লিবিয়া : সৌদি-আমিরাত-ইসরাইলি নীল নক্সা রুখে দিচ্ছে তুরস্ক
লিবিয়া : সৌদি-আমিরাত-ইসরাইলি নীল নক্সা রুখে দিচ্ছে তুরস্ক - সংগৃহীত
তুরস্কের লিবিয়া অপারেশন ভূমধ্যসাগরের প্রতিটি ক্ষমতার মানচিত্রকে পরিবর্তন করেছে। আর সামনে আরো পরিবর্তন অব্যাহত রাখতে চলেছে। তুরস্ক একটি নতুন এবং কার্যকর ভূমধ্যসাগরীয় শক্তি হিসেবে এর মাধ্যমে খ্যাতি পেয়েছে।
মহামারী পরবর্তী “নতুন উত্থানের সময়ের” সবচেয়ে মারাত্মক বিস্ময় হলো লিবিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় তুরস্কের পুনর্নির্মাণ চেষ্টা। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো, ইসরাইল ও এই অঞ্চলের অন্য
দেশগুলোকে ভূমধ্যসাগর এবং এর আশেপাশের জন্য তাদের পরিকল্পনাগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং উসমানিয়া সাম্রাজ্যের পতনের পরে এটি প্রথম ঘটেছে। এই ভূ-রাজনৈতিক মন, যার উপস্থিতি আজ ভূমধ্যসাগরে ও লিবিয়ায় অনুভূত হচ্ছে, খুব শিগগিরই তা পুরো অঞ্চল জুড়ে গভীরভাবে অনুভূত হতে চলেছে। এটি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
তুরস্কের ভূ-রাজনীতিক মন পরীক্ষা করেছে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল পারস্য উপসাগর থেকে উত্তর আফ্রিকা এবং বলকান অঞ্চল থেকে লোহিত সাগর হয়ে ককেশাস আর মধ্য এশিয়া পর্যন্ত তুর্কি ভূ-রাজনৈতিক শক্তি অক্ষ অনুভূত
হয়েছে। ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব, মিসর ও ইসরাইলের প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল লিবিয়ায় এক সন্ত্রাসী ব্যারনকে স্বৈরশাসক হিসাবে নিয়োগ করা এবং এই দেশটিকে তিনটি রাষ্ট্রীয় স্তরে বিভক্ত করা। এই পরিকল্পনা তুরস্ক বানচাল করে দিয়েছে।
কয়েক শ' মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান অস্ত্র সহায়তা, সুদান ও আফ্রিকা থেকে আনা ভাড়াটে সেনা, এই অঞ্চলে মোতায়েন করা সন্ত্রাসী সংগঠন, সার্বিয়া ও ইউরোপ থেকে নিয়ে আসা গুন্ডাবাহিনী, রাশিয়া ও অন্য অনেক দেশ থেকে আনা কোম্পানির সশস্ত্র যোদ্ধা বাহিনীর সাথে তুরস্কের মোকাবেলা হয়েছে। তাদের পক্ষে এই মোকাবেলায় আর সামান্য কোনো অগ্রগতি অর্জনকে অসম্ভব করে তোলা হয়। তাদের সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল তুরস্ক।
খলিফা হাফতারের সন্ত্রাসী সংগঠন, যেটি লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল দখল করেছিল এবং পরে দেশের পশ্চিমেও দর্শনীয় স্থান তৈরি করে পুরোপুরি ত্রিপোলির দিকে এগিয়ে যায়। সেটাকে ব্যর্থ করে তুরস্কের অত্যন্ত চতুর সামরিক পরিকল্পনায়
হতবাক হয়ে যায় হাফতারকে সমর্থনকারী দেশগুলো ।
তুরস্ক, মানুষবিহীন ড্রোন- ইউএভির মাধ্যমে সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের এক আশ্চর্যজনক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো এটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়। এর পরও এ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরও কার্যকরভাবে
লিবিয়ায়।
