ডায়াবেটিস রোগীদের ঈদ : ৯টি পরামর্শ
ডায়াবেটিস রোগীদের ঈদ : ৯টি পরামর্শ - সংগৃহীত
রোজা ভাঙ্গার উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। এটা তিন দিন হয়ে থাকে। সামাজিকভাবে সমবেত হয়ে ওয়াজিব নামাজের মাধ্যমে এ উৎসব পালন শুরু হয়। কিন্তু কোভিড-১৯-এর কারণে এবারের ঈদুল ফিতর অন্যরকম পরিবেশে পালন হবে।
উৎসবের অন্যতম উপাদান হলো উপাদেয় খাবারের আয়োজন। এক মাস সিয়াম পালনের পর স্বাভাবিকভাবেই খাবারের দিকে বেশি মনোযোগ থাকবে সকলের, ডায়াবেটিক রোগীরাও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু ডায়াবেটিক রোগীদের সতর্ক হয়ে খাবার গ্রহণ করা উচিৎ।
খাবারের গাইড লাইন তৈরি করুন
খাবার শুরুর আগে ডাক্তার অথবা ডায়েটেশিয়ানের সহায়তায় অথবা নিজে নিজেই একটি গাইড লাইন তৈরি করা যেতে পারে। এই গাইডলাইন মেনে চলার অনুভূতি বা মানসিকতা আপনাকে খাবার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে এবং বেশি খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত রাখতে পারে।
প্লেটে বেশি খাবার রাখবেন না
আপনার প্লেটে খাবারের স্তুপ করে রাখবেন না অর্থাৎ প্লেটে বেশি খাবার নেবেন না। ৩০ দিন রোজা রাখার পর আপনার মন হয়তো চাইতে পারে একটু বেশি খাবার অথবা একটু বেশি মুখরোচক খাবার চাইতে পারে। অথবা আপনাকে খাবার বেশি খেতে চাপ দিতে পারে আপনার আপনজনরা। আপনি বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করুন।
মিষ্টি খেতে মন চাইলে কী করবেন ?
এ সময় হয়তো মিষ্টি খাওয়ার জন্য আপনার মন চাইতে পারে। এ প্রবণতা রোধ করতে আপনি শুকনো খেজুর চিবোতে পারেন অথবা কিছুটা কাঠ বাদাম। শুকনো খেজুরে মিষ্টি কম থাকে। এটা আপনার মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতাকে রোধে করতে পারে। একান্তই খেতে চাইলে আপনি ঘরে তৈরী (হোম মেড) মিষ্টি খেতে পারেন যেখানে মিষ্টির স্বাদ পাবেন কিন্তু এতে চিনি একেবারেই কম থাকবে। আবার একান্তই মিষ্টি স্বাদের কিছু খেতে চাইলে আপনি কৃত্রিম মিষ্টি (আর্টিফিশিয়াল সুইটনার) ব্যবহার করতে পারেন যাতে ক্যালরি থাকবে না। এছাড়া মধু ব্যবহার করা যেতে পারে চিনির বদলে। মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে সাদা আটার চেয়ে ব্রাউন বা লাল আটা ব্যবহার করতে পারেন।
খাবার খাওয়া শেষ তো উঠে পড়ুন
ডায়াবেটিক রোগীদের উচিৎ খাবার খাওয়ার পর পরই খাবারের স্থান বা টেবিল থেকে উঠে যাওয়া। অন্যদের সাথে বসে গল্প করতে থাকলে অন্যদের অনুরোধে অথবা এমনিতেই একটা কিছু চিবানোর ইচ্ছায় আবারো খাবার খাওয়া হয়ে যেতে পারে। এটা করতে যাবেন না। অতিরিক্ত সামান্য হলেও পরিত্যাগ করুন।
শাক-সবজি আগে খান
ঈদের মধ্যে আপনার খাবার টেবিলে আগে শাক-সবজি বা শাক-সবজি থেকে তৈরি খাবার আগে আনতে বলতে পারেন। এ জাতীয় খাবার আপনার ক্ষুধা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে বেশি খাবার যাবে না পেটে। শাক-সবজিতে যেমন ক্যালরি অথবা চর্বি থাকে না তেমনি এর মধ্যে আঁশ বেশি থাকে। এটা আপনার জন্য উপকারী হতে পারে যদিও আমিষ জাতীয় খাবারের মতো তেমন স্বাদ পাবেন না।
দৈনিক রক্তের গ্লুকোজ মাপুন
ঈদ উৎসব বলে বেশি খাবার আপনি খেয়ে ফেলতে পারেন। এ প্রবণতা আপনি রোধ করতে পারেন ঈদের দিনে অথবা উৎসবের তিন দিনেও দৈনিক রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মাপুন। এটা আপনাকে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। রক্তে গ্লকোজের মাত্রা ১৫-এর বেশি হয়ে গেলে আপনি উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছেন ধরে নিতে হবে। ফলে আপনার পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এতে আপনার ঝিমানি বা তদ্রালু ভাব আসতে পারে। এমন হলে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। তারা আপনার রক্তে গ্লকোজের মাত্রা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেবেন অথবা ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েও গ্লূকোজ কমানোর কথা বলতে পারেন।
ডাক্তার না পেলে কী করবেন?
ঈদের উৎসবে আপনি ডাক্তারের নাগাল নাও পেতে পারেন। এমন অবস্থায় পড়লে আপনি ঘাবড়াবেন না। আপনি হাঁটতে শুরু করুন, যত দ্রুত সম্ভব। হাঁটতে না পারলে আপনি গ্লুকোজ কমিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত যে ব্যায়ামগুলো করে থাকেন, তা করুন। ব্যায়াম শরীরে উপকারী হরমোন ছাড়তে শুরু করে। এটা আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এটা ইনস্যুলিনের পরিমাণও বাড়াবে।
পানি পান করুন ঘন ঘন
স্বল্প পরিমাণে ঘন ঘন পানি পান করুন। পানি পান পানি শূন্যতা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বেশি চিনি খেয়ে ফেললে আপনার পানি পানে কিডনি তা শরীর থেকে বের করে দেবে। প্রতি ঘন্টায় এক কাপ করে পানি পান করুন।
ভাত থেকে সাবধান
ভাতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ বা শর্করা থাকে। এতে ফাইবার বা আঁর্শের পরিমাণ একেবারেই কম। ভাত একটি উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ উচ্চ গ্লাইসেমিক রয়েছে। এ কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরে গ্লুকোজকে ছড়িয়ে দেয়। আবার গ্লুকোজ রক্তে ইনস্যুলিন দ্বারা শোষিত হয়। পরে শোষিত গ্লুকোজ কোষে জমা হয়ে শক্তি উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিক রোগীরা ইনস্যুলিন শোষন করতে পারে না বলে রক্তে গ্লূকোজের মাত্রা বেড়ে রোগীর নানা ধরনের ক্ষতি করে থাকে। ভাত ছাড়া অন্য আঁশ বা ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। আঁশ জাতীয় খাবারে বেশি পরিমাণে ক্যালরি থাকে না। এটা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
ডায়াবেটিক রোগীরা যে খাবারই খাবেন, তাতে কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও পানি থাকতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীর কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন, কিন্তু পরিমাণে কম খেতে হবে।
(ডায়াবেটোলজিস্ট, ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ অবলম্বনে)