আরো বড় বিপদের হুঁশিয়ারি চীনের 'ব্যাট উওম্যানের'
‘ব্যাট উওম্যান’ শি ঝেংলি - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ তো সবে শুরু। আর বড় বিপদ আসছে। পরবর্তী সংক্রামক রোগের হাত থেকে মানবজাতিতে বাঁচাতে হলে এখন থেকে প্রস্তুত হতে হবে। এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন চীনের ‘ব্যাট উওম্যান’ নামে পরিচিত ভাইরাস বিশেষজ্ঞ শি ঝেংলি। তিনি বর্তমানে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ডেপুটি ডিরেক্টর। এই সেই ল্যাবরেটরি, যেখান থেকে করোনার উত্পত্তি বলে অভিযোগ তুলেছে গোটা বিশ্ব। যদিও শি বা ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ওয়াং ইয়ানয়ি বারবার তা খারিজ করেছেন।
কিন্তু এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্যাট উওম্যান। সোমবার চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে শি বলেন, যে করোনা ভাইরাসের এখন পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। পরবর্তী সংক্রামক রোগের মহামারী থেকে মানুষকে বাঁচাতে চাইলে, আমাদের অতি অবশ্যই প্রাকৃতিকভাবে বন্য প্রাণীদের শরীরে থাকা ভাইরাসগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। বাকিদেরও আগাম সতর্ক করতে হবে। তা না হলে আরেকটা মহামারী আসবে।
এমন অসংখ্য প্রাণঘাতী সংক্রামক ভাইরাস রুখতে আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলেই মনে করে গবেষক শি ঝেংলি। তাঁর মতে, ভাইরাস নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী এবং সরকারকে স্বচ্ছ এবং একে অপরের সহযোগী হতে হবে। বিজ্ঞান নিয়ে রাজনীতি খুবই দুঃখের বিষয়। সেক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের কাজ অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাকতালীয়ভাবে যেদিন বেইজিংয়ে চীনের ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেস শুরু হল সেদিনই এই সাক্ষাত্কার দেন শি।
এবারের ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসে মূল আলোচনার বিষয় হলো করোনা উত্পত্তি নিয়ে চীনের উপর আমেরিকার চাপ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, উহানের ল্যাবরেটরি থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে গত বৃহস্পতিবারই চীনা পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেও এর কোনো প্রমাণ নেই।
একইভাবে ‘ব্যাট উওম্যান’ শিও জানিয়েছেন, তিনি যে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতেন তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে করোনার সংক্রমণের কোনো মিল নেই। তার ল্যাবের সঙ্গে যে এই মহামারীর কোনো যোগ নেই সেকথা সোশ্যাাল মিডিয়াতেও জানিয়েছিলেন তিনি।
করোনাভাইরাসে বিশ্বে মৃত্যু সাড়ে ৩ লাখ ছাড়াল
করোনাভাইরাস মহামারিতে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৪৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে নিশ্চিতভাবে আক্রাতের সংখ্যা ৫৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ৯৮ হাজার ৯১৬ রোগীর মৃত্যু এবং ১৬ লাখ ৮১ হাজার ২১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির শুধুমাত্র নিউইয়র্ক রাজ্যে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৩০২ জন।
আক্রান্তের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে ব্রাজিল। ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিতে ৩ লাখ ৯১ হাজার ২২২ জন করোনার শিকার হয়েছেন।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় খারাপ অবস্থায় আছে যুক্তরাজ্য (৩৭ হাজার ১৩০ জন)। এরপরই রয়েছে ইতালি (৩২ হাজার ৯৫৫ জন), ফ্রান্স (২৮ হাজার ৫৩৩ জন) এবং স্পেন (২৭ হাজার ১১৭ জন)।
চীন ও নিউজিল্যান্ডের মতো কিছু দেশ দৃশ্যত করোনাভাইরাসের এ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। সেই সাথে ইউরোপ লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু আমেরিকা বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা এখন সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের। গত ১১ মার্চ এ সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সূত্র : বর্তমান ও ইউএনবি