হাফতার ও তার সহযোগীদের বিমানবাহিনী ধ্বংস হয়ে গেছে। যেকোনো চালান এবং রসদ সরবরাহের জন্য তার সুযোগটি নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ত্রিপোলি সরকার ওয়াটিয়া সামরিক ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে এবং পশ্চিমাঞ্চলে হাফতারের প্রভাব ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্যান্টসির ফিয়াস্কো। তুরস্ক বিশ্বকে একটি নতুন যুদ্ধ পদ্ধতি শিখিয়েছে প্যান্টসির-এস ১ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করে তা হাফতারকে দিয়েছিল একে একে। ১০ দিনের মধ্যে মোট ১৫
প্যান্টসির ধ্বংস হয়ে গেছে, যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ১৪.৭ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়ার একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র তুরস্কের ড্রোন দিয়ে লিবিয়ায় ধ্বংস করা হয়েছিল।
তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী (টিএএফ) বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে নতুন প্রজন্মের এক যুদ্ধের পদ্ধতি শিখিয়েছে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধ মডেলের প্রদর্শন করছে।
ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) সরকারের সামরিক বাহিনী একের পর এক দেশের পশ্চিম এবং দক্ষিণের শহর এবং পৌরনগরগুলো দখল করেছে আর এখন পূর্ব দিকে মনোনিবেশ করছে। হাফতার এখন আক্রমণাত্মক অবস্থান থেকে সরে এসে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিয়েছে।
রাশিয়ান মিগ কি লিবিয়ায় তুরস্ককে আঘাত হানছে?
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং হাফতারকে সমর্থনকারী শক্তিগুলো এখন প্যানিক মোডে রয়েছে। তারা এ জাতীয় একটি ফলাফল হজম করতে অক্ষম ছিল। তারা জয়ের জন্য কিছুটা সময় এবং প্রস্তুতি নিতে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছিল। অবশ্যই, কেউ তাতে মনোযোগ দেয়নি। এখন, একই শক্তিগুলো দেশের পূর্বাংশকে তাদের হাতে রাখার পরিকল্পনা করছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত গোপনে সমস্ত দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে লিবিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটি থেকে হাফতারের জন্য আটটি বিমান পাঠিয়েছে।
বৈধ লক্ষ্য হয়ে উঠবেন : এটি ছিল হাফতারের কর্তাদের প্রতি বার্তা
রাশিয়ান জঙ্গি বিমান বহরের উপর ভিত্তি করে সাহস তৈরি করে সন্ত্রাসবাদী ব্যারন হাফতার বিবৃতি দিয়েছে, “আমরা তুরস্কের বিরুদ্ধে লিবিয়ার ইতিহাসের বৃহত্তম বিমান হামলা পরিচালনা করতে যাচ্ছি।”
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এর প্রতিক্রিয়া জানায় এই বলে যে, “যদি লিবিয়ায় আমাদের স্বার্থ লক্ষ্য করে আঘাত করা হয়, আমরা হাফতারকে আমাদের বৈধ লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করব।” এই প্রতিক্রিয়া হাফতারের জন্য নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার জন্যও ছিল। ভূমধ্যসাগরে আমাদের যুদ্ধজাহাজগুলো, লিবিয়ার উন্মুক্ত অংশে রাজধানী ত্রিপোলিতে পৌঁছে এবং এটি সুরক্ষার অধীনে গিয়েছে।
প্যান্টসিরগুলো পরিষ্কার করা অন্য এক অপারেশনের সংকেত। হাফতার সচেতন নয় যে, তাঁর বিমান অভিযানের ঘোষণাটি রাশিয়ার মোতায়েন করা বিমানকেও ফায়ারে ফেলে দিচ্ছে। রাশিয়ান নেতা ভ্লাদিমির পুতিনেরও এটি বুঝতে হবে।
* তুর্কি দৈনিক ইনি সাফাকের সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুলের লেখা থেকে