নেই উপসর্গ, তবু করোনার উপস্থিতি কেন?
নেই উপসর্গ, তবু করোনার উপস্থিতি কেন? - সংগৃহীত
অ্যান্টিবডি বনাম ভাইরাস। এই দুইয়ের জেতা হারার ওপরই মানব দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ লাখ ৫০ হাজার বলে জানা গেছে, তবে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের কথা ঠিক হলে এই সংখ্যাটি কম করে হলেও বিশ্বে ১১ কোটি ৫০ লাখ! এত সংক্রমণ কীভাবে? উত্তরে তারা বলছেন, অনেকের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হলেও তার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, অর্থাৎ তিনি অসুস্থ হননি।
ফলে তার হাসপাতালে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়েনি, পরীক্ষা না করায় রোগীর হিসাবের মধ্যেও তিনি আসেননি। করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা শনাক্ত রোগীর সংখ্যার চেয়ে বেশি বলে এত দিন বলে এসেছেন গবেষকরা। তবে তা যে এত বেশি তা ভাবাই যায়নি। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলেও তা এখনো বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়িত হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা কাউন্টির ৩ হাজার ৩৩০ জন ব্যক্তির উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে ৫০ থেকে ৮৫ গুণ বেশি সংক্রমণ ঘটেছে। আমেরিকায় করোনাভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ক্যালিফোর্নিয়াতেই, এখন অবশ্য নিউ ইয়র্কসহ পূর্বাঞ্চলই বেশি বিপর্যস্ত।
ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩০ হাজারের মতো, এর মধ্যে সান্তা ক্লারায় সরকারি হিসাবে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৭০ জন, তার মধ্যে ৭৩ জন মারা গেছেন। তবে গবেষণাটি যখন চালানো হয়, তখন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজারের মতো, আর মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দাবি, সান্তা ক্লারায় আসলে ৪৮ হাজার থেকে ৮১ হাজার মানুষের দেহে নতুন এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, যা শনাক্ত সংখ্যার চেয়ে বহু গুণ বেশি। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যদি দেহে করোনা ভাইরাস থেকেই থাকে তাহলে তারা অসুস্থ নন কেন?
উত্তরে মানবদেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা অ্যান্টিবডির কথা বলছেন এই গবেষকরা, যা পরীক্ষা করেই তারা বিপুল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার দাবি করছেন। রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা মানুষের দেহে সব সময়ই কার্যকর থাকে। মানুষের দেহে যখন বাইরে থেকে অচেনা কিছু প্রবেশ করে, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি তাকে ক্ষতিকর সন্দেহ করে, তখন তা ঠেকাতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সেই অ্যান্টিবডি তখন নির্দিষ্ট ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। এই লড়াইয়ে জীবাণু জিতলে মানুষ অসুস্থ হয়। এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বলেই প্রতিনিয়ত নানা রোগ-জীবাণুর মধ্যে থেকেও মানুষ অসুস্থ না হয়ে সচল থাকে। তবে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়, তিনি অসুস্থ হন।
স্ট্যানফোর্ডের এই গবেষক দল সান্তা ক্লারার বাসিন্দাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করে রোগীর সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি মানুষের মধ্যে তা দেখতে পেয়েছেন। অর্থাৎ কখনও তাদের দেহেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছিল, কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারেনি বলে তাদের হাসপাতালে যেতে হয়নি। এর ভিত্তিতে তারা বলছেন, নতুন করোনাভাইরাস সার্স কিংবা মার্সের চেয়ে ভয়ানক অবস্থা তৈরি করলেও যে মাত্রায় ভয়ঙ্কর বলা হচ্ছে, আসলে ততটা না। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এরন বেনডেভিড বলেছেন, 'আমরা মহামারির কোন পর্যায়ে আছি, তা বুঝতে এই গবেষণাটি একটি পথ দেখাবে।‘
সূত্র : পূবের কলম