের কলামে তুর্কি কলামিস্ট নেদারেট এরসানেলের বরাত দিয়ে যে গুজব মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার কথা লিখেছিলাম তার সাথে র্যাল্ফ পিটার্সের সেই লেখার যোগসূত্র থাকতে পারে। ইরানের প্রভাব সম্প্রসারণের ভীতি দেখিয়ে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে একসময় এমন নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টি করা হয় যাতে এসব দেশ ইসরাইলের সাথে সমঝোতায় বাধ্য হয়। সম্ভবত এ ধরনের কোনো সমঝোতার ধারাবাহিকতায় ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ফর্মুলার অপমৃত্যু ঘটিয়ে পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকাকে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার বিষয়ে ট্রাম্প যে পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তার প্রতি সৌদি আরব ও মিত্র দেশগুলোর গোপন অনুমোদন রয়েছে বলে বিভিন্ন মার্কিন ও ইসরাইলি পত্রিকায় দাবি করা হচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে এসব দেশ ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সমর্থন দেয়ার কথা বলেনি। ইরানের সাথে যে গোপন সমঝোতা ওমানের মাধ্যমে হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়, তার প্রধান শর্তই হতে পারে ইহুদি রাষ্ট্রের সম্প্রসারণের বিষয়টি মেনে নেয়া এবং হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাত থেকে বিরত রাখা।
সিরিয়া ও লিবিয়া পরিস্থিতি এবং কুর্র্দি ইস্যু নিয়ে তুরস্কের সাথেও এ ধরনের একটি সমঝোতা করার চেষ্টা হতে পারে।
এখন বলা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে তার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং রণতরী প্রত্যাহার করতে চলেছে; ইরানের সাথে বন্দী বিনিময় হচ্ছে; সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতার ইরানের সাথে স্বচ্ছ সম্পর্ক নির্মাণ করতে চাইছে; নতুন সরকারের জন্য ইরাক-বাগদাদ প্রশাসন নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে; সিরিয়ায় বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হতে চলেছে; বাশার আসাদ রাশিয়ার গুডবুকে থাকছেন না। সিরিয়া ও তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাকামীদের নতুন করে ঐক্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এসবের প্রতিটি বিষয়ই তাৎপর্যপূর্ণ। আর এর সাথে ইসরাইলের নেপথ্য যোগসূত্র রয়েছে।
দেখার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেও এর প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও চীনের সাথে ইসরাইলের বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সম্পর্ক ইসরাইলের খুবই ঘনিষ্ঠ। ইসরাইলের ভৌগোলিক সীমা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এই সম্পর্কও কাজে লাগানো হতে পারে।
আমেরিকান জার্নালে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত মানচিত্রের সাথে এখনকার পরিকল্পনার কিছু মিল রয়েছে। ওই মানচিত্রে মক্কা-মদিনাকে আলাদা রাষ্ট্র দেখানো হয়। আর বর্তমান সৌদি শাসকদের হাতে রিয়াদ অঞ্চল রাখা হয়। বাকি একটি অংশ ইয়েমেনের সাথে যুক্ত করা হয়। এই লেখাটি পরে আটলান্টিক ম্যাগাজিনসহ অনেক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এই লেখা প্রকাশ হওয়ার পর গত ১৫ বছরে সৌদি আরব ও এর আশপাশের অঞ্চলে অনেক কিছু ঘটেছে। আরব বসন্তের জের ধরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে গৃহযুদ্ধ আর হানাহানিতে বেশ ক’টি দেশের শাসন কাঠামো ভেঙে পড়েছে। একবার একটি পক্ষকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তো পরে, আরেক পক্ষকে পাল্টা অভ্যুত্থানে মদদ দেয়া হয়। এতে সঙ্ঘাত ও পাল্টাপাল্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমাজের গভীরে ঢুকে পড়ে। আরব বসন্ত ও এরপরের দশকের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত- একমাত্র ব্যতিক্রম ইসরাইল। নতুন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের অখণ্ডতা এবং রাজতন্ত্র বজায় রাখতে এখানকার শাসকরা নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলকে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করার নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার এরকম চেষ্টা গাদ্দাফিও করেছিলেন কিন্তু তাকে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়েছে।
তবে এখনকার মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে ইসরাইলের মানচিত্র সম্প্রসারণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বিন্যাসের পরিকল্পনা নিকট ভবিষ্যতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকরা গ্রহণ করেছে। ফিলিস্তিন জর্দান ইয়েমেন সিরিয়া লিবিয়াসহ আশপাশে যা কিছু ঘটেছে তাকে এই পটভূমিতে দেখতে হবে। সম্ভবত সামনের দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। তবে এর মধ্যে আশাবাদের একটি দৃশ্যপটও রয়েছে। পরের কোনো লেখায় তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
mrkmmb@gmail.com