আমফান দৈত্যর তাণ্ডবলীলায় তছনছ গোটা দ্বীপভূমি

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 21, 2020 06:15 am
আমফান দৈত্যর তাণ্ডবলীলায় তছনছ গোটা দ্বীপভূমি

আমফান দৈত্যর তাণ্ডবলীলায় তছনছ গোটা দ্বীপভূমি - সংগৃহীত

 

তিন লাখ মানুষের ঝকঝকে গোছানো সাগর এখন অবরুদ্ধ ও ধ্বংসস্তূপ। বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার আমফান দৈত্যর তাণ্ডবলীলায় তছনছ হয়ে গেছে গোটা দ্বীপভূমি ও তার জনজীবন। অন্ধকার বিভীষিকাময় চারপাশে এখন শুধুই কান্নার সুর। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। কয়েক দিন আগে সদ্য মাঠ থেকে কাটা ধান গোলায় ভরা ছিল। সেই গোলাভরা ধান আর নেই। বড় থেকে ছোট সমস্ত গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফরমার ভেঙে নুয়ে পড়েছে বড় রাস্তা থেকে অলিগলিতে। একপলক দেখলে মনে হতে পারে, অদৃশ্য সেই দৈত্য একেবারে গোড়া ধরে টেনে উপড়ে ভাঙচুর করে দিয়ে গেছে।

কারো বাড়ির ছাদের অ্যাসবেসটাস, কারো ছাদের খড়ের ছাওনি কারো জানালার কাচ ভেঙে উড়িয়ে নিয়ে ফেলেছে রাস্তার উপর নয়তো ফাঁকা মাঠে। সকালে যে বাড়ি ছিল পরম আশ্রয়স্থল, অনেক জায়গায় বিকেলের পর তা আর অবশিষ্ট নেই। বুধবার বিকেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাগরের রুদ্রনগরে দাঁড়িয়ে এভাবেই আখো দেখা ভয়ঙ্কর সেই ঝড়ের প্রত্যক্ষ বিবরণ দিচ্ছিলেন মাঝ বয়সী কপিল রায়।

ঘূর্ণিঝড়ের কথা বলতে গিয়ে বারে বারে আতঙ্কের সুর শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। একটাই কথা বলছিলেন তিনি। ভয়ঙ্কর খুব ভয়ঙ্কর। এর আগে আইলা ও বুলবুলের মতো ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু আমফানের চরিত্র ও তার দাপট একেবারে আলাদা। এদিন দুপুর দেড়টা থেকে হাল্কা বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হয়। সে সময় এর অতিপ্রাকৃতির চেহারা বুঝতে পারিনি। ঠিক আড়াইটা থেকে পৌনে তিনটার সময় চারপাশ থেকে সাপের হিসহিস সুর আর ভো ভো করে চাপা গর্জন সাগরকে গ্রাস করে ফেললো। বিকট শব্দ করে আছড়ে পড়ল বাড়ি, রাস্তা থেকে আশপাশ এলাকায়। জানালা দিয়ে সামনের পুকুরের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম। একহাত সমান পুকুরের জলে ঢেউ উঠেছে। ভুল দেখছি না তো। ধীরে ধীরে দৈত্য খোলস খুলে বের হল। উত্তর দিকের জানালা, দরজা ধরে হ্যাঁচকা টান মারছে। বাতাসের বেগ এতটাই যে, দরজায় দমাদম শব্দ হচ্ছে। এরমধ্যে বৃষ্টির ঝাপটায় ঘরের মেঝে জলেজলাকার। তা ঠিক করতে গিয়ে শুনলাম জানালার কাচ ভাঙার শব্দ। একটা নয়, পর পর দু’টো জানলার কাচ চুরচুর করে ভেঙে গেল। এরপর সেখান দিয়ে আরো দমকা বাতাস ঘরে ঢুকে লণ্ডভন্ড করে দিলো। ঘরে জিনিসপত্র সব উড়িয়ে দিল। কোনটা ধরব, কোনটা বাঁচাব দিশেহারা হয়ে গেলাম।

তিনিব লেন, যত সময় এগল, ততই তার তীব্রতা ও দাপট বাড়তে থাকল। চোখের সামনে দেখলাম, আমার ছাদে বসানো পানির ট্যাঙ্ক তুলে বাইরে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। বাড়িটা বেশ কয়েকবার কেঁপে উঠল। এবার সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। পৌনে দু’ঘণ্টা পর ঝড় থামলে বাইরে বেরিয়ে চমকে উঠলাম। সাজানো-গোছানো সাগর যেন ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। কচুবেড়িয়া থেকে কপিলমুনি পর্যন্ত যাওয়া রাস্তা উপর এক পা অন্তর ছোটবড় অসংখ্য গাছ পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি, বিদ্যুতের খুঁটি ও ট্রান্সফর্মারগুলো টেনে-দুমড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার উপরে দু’পাশ থেকে অ্যাসবেস্টর-টিনের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us