চীন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা কতটুকু বাড়বে?
চীন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা কতটুকু বাড়বে? - সংগৃহীত
চীন ও ভারত নতুন করে সঙ্ঘাতের পর তিব্বতের কাছে তাদের সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে। অবশ্য দুই পক্ষই জোর দিয়ে বলেছে যে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো এখনো উন্মুক্ত রয়েছে।
শক্তি বাড়ানো হয় ৫ মের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ওই দিন ভুটান, নেপাল ও চীন সীমান্তের রাজ্য সিকিমের নুকা লা নামের প্রত্যন্ত, পার্বত্য ক্রসিংয়ে টহল দেয়ার সময় ভারত ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ১১ সৈন্য (চারজন ভারতীয় ও সাতজন চীনা) আহত হয়।
স্থানীয় পর্যায়ে সংলাপ ও মতবিনিময়ের পর ৪,৫৭০ মিটার (১৫,০০০ ফুট) নাথু লা ক্রসিংয়ের অচলাবস্থার অবসান হয়। চীনের জাতীয়তাবাদ ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সামরিক অফিসারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, চীনা সৈন্যরা সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় মাত্রায় শক্তি বাড়ানোর সিদ্ধঅন্ত গ্রহণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন অবশ্যই দৃঢ়ভাবে তার জাতীয় ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।
মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় পরিচয় প্রকাশ না করা একটি সূত্র জানায়, কাশ্মির অঞ্চলের লাদাখে সৈন্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। খবরে বলা হয়, চীনা সৈন্যরা একটি নদীর কাছে তাঁবু স্থাপন করায় ও নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করায় গালওয়ান উপত্যকা নতুন করে ফ্লাশপয়েন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, উভয় দেশের সর্বশেষ কার্যক্রম আরো সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করতে পারে। চীনের দক্ষিণ-পূর্বের স্বাধীন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চেঙ্গলু ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের সভাপতি লং জিংচুন বলেন, চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনী আগের চেয়ে বেশি করে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে যাচ্ছে। এতে আরো বেশি সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, যত ঘন ঘন মোকাবেলা হবে, পরিস্থিতি তত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বিশেষ করে ভারতীয় বাহিনী বিরোধপূর্ণ অবকাঠামোতে নির্মাণকাজ সুসংহত রাখার বিষয়টি মাথায় রাখলে তাই হবে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও একই ধরনের অচলাবস্থা হবে বলে ধারণা করা যায়। এ জন্য বিপদ দূরে রাখতে উভয় পক্ষের উচ্চ ও স্থানীয় পর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ হওয়া দরকার।
সিঙ্গাপুরের ন্যানিয়াঙ টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভিজিটিং ফেলো রাজীব রঞ্জন বলেন, চীনা অভিযানকে মোকাবেলা করার জন্য ভারত ছিল বেশ প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন নই, কারণ দুই পক্ষর অফিসার ও নেতাদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে, যোগাযোগের সব চ্যানেল উন্মুক্ত রয়েছে। উভয় দেশ অগ্রাধিকার ও সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে সচেতন।
চীন-ভারত সীমান্তে সর্বশেষ সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয় গত এপ্রিলে সব আবহাওয়ায় চলাচল উপযোগী একটি অ্যাকসেস পয়েন্ট খুলে দেয়ার প্রেক্ষাপটে। গত এপ্রিলে ভারতের প্রত্যন্ত অরুনাচল প্রদেশে এটি উদ্বোধন করা হয। চীনও এই অঞ্চলের দাবি করে থাকে। ভারতের এই নতুন উদ্যোগের ফলে সৈন্য ও আর্টিলারি চলাচল অনেক দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হবে।
ভারত ও চীন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ স্থল সীমান্তের অধিকারী। তাদের মধ্যে কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষও হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৬২ সালের হিমালয় যুদ্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০১৭ সালে দুই পক্ষ দীর্ঘ সময় অচলাবস্থায় মুখোমুখি থাকে দোকলাম মালভূমিতে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট