ভারতের রাফালের জবাব পাকিস্তানের জেএফ-১৭!
ভারতের রাফালের জবাব পাকিস্তানের জেএফ-১৭! - সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে স্থায়ী উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতীয় বিমান বাহিনী ২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যেই চারটি অত্যাধুনিক রাফাল জঙ্গিবিমানের প্রথম ব্যাচটি গ্রহণ করতে চাচ্ছে। অনেক বিতর্ক ও বিলম্বের পর ৭.৮৭ বিলিয়ন ইউরেতে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ৩৬টি রাফাল জেট কেনার চুক্তিটি হয় ২০১৬ সালে। হস্তান্তর সূচি অনুযায়ী ভারতীয় বিমান বাহিনী ২০২২ মাসে সবগুলো জেটই হাতে পাবে। মেটিয়র ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যন্ত আধুনিক ইলেকট্রনিক ওয়ারফোর স্যুটসজ্জিত রাফাল সংগ্রহের ফলে উপমহাদেশের ভারসাম্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর অনুকূলে ঝুঁকবে বলে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন কর্মসূচির দিকে নজর রাখছে। তবে বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে একই ধরনের বিমান সংগ্রহের পাকিস্তানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এর বদলে পাকিস্তান সম্ভবত দেশে তৈরী জেএফ-১৭ থান্ডার মাল্টিরোল ফাইটার জেট আধুনিকায়নের ওপর জোর দেবে।
নতুন জেএফ-১৭ ব্লক ৩ ফাইটারে একটি প্রোটোটাইপ প্রথমে আকাশে ওড়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এরপর থেকে জেটটি আরো কিছু পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২০২৫ সাল নাগাদ এতে এইএসএ রাডার সংযোজন করা হবে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী আশা করছে, এর ফলে তারা ভবিষ্যতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জয় রুখে দিতে পারবে। আরো কিছু প্রতিবেদনেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ব্লক ৩-এ চীনা পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত করা হবে।এ ধরনের অস্ত্র ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতেও নেই।
অধিকন্তু, ভারতীয় বিমান বাহিনী যেখানে নতুন প্লাটফর্ম প্রবতনের ওপর জোর দিচ্ছে, সেখানে পাকিস্তান বিমান বাহিনী আরো বেশি অস্ত্র ও সেন্সর আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই বিমান বাহিনীর মধ্যকার আকাশযুদ্ধে এই কৌশলের সুবিধা পায় পাকিস্তান। তারা কাশ্মিরের আকাশে একটি ভারতীয় মিগ-২১ ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
অবশ্য পাকিস্তান বিমান বাহিনী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভালোভাবে তাদের অভিযান পরিচালনা করতে পারলেও ভারতীয় বিমান বাহিনী গুণ ও সংখ্যাগত দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। বিশেষ করে সুখোই সু-৩০এমকেআই ও অত্যন্ত সক্ষম মিরেজ ২০০০ মাল্টিরোল বিমানের মাধ্যমে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনী এখনো তার এফ-১৬ বিমানের ওপর নির্ভর করে আছে। পাকিস্তানের হাতে ৭৫টির বেশির এফ-১৬ বিমান নেই। এগুলোর বেশির ভাগ আবার অনেক পুরনো, সেই ১৯৮০-এর দশকে সংগ্রহ করা। এছাড়া তাদের হাতে আছে ১০০টির বেশি জেএফ-১৭ (ব্লক ১ ও ব্লক ২)। আর আছে ১৯৬০-এর দশকের মিরেজ ৩ জঙ্গিবিমান।
পূর্ণ মাত্রায় প্রচলিত যুদ্ধে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সীমিত সামর্থ্য বেশ সমস্যায় পড়বে। তাছাড়া ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতেও বেশ ভালো মানের অস্ত্র আছে। পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে করাচিতে তারা হামলা চালাতে পারে। পাকিস্তানের নৌবাহিনী বেশ ছোট। তাদের নিজস্ব কোনো বিমানবহর নেই, তারা বিমানবাহিনীর ওপরই নির্ভরশীল।
এটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জন্য বেশ সমস্যার সৃষ্টি করছে। একদিকে পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মোকাবিলা করতে হবে তাদের, আবার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে। এই সমস্যার সমাধান করা যায় পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে চীনের জেএইচ-৭ বেশ কার্যকর অস্ত্র হতে পারে।
এই বিমানের দাম যেমন তুলনামূলকভাবে কম, একইভাবে এটি বেশ সক্ষম। এতে থাকা দূর পাল্লার জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ১০০ মাইল দূরের টার্গেটেও আঘাত হানতে পারে। এর মানে হলো, জেএফ-৭ হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে কাজ করতে পারে। পাকিস্তানের যুদ্ধ কৌশল এর ওপর ভিত্তি করেই নির্মিত। এই কৌশলটি বেশ দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছিল আর্জেন্টিনা, ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ডস যুদ্ধের সময়। ফরাসি সুপার এতেদার্দ স্ট্রাইক বিমানের সাহায্যে আর্জেন্টিনা এক্সসেট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে দুটি ব্রিটিশ রণতরী ডুবিয়ে দিয়েছিল।
আবার জেএইচ-৭-এর বিকল্প হতে পারে পাকিস্তানের হাতে থাকা ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এর নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র একটি নির্দিষ্ট পথ বেয়ে চলে। ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক ও ভারতীয় বিমান বাহিনী ঘায়েল করে দিতে পারবে। দ্বিতীয়ত ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতি ত্বরান্বিত করতে পারে। নয়া দিল্লি বা ইসলামাবাদ যেই ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করুক না কেন, তাতে করে পূর্ণ মাত্রায় পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী আগে এইচ-৫, জে-৬ ও এফ-৭ ব্যবহার করেছে। ফলে এখন জেএইচ-৭ যদি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় এবং জেএফ-১৭ ব্লক ৩ প্রবর্তন করা যায়, তবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে ফেলতে পারবে পাকিস্তান।
আবার চীনও পাকিস্তানের কাছে তাদের জেএইচ-৭ বহর বিক্রি করতে আগ্রহী। চায়না ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন ও এরোস্পেস এক্সিবিশনে চীন তাদের এই জঙ্গিবিমান প্রদর্শন করেছে বিক্রির আশায়। তাছাড়া পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে বিদেশী জঙ্গিবিমান কেনার সম্ভাবনা হ্রাস পাওয়ায় জেএইচ-৭ সম্ভবত হতে পারে এই উত্তপ্ত অঞ্চলে পাকিস্তানের একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প।
দি ডিপ্লোম্যাট