ঈদের দিন যেভাবে কাটবে খালেদা জিয়ার

বেগম খালেদা জিয়া - সংগৃহীত
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েও নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এবার ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফলে নেত্রীকে কাছ থেকে এক নজর দেখার অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হচ্ছে নেতাকর্মীদের। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই বেগম জিয়া নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছেন। বলতে গেলে মুক্তির পর গত দুই মাস কোয়ারেন্টিনেই কেটেছে তার।
গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান অসুস্থ খালেদা জিয়া। এখনো তিনি অসুস্থ। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এখনো তার উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়নি।
জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বিএনপি প্রধান। এ উপলক্ষে তার গুলশানের বাসায় চলছে প্রস্ততি। ভাইবোন তাদের পরিবারের সবাই কাছে থাকলেও দূরে রয়েছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, বৌ ও নাতনীরা। তবে ঈদের দিন স্কাইপিতে শুভেচ্ছাবিনিময়ে সবাই এক সাথে মিলিত হবেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও মেয়ে জাহিয়া রহমান প্রতিবার ঈদে দেশে আসেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আসতে পারছে না তারা। তবে দেশে আসতে না পারলেও শাশুড়ির জন্য ঈদের পোশাক, খেজুরসহ বিভিন্ন রকমের শুকনো খাবার পাঠিয়েছেন সিঁথি। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এবং বোন সেলিমা ইসলাম ঈদের আয়োজন করছেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের মেনু রাখা হয়েছে। পোলাও, মুরগির রোস্ট, খাসির রেজালা, জর্দা সেমাইসহ অন্যান্য খাবারের সাথে থাকছে খালেদা জিয়ার পছন্দের স্পেশাল কাউনিয়ার পায়েস।
গত বছর খালেদা জিয়ার ঈদ কেটেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা দেখা করার অনুমতি পেলেও তাদের নিয়ে যাওয়া খাবার খেতে দেয়া হয়নি তাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ছোট বোন সেলিমা ইসলাম নয়া দিগন্তে বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি এবার সবগুলো রোজা রেখেছেন। ২ বছর পরে আমরা তার সাথে ঈদ করবো এটি অত্যন্ত সুখের বিষয়। তিনি বলেন, এবারের ঈদে তার পছন্দ অনুযায়ী খাবারের মেনু রাখা হয়েছে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন মানসিকভাবে। তবে শরীর এখনো ভালো হয়নি। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী বাইরের কাউকে তার সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী গিয়ে দেখাশোনা করেন। আর গৃহপরিচারিকা ফাতেমা তো সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছে। ঈদে আত্মীয়স্বজন অনেকেই শুভেচ্ছা জানাতে আসতে চেয়েছেন কিন্তু আমরা না করেছি। এমনকি দলের সিনিয়র নেতারা ছাড়া অন্য কেউই দেখা করার অনুমতি পাবেন না।
অন্য দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা এবার ঢাকাতেই ঈদ করবেন। করোনার ঝুঁকি এড়াতে তারা এলাকায় যাননি। শুধু দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার নিজ এলাকা চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ঈদের দিন সকালে মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন। ফেরার পথে বনানীতে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন। এরপরে ফিরোজায় যাবেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে ঈদের শুভেচ্ছাবিনিময় করতে। কারন, কারাগারে থাকা অবস্থায় কখনোই তারা ঈদের দিন দলীয় চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করার অনুমতি পাননি। তাই এবার সেই সুযোগটি হারাতে চান না। খালেদা জিয়ার সাথে শুভেচ্ছাবিনিময় শেষ করে নেতারা যে যার বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদের দিন কাটাবেন।