কলারোয়ার বিষমুক্ত হিমসাগর আম
কলারোয়ার বিষমুক্ত হিমসাগর আম - সংগৃহীত
চলতি মৌসুমে কলারোয়ার বিষমুক্ত হিমসাগর আম ইউরোপে রফতানি হচ্ছে না। বিষমুক্ত আম রফতানির লক্ষ্যে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করলেও করোনার থাবায় এ বছর আম রফতানির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ফলে কয়েক কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন উপজেলায় শত শত আমচাষি। তবে এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাজধানীর বড় বড় সুপারশপ ও সারা দেশে সঠিকভাবে বাজারজাত করা করা সম্ভব হলে চাষিদের ক্ষতি কিছুটা কমবে।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর বিদেশে আম রফতানি করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যে কারণে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে উপজেলার আমচাষিদের দেশের বাজারে আম বিক্রির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কলারোয়া উপজেলায় ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। উপজেলায় সর্বমোট দুই হাজার ছয় শ’ ছোট-বড় বাগান রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি অফিস থেকে জৈব সার, আর্সেনিকমুক্ত পানি ও মাছি-পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে বিষমুক্ত রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকদের কাছ থেকে ১২৫টি বাছাইকৃত আমবাগান কৃষি অফিস সরাসরি তত্ত্বাবধায়ন করছে। বাছাইকৃত বাগানগুলোরার মধ্যে ৫০টি বাগান থেকে ১০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাকি ৭৫টি বাগান থেকে ৩০০ মেট্রিক টন বিষমুক্ত আম দেশের বৃহৎ সুপারশপগুলোতে সরবরাহের জন্য নির্ধারণ করা আছে।
উপজেলার কেরালকাতা গ্রামের আম ব্যবসায়ী কবিরুল ইসলাম জানান, এ বছর ১৬ লাখ টাকা দিয়ে আমের বাগান কিনেছেন। অন্য বছরের মতো খরচ বাদেও পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে আম বিক্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন। প্রতি বছর ৪-৫ লাখ টাকার গুটি আম (কাঁচা আম) বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে বাজার বন্ধ থাকা ছাড়াও পরিবহন সমস্যার কারণে তা বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া রয়েছে আম ভাঙার শ্রমিক সঙ্কট। সব মিলিয়ে চলতি বছর উপজেলার আম ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তবে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে ক্ষতি কিছুটা কম হবে বলে জানান তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মহাসীন আলী জানান, গত বছর কলারোয়া উপজেলা থেকে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি যুক্তরাজ্য ও কানাডায় আম রফতানি করাসহ দেশের স্বপ্ন, আগোরাসহ নাম করা সুপারশপে আম সরবরাহ হলেও করোনার কারণে চলতি বছর আম রফতানির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে তারা দেশের বড় বড় সুপারশপসহ বিভিন্ন বাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। যাতে আমচাষিরা ভালো দামে আমগুলো বিক্রি করতে পারে। এবিষয়ে আমরা ঢাকাসহ দেশের বড় সুপারসপ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছি। এ ছাড়া উপজেলার আম চাষিদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য কৃষি অফিস তাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ করছে। তিনি আরো বলেন, কলারোয়ার মাটি ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে এখানকার আম ১৫-২০ দিন আগেই পাকে এবং খেতেও খুব সুস্বাদু। সে কারণে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে বিদেশে রফতানির বাজারে জায়গা করে নিয়েছে কলারোয়ার হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপলি আম। তিনি বলেন, বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়লে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কলারোয়া উপজেলা থেকে বিষমুক্ত ১০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপে রফতানি ও ৩০০ মেট্রিক টন ঢাকার সুপারশপগুলোতে সরবরাহ করা সম্ভব হতো।