চীন সীমান্তে চাপা উত্তেজনা, গোপনে লাদাখ সফরে ভারতীয় সেনাপ্রধান
ভারতীয় সেনাপ্রধান - সংগৃহীত
একদিকে চীন এবং অন্যদিকে নেপাল। দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটছে সীমান্ত লাগোয়া জমির দখল নিয়ে। বস্তুত গত ১৫ দিনে চীন সীমান্তে উত্তেজনা প্রায় চরমে পৌঁছেছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেই শুক্রবার হঠাৎ গোপনে ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে লাদাখের চীন সীমান্ত এবং লে পরিদর্শন করতে যান। সাধারণত ভারতের সেনাপ্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রী দেশের কোনো সীমান্ত অথবা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পরিদর্শনে গেলে, কৌশলগত কারণেই বেশি করে প্রচার করা হয় সরকারি সফর হিসেবে। এর মাধ্যমে সীমান্তবর্তী ভূমিখণ্ডের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে একটা সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া যায়। কিন্তু শুক্রবার সম্পূর্ণ গোপনেই লে সফর করে ফিরে এসেছেন সেনাপ্রধান। আর সেই কারণেই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। কেন হঠাৎ এই লকডাউনের মধ্যেই স্বল্পসময়ের সফরে সেনাপ্রধান উড়ে গেলেন লাদাখে, তা নিয়ে প্রবল কৌতুহলের সঞ্চার হয়েছে সব মহলে।
সিকিম, লাদাখ, উত্তরাখণ্ড সীমান্ত বরাবর চীন ও নেপালের সক্রিয়তা হঠাৎ করেই উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিকিম এবং লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনা জওয়ানদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে সম্প্রতি। আহত হয়েছেন দু’পক্ষের বেশ কিছু সেনা সদস্য। উত্তেজনা প্রশমন করে স্থানীয়ভাবে আলোচনায় বিষয়টি মিটে গেছে বলে মনে করা হলেও, আদতে কিন্তু তারপর থেকেই লাদাখ সীমান্তজুড়ে চীন তাদের সেনাবাহিনী মোতায়েন বাড়িয়ে চলেছে। একইভাবে লাদাখ, লে এলাকার যে একাধিক লেক রয়েছে সেখানেও চীনের অংশে টহলদারি নৌকার সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেক বেড়ে গেছে। আর চীনের এই অতি সক্রিয়তা দেখেই গত সপ্তাহে ভারতও লাদাখের এয়ারবেসে এয়ারফোর্সের দুটি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এই পাল্টা জবাব পেয়েই দু’দিন আগে চীন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ভারত যেভাবে লাদাখে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে, এরপর চীনও তার যোগ্য জবাব দেবে। ওই হুমকির পাল্টা উত্তর দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, ভারতীয় বাহিনীর স্বাভাবিক টহলদারিকেও চীন অস্বাভাবিক আখ্যা দিচ্ছে, এটা খুবই বিস্ময়কর। ভারত নিজের এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
এই বাদানুবাদ আর বিবৃতির লড়াইয়ের মধ্যেই আবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী লাগাতার ভারতবিরোধী বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। উত্তরাখণ্ডের সীমান্তে ভারতের সড়ক নির্মাণ আটকে দেয়ার হুমকিও দিয়েছে নেপাল। একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে নেপাল সরকার জানিয়েছে, ভারতের মধ্যে থাকা তিনটি অঞ্চল আসলে নেপালেরই। ভারত যেন অবিলম্বে ওই জমি ছেড়ে দেয়।
ভারত যথেষ্ট উদ্বিগ্ন নেপালের এই উগ্র আচরণে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, এটা স্পষ্ট যে নেপালকে ইন্ধন দিচ্ছে চীন। আগেও নেপালকে নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসতে পরিকাঠামো নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকার সহায়তা ঘোষণা করেছে বেইজিং। কিন্তু নেপাল আগে কখনো এতটা ভারত বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেনি, যা এখন করছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে ভারতের সেনাপ্রধান শুক্রবার লাদাখ সীমান্তে গিয়ে সেখানে মোতায়েন সেনা রেজিমেন্টের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। তার সঙ্গে ছিলেন নর্দার্ন আর্মি কমান্ডারও। ওই বৈঠক নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। আর তাই বেড়েছে রহস্য! কী চলছে ভারতের উত্তরতম সীমান্তে?
সূত্র : বর্তমান