করোনা বিপর্যয় : শ্রীলঙ্কার টার্গেট মেডিক্যাল টুরিজম
করোনা বিপর্যয় : শ্রীলঙ্কার টার্গেট মেডিক্যাল টুরিজম - সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার মানদণ্ডে দুই মাস ধরে করোনাভাইরাসের ‘হটস্পট’ বিবেচিত দেশটির অবরুদ্ধ রাজধানী কলম্বোর ওপর থেকে বিরতিহীন কারফিউ মঙ্গলবার প্রত্যাহার করে নেয়ার পর নগরীটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। অবশ্য পথে-ঘাটে ১০ লাখের এই নগরীর স্বাভাবিক অবস্থা এখনো স্পষ্ট নয়।
লোকজনের একটি ছোট অংশই কেবল তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে কাজকর্মে যোগ দিয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা আংশিকভাবে চালু হয়েছে, অল্প কয়েকটি বাস ও ট্রেন চলছে। সেগুলোও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে। বড় বড় রেস্তোরাঁ ও সুপার মার্কেট খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তবে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী যেসব হোটেলে খাবার গ্রহণ করে, সেগুলো খোলার অনুমতি দেয়া হয়নি।
সরকার বলছে, বিমানবন্গরগুলো ১ আগস্ট খুলে দেয়া হবে পর্যটকদের জন্য। অবশ্য এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দরগুলোকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা।
গত কয়েক দিনে কুয়েত ও কাতার থেকে লোকজনের আগমনের ফলে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। আর নতুন সংক্রমণের কারণে সরকার সাময়িকভাবে অন্যান্য দেশ থেকে আগমন সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। কাতার থেকে আসা ৪৬৬ যাত্রীর মধ্যে ৭০ জনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাওয়ার পর কাতার থেকে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের আনা বন্ধ করা হয়েছে।
হেলথ সার্ভিসেসের মহাপরিচালক ড. অনিল জাসিঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে দেশ এখনো ১০০ ভাগ স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, কারফিউ প্রত্যাহার করা হলেও সব স্টাফ সদস্যকে কাজে যোগদান করা বাধ্যতামূলক নয়।
তিনি বলেন, কলম্বো হলো সবচেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। এর পরে রয়েছে গামপাহা। এই দুই এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি সময় কারফিউ ছিল। তিনি বলেন, এসব এলাকাকে রক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। পাবলিক প্লেসগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়াদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশের ডিআইজি অজিথ রোহানা মিডিয়ায় বলেছেন, হেলথ সার্ভিসেসের ডিজি ডা. জাসিঙ্গে ব্যাংক ও সুপার মার্কেটগুলোর মতো পাবলিক প্লেসে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা লোকদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার ক্ষমতা দিয়েছেন পুলিশকে।
সাধারণ মানুষের অনেকের কাছেই কোভিড-পরবর্তী স্বাভাবিক অবস্থা আর যাই হোক অন্তত স্বাভাবিক নয়। তারা মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে অভ্যস্ত নয়। অনেকেই বলছেন, তারা কর্মস্থলে ফেরার ব্যাপারে নার্ভঅস, বিশেষ করে গ্রেফতারের ভয়ে।
ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনিং যন্ত্র বিক্রিকারী একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত নিলাম প্রিয়দর্শনা বলেন, টেকনিশিয়ান হিসেবে আমি কাজে ফিরে এসেছি। কিন্তু এত বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ছি। এসব পণ্যের বিক্রি রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে। কিন্তু তবুও তিনি খুশি তার চাকরি এখনো আছে বলে।
সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ধসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এর মধ্যেই আশাবাদ দেখা যাচ্ছে। দ্বীপ দেশটি মেডিক্যাল টুরিজম বিকাশ ঘটাতে চাচ্ছে। আর সেশেলসের ৩৫ জন নাগরিকের চিকিৎসার মাধ্যমে তারা কাজটি শুরু করেছে। তারা তাদের সরকারের অনুরোধে ২৩ মে বিশেষ ফ্লাইটে শ্রীলঙ্কায় এসেছেন।
তাদের অনেকের করোনারি অ্যানজিওগ্রাফি ও এনজিওপ্লাস্টি, টেট্রালজি ফলআউট কারেকটিভ সার্জারি, রেডিওথেরাপি অ্যান্ড কেমোথেরাপি, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট রিপেয়ার ইত্যাদি উচ্চমানের অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা প্রয়োজন।
সেশলসের সব রোগীকে উপকূলীয় ওদাদাওয়া টুরিস্ট স্পটে পাঠানো হয়েছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে। তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি তদারকি করছে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শ্রীলঙ্কার বেসরকারি হাসপাতাল চেইন হেমাস হসপিটালস বিদেশী রোগীদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। শ্রীলঙ্কা কয়েক বছর ধরেই সেশলসের নাগরিকদের চিকিৎসা পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সবচেয়ে বেপরোয়াভাবে যে খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, সেটি হলো ভ্রমণ ও পর্যটন খাত। যত জটিলতাই থাকুক না কেন, শ্রীলঙ্কা জরুরি ভিত্তিতে পর্যটন খাতটি আবার চালু করতে চাইছে।
শ্রীলঙ্কার ট্রাভেল কোম্পানি পাঙ্গানর হলিডেজ প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও এ আর নরেন বলেন, আমরা অতিমারিটি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমাদের দেশ এখন ব্যবসার জন্য খুলে দিতে প্রস্তুত। পর্যটন খাতে গত বছর আমরা অকল্পনীয় অবস্থা (২১ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলা) পার করেছি। আর এখন আরেকটি সঙ্কট পাড়ি দিচ্ছি। এই কোম্পানিটি গত বছরের ইস্টার সানডে বাতিলকরণ সামাল দিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যবসা বেশ ভালোভাবে চালু করেছিল।
সূত্র : এসএএম